সোনারগাঁয়ে পরাজীত প্রার্থীর সমর্থকদের বাড়িতে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ

19

নারায়ণগঞ্জ সমাচার:

নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীর এজেন্ট ও সমর্থকদের বাড়িতে হামলা করে বাড়ি-ঘর ভাংচুর ও লুটপাট করেছে বিজয়ী প্রার্থীর সমর্থকরা। গতকাল রবিবার (০৭ জানুয়ারি) রাতে বিভিন্ন এলাকা থেকে নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার খবর আসে। এতে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে পুরো সোনারগাঁয়ের জাতীয় পার্টির প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা। আক্রান্তদের সবাই লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী লিয়াকত হোসেন খোকার কর্মী-সমর্থক ও এজেন্ট বলে জানা গেছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বাড়িতেও হামলার ঘটনা ঘটেছে। সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রেহাই পাননি মেম্বার, তাদের স্ত্রী-সন্তান ও স্বজনরা।

গতকাল রবিবার (০৭ জানুয়ারী) বিকেলে নোয়াগাও ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড মেম্বার সাকিব হাসান জয়ের বাড়িতে হামলা করে সন্ত্রাসীরা। তিনি জাতীয় পার্টির প্রার্থী লিয়াকত হোসেন খোকার সমর্থক।

জানা গেছে, নোয়াগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি শহিদুল্লাহ সরকারের ভাতিজা ও বাচ্চু সরকারের সাব্বির ও শফিকুলের নেতৃত্বে নৌকার সমর্থক দুই শতাধিক সন্ত্রাসীরা এ মেম্বারের বাড়িতে হামলা চালায়।

সাকিব মেম্বার বলেন, আমি জাতীয় পার্টির সমর্থক হওয়ায় নির্বাচনের ভোট গ্রহনের পরপরই আমার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে নৌকার সমর্থকরা। এসময় আমাদের বাড়ির অন্তত ৩৫টি ঘর, ফ্রিজ, টিভি, খাট, শো-কেস, আলমিরাসহ সকল আসবাবপত্র ভাংচুর, আমার স্ত্রীর ৩৫ ভরি স্বর্ণ, আমার মা ও বোনের ১৫ ভরি স্বর্ণসহ গবাদিপশু লুট করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। এসময় আমার বোন সোনিয়া আক্তার, আমাদের বাড়ির মাসুদ রানা (২৫), নয়ন (৩০) বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়।

তিনি আরো বলেন, বিজয়ী প্রার্থীর সমর্থকরা আমার নামে বিভিন্ন জায়গায় হুমকি দিচ্ছে, আমাকে যেখানে পাবে সেখানেই নাকি হত্যা করবে। তাই এ ঘটনার পর থেকে আমি বাড়ির বাইরে আত্মগোপনে রয়েছি। আমি সোনারগাঁয়ে ঢুকতে পারছি না, থানায় গিয়ে একটি অভিযোগও করতে পারছি না।

মেম্বারের বোন সোনিয়া আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, নৌকা পাশ করার পর সব শেষ করে দিয়া লাইছে আমগো। বাচ্চুর বাড়ি ও ফকির বাড়ির পোলাপান সব শেষ করে দিয়া গেছে আমাগো। আমগো সবকিছু লুট কইরা নিছে গা, নৌকা পাশ কইরা। আমাদের পুরা বাড়িতে ভাংচুর করছে, আগুন লাগাইয়া দিছে। ৩০/৪০টি বাড়িতে লুট করছে।

মেম্বারের মা অভিযোগ করে বলেন, বিনা অপরাধে আমার ঘরে লুট করছে। আমি যে পানি খাবো, সেই গ্লাসটাও নাই। নৌকা পাশ করছে তাই, আমার ঘর দুয়ার সব লুট করে নিছে। আমাদের পরিবারের ৫০ ভরি স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেয়। এছাড়া ঘরের গুরুত্বপূর্ণ সব জিনিসপত্র নিয়ে গেছে এবং অবশিষ্ট সকল জিনিসপত্র ভাংচুর করে। হঠাৎ করে এক থেকে দেড়’শ সশস্ত্র মানুষের আক্রমণের ঘটনায় তাঁরা হতভম্ব হয়ে পড়েন। পুরো বাড়িতে বিভীষিকাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।

এদিকে, ভোটগ্রহন শেষ হওয়ার সাথে সাথে নোয়াগাঁও এর একটি ভোটকেন্দ্রে জাতীয় পার্টির পোলিং এজেন্ট আবু তাহেল (৩৩) ও আলম নামে দুজনের উপর হামলা চালায় নৌকার সমর্থকরা। তাদেরকে ব্যাপক মারধর করা হয়, দুজনই বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।

এছাড়া, নির্বাচনের আগের দিন রাতে আওয়ামীলীগ প্রার্থীর পক্ষে টাকা বিলি করার সময় বাধা দিলে সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকার সমর্থক জামপুর ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার শিল্পি বেগম ও সাবেক মহিলা মেম্বার তাহমিনা বেগমের উপর হামলা চালায় নৌকার প্রার্থীর সমর্থকরা। তারা বলেন, আওয়ামীলীগ নেতা অলি মিয়ার ছেলে শুভ, আমিনদ্দিন, রতনের ছেলে রনি, সোহেল, জিল্লু প্রধানের ছেলে জাকারিয়ার নেতৃত্বে আরো কয়েকজন সন্ত্রাসী তাদের উপর হামলা চালায়। এসময় তাদেরকে ব্যাপক মারধর করা হয়।

হামলার শিকার সাবেক মেম্বার তাহমিনা বলেন, নির্বাচনের আগের দিন রাতে আওয়ামীলীগের সমর্থকরা টাকা বিতরণ করার সময় বাধা দিলে তারা আমাদের ব্যাপক মারধর করে। এসময় আমিসহ বর্তমান মেম্বার শিল্পী আক্তারও গুরুতর আহত হয় বলে জানান তিনি।

জাতীয় পার্টির সমর্থকদের বাড়ি-ঘরে নৌকার সমর্থকদের হামলার বিষয়ে জানতে বিজয়ী প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাতের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি কল রিসিভ করেন নি।