ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে বাস ভাড়া ৫০ টাকা

8

নারায়ণগঞ্জে যাত্রী অধিকার ফোরামের হরতাল প্রত্যাহার
চাঁদাবাজি করলে ছাড় দিবো না: জেলা প্রশাসক
সোমবার থেকে ছাত্রদের হাফ ভাড়া কার্যকর হবে- রফিউর রাব্বি

নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা রুটে ডিজেল চালিত বাসের নতুন করে ভাড়া নিধারণ করেছে জেলা প্রশাসন। গতকাল শনিবার (১৬ নভেম্বর) বিকেলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হকের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসনের নেতৃবৃন্দ ও

পরিবহন মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকার জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত বাস ভাড়া ৫৫ টাকা থেকে ৫০ টাকা করা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী সোমবার থেকে এই ভাড়া কার্যকর করতে পরিবহন মালিক সমিতির সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

এই ঘোষণার পরে যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের ডাকা আগামীকালের হরতাল প্রত্যাহার করেছে সংগঠনটি। সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে হরতাল প্রত্যাহারের এই ঘোষণা দেয় সংগঠনটি।

সংবাদ সম্মেলনে যাত্রী অধিকার ফোরামের জেলা শাখার আহবায়ক রফিউর রাব্বি বলেন, বিগত স্বৈরাচারী সরকারের দোসর মাফিয়ারা অযৌক্তিভাবে নারায়ণগঞ্জে বাস ভাড়া বৃদ্ধি করেছিলো। তারা প্রতি টিকেট থেকে চাঁদা আদায় করতো। ৫ আগস্টের পরিবর্তনের সময় সেই মাফিয়ারা পালিয়েছে। তাহলে এখন কেন আগের সেই ভাড়া বহাল থাকবে। পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জে বাসগুলো চলছে সিএনজিতে, কিন্তু ভাড়া নেয়া হচ্ছে ডিজেলের মূল্যে নির্ধারিত দামে। যা কোনোভাবেই যৌক্তি নয়। তাই ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচলকারী বাসের ভাড়া কমানোর লক্ষ্যে আমরা তিনটি দাবি তুলে ধরেছিলাম। এই দাবি বাস্তবায়নে, আমরা গত ২৬ অক্টোবর থেকে টানা ২১ দিন ধরে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে আসছি। এরই ধারাবাহিকতায় আগামীকাল আমাদের ঘোষিত অর্ধবেলা হরতাল কর্মসূচী ছিলো। কিন্তু আজ জেলা প্রশাসক সাহেব সংবাদ সম্মেলন করে নন এসি বাসের ভাড়া ৫৫ টাকা থেকে ৫ টাকা কমিয়ে ৫০ টাকা এবং এসি বাসের ভাড়া ৭৫ টাকা থেকে ৫ টাকা কমিয়ে ৭০ টাকা করার ঘোষণা দিয়েছেন। যদিও আমাদের দাবি ছিলো ৪৫ ও ৬৫ টাকা, তারপরও ৫ টাকা কমানোর এ সিদ্ধান্তকে আমরা গ্রহন করছি, একইসাথে আগামীকালের হরতাল প্রত্যাহার করছি।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগামীতেও যে কোনো যৌক্তিক দাবি আদায়ে আমরা রাজপথে থাকবো।এসময় তিনি জেলা প্রশাসক, বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন সহ সকল ইসলামী দলকে ধন্যবাদ জানান। একইসাথে যাত্রী অধিকার ফোরামের সাথে যুক্ত গণসংহতি আন্দোলন, ন্যাপ, নাগরিক কমিটি, আমরা নারায়ণগঞ্জ বাসীসহ সকল সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সংগঠক, খেলাঘরের উপদেষ্টা রথিন চক্রবর্তী, আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী সংগঠনের সভাপতি হাজী নুর উদ্দিন, ন্যাপ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এড. আওলাদ হোসেন, সিপিবি জেলা শাখার সভাপতি হাফিজ উদ্দিন, বাসদ জেলা শাখার আবু নাইম খান বিপ্লব, নাগরিক কমিটির সভাপতি এবি সিদ্দিকী, সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল হক দিপু, সমমনার উপদেষ্টা দুলাল সাহা, যাত্রী অধিকার ফোরামের সদস্য সচিব ধীমান সাহা জুয়েল প্রমুখ।

এর আগে, সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক বলেন, পরিবহনের ভাড়া ৪৫ টাকা আমরা নির্ধারণ করতে পারছি না। পরিবহন মালিকদের থেকে দাবি ছিল আমরা এটা পোষাতে পারবো না। তবে, যাত্রীদের কথা চিন্তা করে শহরের বাস স্ট্যান্ড থেকে ঢাকায় জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত বাস ভাড়া ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হলো। আজকেই এই প্রজ্ঞাপন জারি করবো। পরিবহন মালিকদের বলবো, আগামী সোমবার থেকে এই ভাড়া কার্যকর করবেন। যেকোনো স্ট্যান্ড সেটি চাষাড়া, শিবু মার্কেট যে স্থান থেকেই হোক ভাড়া ৫০ টাকা হবে। বাস ভাড়া কামানোর দাবিতে যাত্রী অধিকার একটি কর্মসূচী ঘোষণা করেছেন। তাদের অনুরোধ করবো, ৫০ টাকা নির্ধারণ করলাম। এটি মেনে নিয়ে আগামীকাল অর্ধবেলা হরতালের যে ঘোষণা দিয়েছে সেটি তারা আজ প্রত্যাহার করবেন। আশাকরি, যাত্রী অধিকার ও বাস মালিকদের যে দাবি তা আজকের ঘোষণার মধ্য দিয়ে সমাপ্তি হবে।

তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা রুটে ২০২২ সালে ৫৫ টাকা করে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছিল। বিআরটিএ‘র সহায়তায় তখনকার জেলা প্রশাসক এই ভাড়া নির্ধারণ করেছিলেন। সেই সময়ে ডিজেলের মূল্য, যাত্রাপথ বিবেচনায় এই মূল্যা নির্ধারণ করা হয়েছিল। ২০২৪ সালে বিআরটিএ আবারও দূরত্ব বিবেচনায় একটি হিসেব বের করে। সেই অনুযায়ী ভাড়া ৫৩ টাকা হয়। বাসগুলো যাতায়াতের জন্য বিভিন্ন জায়গায় টোল দিতে হয়। এর জন্য পরিবহনগুলো থেকে ৫৫ টাকা করে ভাড়া নেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, যাত্রী অধিকার ফোরাম, রাজনৈতিক দল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের থেকে দাবি জানানো হয়, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে বাস ভাড়া ৪৫ টাকা করা হোক। এর জন্য প্রশাসন থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়। যাত্রী অধিকার ফোরাম, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে কমিটির কথা হয়। দফায় দফায় পরিবহন মালিকদের সাথেও কথা হয়। তারা পরিবহন ব্যবসায়ে লাভ-লসের হিসেব করেন। জেলা প্রশাসন থেকে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়, নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা পথে পরিবহনের ভাড়া কমানোর জন্য। পরিবহন মালিকদের নিয়ে মাইলেজ হিসেব করা হয়। এক সময় যখন ফ্লাইওভার ছিল না, তখন বাস শাপলা চত্বর হয়ে, বাইতুল মোকাররম হয়ে জিরো পয়েন্ট যেত। তবে ফ্লাইওভার হওয়ায় দূরত্বে পরিবর্তন হয়, যার জন্য আমরা পরিবহনে মাইলেজ পুনরায় নির্ধারণ করি।

পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক বলেন, যাত্রী অধিকার ফোরাম থেকে একটি দাবি বারবার বলা হয়েছে, যে পরিবহন সেক্টরের চাঁদাবাজি হচ্ছে। পরিবহন মালিকদের উদ্দেশ্যে আমি বলব, কোনভাবেই চাঁদাবাজদের প্রশ্রয় দিব না। পরিবহন সেক্টরে যদি কোনরকম চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটে, এর জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করব। কেউ যদি চাঁদাবাজির শিকার হন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানাবেন। আমাদের জেলাতে সেনাবাহিনী কাজ করছেন, তাদের ওই বিষয়টি কনছার্নে রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে নারায়ণগঞ্জ জেলা বাস-মিনিবাস কেন্দ্রীয় মালিক সমিতির সভাপতি রওশন আলী বলেন, সকাল বেলা নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা পথে বাস যখন যায়, তখন প্যাসেঞ্জার বাসের উঠে। আর অফিস ছুটি হইলে ঢাকা থেকে আসার পথে প্যাসেঞ্জার থাকে বাসে। বেশির ভাগই ক্ষেত্রে আমাদের বাসে অর্ধেক যাত্রী উঠে কিংবা প্রায় খালি বাস হয়। সেটা হিসেব করলে আমাদের গড়ে ৩৫ সিটে যাত্রী হয়। টোল দেওয়া হয় ২৬০ টাকা। যাত্রী প্রতি টোল আসে ৭ কি ৮ টাকা। আগের ডিসি স্যার এর জন্য ৫ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছেন, যা এখনও উঠে নাই। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন গিয়েছে। আমাদের সাথে বৈষম্য হচ্ছে। একটি সার্কুলারে উল্লেখ আছে, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর মুন্সিগঞ্জ, ঢাকায় যে গাড়ীগুলো চলবে এতে ২ টাকা ৩৩ পয়সা করে একটা রেট নির্ধারণ করা হয়। এখানে মেট্রো এলাকা লেখা নাই। আমাদের গাড়িগুলো মেট্রো এলাকায় চলাচল করে। আমরা বলেছিলাম, নারায়ণগঞ্জ থেকে যত কিলোমিটার যাই সেটা ২ টাকা ৩৩ পয়সা এবং ঢাকায় যত কিলোমিটার যাই এর জন্য ২ টাকা ৪১ পয়সা রেট করে দেওয়া হোক। কিন্তু আমি সেটা পাই নি। ডিসি স্যার বলেছেন, আমি তার কথা বাইরে যেতে পারবো না।আমি এটাও চাই না, হরতাল হোক। চাই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকুক।তিনি বলেন, আমাদের বাসের ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ, মোবিল, অন্যান্য খরচ বেড়েছে। শুধু ডিজেলের উপর ভিত্তি করে যে বাস ভাড়া নির্ধারণ হয় সেটা সঠিক নয়। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন হয়েছে। এই আন্দোলনের সুফল আমরাও পেতে চাই।

প্রসঙ্গত, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে বাস ভাড়া কমানোর দাবিতে নানা কর্মসূচী পালন করে আসছে যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের সদস্যরা। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে বাসভাড়া ৪৫ টাকা, ছাত্রদের জন্য অর্ধেক ভাড়া কার্যকর, বিআরটিসি এসি বাস ভাড়া ৬০ টাকা ও বেসরকারি বাস ভাড়া ৬৫ টাকা এবং নারায়ণগঞ্জ থেকে সকল রুটে বাসের ভাড়া যৌক্তিক হারে কমানোর দাবি জানানো হয় সংগঠন থেকে। সেই সাথে বাস ভাড়া না কমানো হলে আগামী ১৭ নভেম্বর অর্ধ বেলা হরতালের ডাক দিয়েছিলো তারা।