ফতুল্লা থানা বিএনপি নেতা রিয়াদ চৌধুরী গ্রেফতার, দল থেকে বহিষ্কার

66
ফতুল্লা থানা বিএনপি নেতা রিয়াদ চৌধুরী গ্রেফতার ও বহিষ্কার: ঝুট নিয়ন্ত্রণ ও নানা অপকর্মের অভিযোগ, জনমনে স্বস্তি
ফতুল্লা থানা বিএনপি নেতা রিয়াদ চৌধুরী গ্রেফতার ও বহিষ্কার: ঝুট নিয়ন্ত্রণ ও নানা অপকর্মের অভিযোগ, জনমনে স্বস্তি

ঝুট সেক্টরে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা, গার্মেন্টস পুড়িয়ে দেয়ার হুমকিসহ বহু অপকর্মের গুরুতর অভিযোগ মাথায় নিয়ে অবশেষে গ্রেফতার হয়েছেন নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াদ চৌধুরী। বৃহস্পতিবার (১৫ মে) সকালে দল থেকে তার প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পদ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয় এবং এর পরপরই বিদেশে পালানোর চেষ্টাকালে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেফতার করে ইমিগ্রেশন পুলিশ। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র দাবি করেছে যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বিশেষ নির্দেশনায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বর্তমানে তাকে নারায়ণগঞ্জ কোর্টে আনার প্রক্রিয়া চলছে।

নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার রিয়াদ চৌধুরীকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, গ্রেফতারকৃত রিয়াদকে নারায়ণগঞ্জে আনার জন্য পুলিশের একটি দল ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। পুলিশ সুপার আরও দৃঢ়তার সাথে বলেন, যারা অপরাধ বা অপকর্ম করবে তাদের কাউকেই বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না, প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রিয়াদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগ এবং দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যকলাপে জড়িত থাকার কারণে কেন্দ্রীয় বিএনপি তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং দলের নীতি, আদর্শ ও সংহতি পরিপন্থী অনৈতিক কার্যকলাপের সুস্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরীকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

অপকর্মের ফিরিস্তি ও বিস্তার:

রিয়াদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে ফতুল্লার গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চল কেন্দ্রিক ঝুট সেক্টর এককভাবে নিয়ন্ত্রণ, সেখানে চাঁদাবাজি, ত্রাস সৃষ্টি এবং নানা ধরনের গুরুতর অপকর্মের অভিযোগ ছিল। স্থানীয় ব্যবসায়ী, শিল্পপতি এবং সাধারণ মানুষের অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি তার রাজনৈতিক পরিচয় ও প্রভাব খাটিয়ে ঝুট ব্যবসা নিজের কব্জায় নেওয়ার চেষ্টা করতেন। যারা তার অন্যায় দাবিপূরণ করতে চাইতেন না, তাদের বিভিন্নভাবে হয়রানি, হুমকি এমনকি শারীরিক ও আর্থিক ক্ষতির মুখেও ফেলতেন বলে একাধিক অভিযোগ রয়েছে।

বিশেষ করে, ফতুল্লার একজন গার্মেন্টস ব্যবসায়ীকে তার ফ্যাক্টরি পুড়িয়ে দেয়ার সরাসরি হুমকি দেয়ার অভিযোগ ওঠে রিয়াদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে। এই হুমকির একটি ফোনালাপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্ক সৃষ্টি হয়। এছাড়াও, গত বছরের সেপ্টেম্বরে ফতুল্লার একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ উঠেছিল। ওই ফ্যাক্টরির মালিক সে সময় প্রকাশ্যে রিয়াদ চৌধুরীকে অভিযুক্ত করে বলেছিলেন যে, ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণের জন্য রিয়াদ চৌধুরী একটি নির্দিষ্ট তালিকা দিয়েছিলেন এবং সেই তালিকা অনুযায়ী কাজ না করায় তিনি ও তার সহযোগীরা এই সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছেন। এসব ঘটনা স্থানীয় ব্যবসায়ী মহলে চরম ভীতি ও আতঙ্কের সৃষ্টি করেছিল। রিয়াদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে এলাকায় নিজস্ব আধিপত্য বিস্তার এবং শিল্প কারখানার ব্যবসা-বাণিজ্য জোরপূর্বক দখলের চেষ্টার অভিযোগও পুরোনো এবং স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমেও এই সংক্রান্ত প্রতিবেদন prominently প্রকাশিত হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত বছরের আগস্ট মাসেও একবার ফতুল্লা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কর্তৃক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে রিয়াদ চৌধুরীকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তবে সেই সময় থানা বিএনপির সভাপতি শহীদুল ইসলাম টিটুর স্বাক্ষর না থাকায় ওই বহিষ্কারাদেশ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে এবং তা কার্যকর হয়নি। ফলে রিয়াদ চৌধুরী এতদিন স্বপদে বহাল ছিলেন, যতক্ষণ না কেন্দ্রীয় বিএনপি থেকে তার বিরুদ্ধে চূড়ান্ত সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হলো।

গ্রেফতার ও বহিষ্কারে ফতুল্লাবাসীর স্বস্তি:

রিয়াদ চৌধুরীকে গ্রেফতার এবং দল থেকে তার চূড়ান্ত বহিষ্কারের খবরে ফতুল্লাবাসীর মাঝে তাৎক্ষণিক এবং ব্যাপক স্বস্তি ফিরে এসেছে। ফতুল্লার নিরীহ ব্যবসায়ী, শিল্পপতি এবং সাধারণ জনগণ তার গ্রেফতারের ঘটনাকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে তার বিভিন্ন অপকর্ম, অন্যায় হয়রানি, চাঁদাবাজি এবং সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে অতিষ্ঠ ও ক্ষতিগ্রস্ত একটি বৃহৎ অংশ তার গ্রেফতার ও দল থেকে অপসারণে উল্লাস প্রকাশ করেছে বলে স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে। ফতুল্লার স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, রিয়াদ চৌধুরীর গ্রেফতার এবং দল থেকে তার অপসারণ ফতুল্লার শিল্পাঞ্চলসহ সমগ্র এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে, ঝুট সেক্টরে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে এবং ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের নির্ভয়ে ও নিরাপদে জীবনযাপনে অত্যন্ত ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

যদিও রিয়াদ চৌধুরী পূর্বে তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ভিত্তিহীন বলে দাবি করে এসেছেন, তবে আজ তার গ্রেফতার এবং দলীয় হাইকমান্ড কর্তৃক স্থায়ী বহিষ্কারের ঘটনা এটাই প্রমাণ করে যে তার বিরুদ্ধে ওঠা গুরুতর অভিযোগগুলোকে দল এবং দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করেছে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ফতুল্লা বিএনপিতে সাংগঠনিকভাবে একটি বড় পরিবর্তন আসবে এবং স্থানীয় রাজনীতিতে এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন অভিজ্ঞ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। ফতুল্লার শিল্পাঞ্চল ও ঝুট সেক্টরে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে বলেও তারা আশা প্রকাশ করেছেন।