জামিন ঠেকাতে সুস্থ ভিকটিমকে ‘আশঙ্কাজনক’ দেখানোর অভিযোগ

আড়াইহাজারে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

24
জামিন ঠেকাতে সুস্থ ভিকটিমকে ‘আশঙ্কাজনক’ দেখানোর অভিযোগ
জামিন ঠেকাতে সুস্থ ভিকটিমকে ‘আশঙ্কাজনক’ দেখানোর অভিযোগ

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে একটি মারামারির মামলার বিবাদী রফিকুল হইল্লাসহ অন্যদের জামিন ঠেকাতে পুলিশের এক উপ-পরিদর্শকের (এসআই) বিরুদ্ধে আদালতে মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিলের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। মামলার ভিকটিম দীর্ঘদিন আগেই হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও, তদন্তকারী কর্মকর্তা তাকে ‘গুরুতর অসুস্থ’ ও ‘হাসপাতালে চিকিৎসাধীন’ দেখিয়েছেন বলে দাবি করেছেন বিবাদীর অভিভাবকরা। এই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে এবং বিবাদীর পরিবার প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন ও এর প্রতিকার চেয়েছে।

মামলার বিবরণ ও পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ

মামলার বিবরণ ও প্রাপ্ত নথি থেকে জানা যায়, গত ২০ মার্চ দিবাগত রাতে আড়াইহাজারের উলুকান্দি পশ্চিমপাড়া এলাকায় মোঃ মোক্তার হোসেনের ছেলে এবং ঢাকা সিটি কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র শ্রাবন (১৮) হামলার শিকার হন। এ ঘটনায় শ্রাবনের বাবা মোঃ মোক্তার হোসেন বাদী হয়ে গত ২৩ মার্চ আড়াইহাজার থানায় একটি মামলা (এফআইআর নং-১৭, তারিখ- ২৩ মার্চ, ২০২৫; জিআর নং-৫৭/২৫) দায়ের করেন। এজাহারে রফিকুল হইল্লা, তানভীর, রমজান, সিয়ামসহ ৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ৮/১০ জনকে আসামি করা হয়। এজাহারে আরও বলা হয়, আহত শ্রাবনকে বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে অবশেষে ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, যেখানে তার মাথায় জটিল অপারেশন হয় এবং আইসিইউতে রাখা হয়।

এদিকে, মামলার বিবাদীরা জামিনের আবেদন করলে আদালত ভিকটিম শ্রাবনের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা জানতে চেয়ে আড়াইহাজার থানা পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দেন। আদালতের আদেশ (স্মারক নং-২৬৩৩ (৩), তাং- ২১/০৪/২০২৫খ্রিঃ) অনুযায়ী, আড়াইহাজার থানার সাব-ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) মোঃ শফিউল ইসলাম (বিপি-৮১০২০২৪৩৬৪) গত ২৩ এপ্রিল, ২০২৫ তারিখে একটি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন।

পুলিশের দাখিলকৃত প্রতিবেদন

এসআই মোঃ শফিউল ইসলামের দাখিলকৃত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, “অত্র মামলার বাদীর ছেলে জখমী শ্রাবনকে পপুলার হাসপাতাল, ধানমন্ডি, ঢাকায় ভর্তি করা হয়।

পপুলার হাসপাতালে শ্রাবনের মাথায় জটিল একটি অপারেশন করা হয়।

বর্তমানে জখমী শ্রাবনকে উক্ত পপুলার হাসপাতাল, ধানমন্ডি, ঢাকা’র ডাক্তারদের তত্ত্বাবধানে নিয়মিত চিকিৎসা করানো হইতেছে।

জখমী শ্রাবন মাখায় গুরুতর আঘাত জনিত কারনে তাহার শারীরিক অবস্থা এখনো আশংকামুক্ত নয় বলিয়া জানা যায়।”

প্রতিবেদনের সাথে জখমীর চিকিৎসা সংক্রান্ত ১৪ পাতা কাগজপত্র ও চিকিৎসাধীন অবস্থার ৫টি স্থিরচিত্র সংযুক্ত করা হয়।

অভিযোগের স্বপক্ষে বাস্তব প্রমাণ ও হাসপাতালের বক্তব্য

মামলার বিবাদীর অভিভাবকরা অভিযোগ করেছেন, বাদীর আইনজীবী আদালতে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ভিকটিমের অবস্থা গুরুতর বলে জানান।

একইসাথে, মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা।

তাদের জোরালো দাবি, ভিকটিম শ্রাবন গত ৩০ মার্চ, ২০২৫ তারিখেই ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে রিলিজ পেয়েছেন।

এ বিষয়ে পপুলার হাসপাতালের একজন সহকারী ব্যবস্থাপকের সাথে (নাম প্রকাশ না করার শর্তে) যোগাযোগ করা হলে তিনি নিশ্চিত করেন যে, শ্রাবন নামের উক্ত রোগী গত ৩০ মার্চ হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

তিনি বলেন, “রোগী সুস্থ হওয়ায় এবং তার অবস্থা ভালো হওয়ায় তাকে রিলিজ দেয়া হয়েছে।”

বিবাদীর অভিভাবকদের অভিযোগ, “পুলিশ কর্মকর্তা এসআই শফিউল ইসলাম কেন এই মিথ্যা প্রতিবেদন দিয়েছেন, তা আমাদের বোধগম্য নয়। আমাদের ভাই (বিবাদী রফিকুল হইল্লাসহ অন্যরা) যেন জামিন না পায়, সেজন্য সুস্থ ভিকটিমকে ‘আশঙ্কাজনক’ ও ‘চিকিৎসাধীন’ দেখানো হয়েছে। আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।”

অভিযুক্ত এসআই শফিউলের দায়সারা জবাব

এ বিষয়ে অভিযুক্ত সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) মোঃ শফিউল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি অফিসিয়াল মিটিংয়ে ব্যস্ত আছেন জানিয়ে পরে কল দিতে বলেন।

পরবর্তীতে তাকে কল করা হলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেন নি।

তিনি বলেন, আদালত প্রতিবেদন চেয়েছে, আমি দিয়েছি। প্রতিবেদনে ভুল থাকলে আপনারা আদালতকে জানান, আমাকে কেন প্রশ্ন করছেন?

আপনি যেহেতু মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা, তাই নিউজের স্বার্থে আপনার বক্তব্য আমাদের প্রয়োজন।

৩০ মার্চ রিলিজ হওয়া ভিকটিম ২১ এপ্রিলও হাসপাতালে ভর্তি ছিলো, কিভাবে এমন প্রতিবেদন দিলেন, জানতে চাইলে কল কেটে দেন তিনি। 

পরে তাকে আবারও কল করা হলে তিনি আর কল রিসিভ করেননি।

পুলিশের ভূমিকায় জনমনে প্রশ্ন ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি

এই ঘটনায় বিচারপ্রার্থী সাধারণ মানুষের মধ্যে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে তীব্র প্রশ্ন ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

একটি নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উদঘাটন এবং দোষীদের বিরুদ্ধে (যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয়) ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

তারা বলছেন, এ ধরনের ঘটনা বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা তৈরি করে।