এবার না.গঞ্জে ক্লাস বর্জন ও শাটডাউনের কঠোর হুঁশিয়ারি মেরিন ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের

25
এবার না.গঞ্জে ক্লাস বর্জন ও শাটডাউনের কঠোর হুঁশিয়ারি মেরিন ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের

ডিপ্লোমা ইন মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং (মেরিন টেকনোলজি ও শিপ বিল্ডিং টেকনোলজি) কোর্সের শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি ও অধিকার আদায়ের আন্দোলন নতুন মাত্রা পেয়েছে। গতকাল বুধবার (১৫ মে) দেশের প্রায় সকল মেরিন ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ ক্যাম্পাসে একযোগে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন। মানববন্ধন থেকে তাদের দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ ও হতাশার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। শিক্ষার্থীরা তাদের তিন দফা দাবি আদায়ে ক্লাস বর্জন এবং পরবর্তীতে পূর্ণাঙ্গ শাটডাউন কর্মসূচির মতো কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

গতকাল সকাল ১১টায় অনুষ্ঠিত এই মানববন্ধনে বিভিন্ন ইনস্টিটিউটের মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।

তারা বলেন, তাদের দীর্ঘদিনের ন্যায্য দাবি, বিশেষ করে সিডিসি প্রদান সংক্রান্ত বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের লক্ষ্যে তারা আজ রবিবার সম্পূর্ণ ক্লাস বর্জন কর্মসূচি পালন করবেন। যদি এই তারিখের মধ্যে তাদের দাবির বিষয়ে কোনো ইতিবাচক সিদ্ধান্ত না আসে, তাহলে আগামীকাল সোমবার থেকে তারা পূর্ণাঙ্গ শাট-ডাউন কর্মসূচি পালন করতে বাধ্য হবেন। শিক্ষার্থীরা তাদের আবেদনে স্পষ্ট করেছেন যে, এই কর্মসূচির একমাত্র উদ্দেশ্য হলো ছাত্রসমাজের ন্যায্য অধিকার রক্ষায় সচেতনতা তৈরি করা, কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা নয় এবং তারা ইনস্টিটিউটের নিয়মশৃঙ্খলা বজায় রাখার ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধ।

তারা তাদের বক্তব্যে তিন দফা দাবি তুলে ধরেন এবং দাবি আদায়ে সরকারের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন। শিক্ষার্থীদের মূল দাবিগুলো হলো, ১. ডিপ্লোমা ইন মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং (মেরিন টেকনোলজি এবং শিপ বিল্ডিং টেকনোলজি) সম্পন্নকারী শিক্ষার্থীদের নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ মেরিন একাডেমিগুলোতে ৬ মাসের প্রি-সি ট্রেনিংয়ের সুযোগ দিতে হবে। এই প্রশিক্ষণ শেষে তাদের কন্টিনিউয়াস ডিসচার্জ সার্টিফিকেট (সিডিসি) প্রদান করে আন্তর্জাতিক রুটের জাহাজে ক্যাডেট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।

২. সরকারি মেশিন ও ইঞ্জিন সম্পর্কিত সকল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেক্টরে (যেমন: বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, সার কারখানা, চিনি কল ইত্যাদি) ডিপ্লোমা ইন মেরিন ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য নিয়োগের কোটা বা সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।

৩. বিএমইটি’র (জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো) অধীন সরকারি মেরিন ইনস্টিটিউটগুলোতে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং (মেরিন টেকনোলজি এবং শিপ বিল্ডিং টেকনোলজি) পাসকৃতদের জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর হিসেবে এবং টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার (টিটিসি) গুলোতে সরাসরি ইন্সট্রাক্টর হিসেবে নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।

মানববন্ধন কর্মসূচি শেষে শিক্ষার্থীরা তাদের পরবর্তী কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন। ‘মেরিন ও শীপ বিল্ডিং ডিপ্লোমা ছাত্র কল্যাণ পরিষদ’ এর ব্যানারে (ইনস্টিটিউট অফ মেরিন টেকনোলজি, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, চাঁদপুর, ফরিদপুর এবং বাগেরহাট) বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজী, নারায়ণগঞ্জের অধ্যক্ষ বরাবর একটি লিখিত আবেদনে এই কর্মসূচির কথা জানিয়েছে।

মানববন্ধনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি, নারায়ণগঞ্জের মেরিন ডিপ্লোমা ও শিপ বিল্ডিং ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নবগঠিত কমিটিও প্রকাশ করা হয়েছে। কমিটিতে পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় রয়েছেন আমিনুল ইসলাম ও শিহাব প্রধান। সমন্বয়কের দায়িত্বে আছেন মোঃ আশিক রানা ও সাদ ইবনে শরিফ। সম্মুখ নেতৃত্বে মোঃ আবু সালেহ সজীব ও তানভীর হোসেন তুহিন। গণসংযোগের দায়িত্বে মোঃ খালিদ বিন সালাম ও মোঃ মারুফ হোসেন এবং মাঠ পর্যায়ে নেতৃত্বে রয়েছেন সিয়াম আহম্মেদ সাগর, মোঃ নাজমুল হোসেন, মোঃ রুবেল হোসেন ও মোঃ সোলায়মান হোসেন সাদ।

মেরিন ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের এই আন্দোলন দেশের ক্রমবর্ধমান মেরিটাইম সেক্টরের জন্য দক্ষ জনশক্তি তৈরির ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করছে। শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী, তাদের প্রশিক্ষণ ও চাকরির সুযোগ নিশ্চিত করা না গেলে এই সম্ভাবনাময় খাতটি দক্ষ জনবলের অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো বিবেচনা করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন, এমনটাই প্রত্যাশা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের। অন্যথায়, ক্লাস বর্জন ও শাটডাউনের মতো কর্মসূচির কারণে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মধ্যেও হতাশা আরও বাড়তে পারে।