🗞️ বহুমুখী সংকটে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন

দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিল্প ও বাণিজ্যিক শহর নারায়ণগঞ্জ এখন এক গভীর সংকটের মুখোমুখি। সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার চরম অব্যবস্থাপনা, পানি সরবরাহে তীব্র সংকট, যানজট, সড়ক ও ড্রেন সংস্কার কাজের বিশৃঙ্খলা, প্রশাসনিক অচলাবস্থা এবং নাগরিক সেবায় গাফিলতির কারণে প্রায় ২০ লক্ষ নগরবাসীর জীবনযাত্রা হয়ে পড়েছে দুর্বিষহ।

♻️ বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় চরম অনিয়ম

নারায়ণগঞ্জের ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে প্রায় অর্ধশতাধিক স্থানে খোলা জায়গায় বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। সিদ্ধিরগঞ্জের এসও, তাতখানা, বাবুরাইল লেকসহ বেশ কিছু এলাকায় খোলা স্থানে ময়লা ফেলে খাল, লেক ও রেলওয়ের জায়গা দখল হয়ে গেছে। এতে পানি নিষ্কাশন ব্যাহত হচ্ছে এবং পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে।

এছাড়া, লিংক রোডসহ বিভিন্ন স্থানে খোলা পরিবেশে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে, যা নিয়ে কোনো মাথা ব্যাথা নেই সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তাদের। বরং তারা ব্যস্ত নিজেদের আখেড় গোছাতে অভিমত স্থানীয়দের।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের মতে, সঠিক ক্যাটাগরি অনুযায়ী বর্জ্য না ফেলার কারণে ডেঙ্গু ও অন্যান্য রোগের ঝুঁকি বেড়েছে।

২০১৭ সালে অনুমোদিত বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পটি আর্থিক অনিয়মের কারণে বাতিল হওয়ায় সংকট আরও বেড়েছে।

🚧 উন্নয়ন কাজের নামে জনদুর্ভোগ

জাইকার অর্থায়নে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে ড্রেন সংস্কার কাজ চলছে। কিন্তু নির্মাণ সামগ্রী রাস্তায় ফেলে রাখার কারণে বঙ্গবন্ধু সড়ক, নবাব সিরাজউদ্দৌলা সড়কসহ বিভিন্ন এলাকায় তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে। ফুটপাতগুলো মাটি ও ইটের স্তূপে দখল হয়ে পড়েছে।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এই অব্যবস্থাপনার কারণে তাদের বিক্রিবাট্টা মারাত্মকভাবে কমে গেছে।

এছাড়া, পুরোনো ড্রেনের নোংরা পানি উপচে রাস্তায় জমে থাকছে, যা পথচারী ও ব্যবসায়ীদের জন্য চরম দুর্ভোগের কারণ।

🚦 যানজট ও হকারদের দৌরাত্ম্য

শহরের যানজট পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। বৈধ স্ট্যান্ডের তুলনায় অবৈধ সিএনজি, অটোরিকশা ও লেগুনা স্ট্যান্ডের সংখ্যা বেশি।

অবৈধ এসব স্ট্যান্ডে এলোমেলোভাবে গাড়ি রাখায় প্রধান সড়কগুলো সংকুচিত হয়ে পড়ে। এদের কারণে, যানজট দিন দিন মারাত্মক আকার ধারণ করছে।

এর সাথে যুক্ত হয়েছে হকারদের দৌরাত্ম্য। ফুটপাত এমনকি সড়কও দখল করে বসেছে হকাররা, যার ফলে পথচারীদের চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। বিভিন্ন সময় এদের উচ্ছেদের চেষ্টা করা হলেও তা স্থায়ী হয়না।

এছাড়া, নবীগঞ্জ খেয়াঘাটসহ নাসিকের প্রতিটি এলাকায় টোলের নামে সিএনজি ও অটোরিকশা থেকে অবৈধভাবে চাঁদা আদায়ের অভিযোগও উঠেছে, যা চালকদের ক্ষুব্ধ করেছে।

নগরবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘমেয়াদী ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহনে তেমন কোনো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না নাসিক কর্মকর্তাদের।

বরং রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের অনেকের সাথে ভাগ-বাটোয়ারায় ব্যস্ত তারা। ফলে টেকসই কোনো উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে না বলেও দাবি তাদের।

🚱 পানির তীব্র সংকট

নারায়ণগঞ্জ সিটি এলাকায় দৈনিক পানি চাহিদা ১৮ কোটি লিটার, কিন্তু সরবরাহ মাত্র ১১ কোটি লিটার।

জামতলা, পাইকপাড়া, বন্দরসহ বহু এলাকায় পানি পাওয়া যায় না। আবার কোথাও পানি এলেও তা ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত।

ওয়াসার পাম্পগুলো প্রায়ই নষ্ট হয়ে থাকে, কিন্তু তদারকির অভাবে মেরামত হয় না সময়মতো। এতে ক্ষোভে ফুসছে নগরবাসী।

তারা বলছে, কর্মকর্তারা নারায়ণগঞ্জের আসেন শুধু নোট পকেটে নিতে, নগরবাসীর ভোগান্তি লাঘবে নেই তাদের কোনো পদক্ষেপ।

⚠️ সড়ক নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক শূন্যতা

সম্প্রতি নাসিকের একটি ময়লার গাড়ির ধাক্কায় এক গর্ভবতী নারী নিহত হন, যা সড়ক নিরাপত্তার অভাবকে সামনে এনেছে।

পাশাপাশি, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না থাকায় নগর প্রশাসনে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।

অস্থায়ী কর্মচারীদের চাকরি স্থায়ীকরণ, মশা নিধনে ব্যর্থতা এবং সেতু নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকা নাগরিক দুর্ভোগকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

🗣️ নাগরিকদের ক্ষোভ ও প্রতিবাদ

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নারায়ণগঞ্জের আয়োজনে সম্প্রতি এক মানববন্ধনে বক্তারা সিটি কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করেন।

তারা বলেন, “কর্মকর্তারা মাঠে না থেকে শুধু সুবিধা ভোগ করছেন, আর জনগণ দিনদিন বিপর্যস্ত হচ্ছে।”

এছাড়াও, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দরা প্রায়ই সিটি কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে অনিয়ম, কাজে গাফিলতিসহ নানা অভিযোগ করে থাকে।

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান অবস্থা রীতিমতো সংকটজনক। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়ন, পানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, উন্নয়ন কাজের যথাযথ তদারকি, যানজট নিরসন এবং প্রশাসনিক কার্যকারিতা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। অন্যথায়, ঐতিহাসিক এই শহরটি নিকট ভবিষ্যতে বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠবে।

এসকল বিষয়ে নাসিকের প্রশাসক এ এইচ এম কামরুজ্জামানের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেন নি।