
ভোক্তাদের অধিকার সুরক্ষা এবং বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ব্যবসায়ীদের সচেতন করতে কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), নারায়ণগঞ্জ জেলা এক গুরুত্বপূর্ণ সেমিনারের আয়োজন করে। বৃহস্পতিবার (২৯ মে) সকালে নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সম্মেলন কক্ষে ‘ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ অবহিতকরণ ও বাজার পরিস্থিতি’ শীর্ষক এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
ক্যাব, নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি মাজাহার হোসেন মজুমদারের সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম সম্পাদক বিল্লাল হোসেন রবিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই সেমিনারে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হৃদয় রঞ্জন বনিক, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের কৃষি বিপণন কর্মকর্তা ইবনুল ইসলাম, ক্যাব জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী দলিল উদ্দিন দুলাল এবং নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান।
এছাড়াও, নিতাইগঞ্জ পাইকারী ও খুচরা ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি শংকর সাহা, নারায়ণগঞ্জ জেলা চাউল আড়ৎদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো: শফিকুল ইসলাম লিটনসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, বেকারী মালিক, ডিম ব্যবসায়ী, স্কুল শিক্ষক, সমাজকর্মী এবং ক্যাবের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যগণ উপস্থিত থেকে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।

সেমিনারের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ব্যবসায়ীদের মাঝে ‘ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯’ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়া এবং কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর কার্যক্রম তুলে ধরা।
ব্যবসায়ীরা তাদের বক্তব্যে বলেন, “আমরা এমন কোনো খাদ্য পণ্য তৈরি বা বিক্রি করবো না যা আমরা নিজেরা খেতে পারবো না।” তারা একমত হন যে, ব্যবসায়ীরা নিজেরা সচেতন হলে ভোক্তারা প্রতারণার শিকার হবেন না।
তাদের মতে, জরিমানা সবসময় চূড়ান্ত সমাধান নয়। তবে, যে সকল অসৎ ব্যবসায়ী বারবার সতর্ক করার পরও নিজেদের সংশোধন করবেন না, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত, প্রয়োজনে জেল এমনকি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার সুপারিশ করেন তারা। তারা আরও বলেন, আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে সকলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
মাঠ পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর দ্বারা হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলেও অভিযোগ তোলেন। উদাহরণস্বরূপ, কিছু কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান তাদের মিল থেকে এক দামে পণ্য সরবরাহ করলেও চালানে ভিন্ন (বেশি) দাম উল্লেখ করে, যা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য সমস্যা তৈরি করে। ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের ভোক্তা অধিকার আইন সম্পর্কে সচেতন করতে নিয়মিত মতবিনিময় সভা আয়োজনের ওপরও জোর দেন তারা।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও ক্যাবের প্রতিনিধিরা বলেন, প্রতিটি দোকানে পণ্যের মূল্য তালিকা স্পষ্টভাবে প্রদর্শন করতে হবে। এছাড়া, ক্রয়-বিক্রয়ের রশিদ সংরক্ষণ এবং ব্যবসার বৈধ কাগজপত্র হাতের কাছে রাখার জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
তারা আশ্বস্ত করেন যে, ভোক্তা অধিকারের টিম দেখলে দোকানপাট বন্ধ করে পালিয়ে যাওয়া কোনো সমাধান নয়। কোনো ত্রুটি বা সমস্যা থাকলে আলোচনার মাধ্যমে তা সংশোধন করা যেতে পারে। ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর শুধুমাত্র জরিমানা বা হয়রানি করার জন্য অভিযান পরিচালনা করে না, বরং ব্যবসায়ীদের সঠিক ও আইনসম্মত উপায়ে ব্যবসা পরিচালনার পথ দেখাতে এবং তাদের সচেতন করতে কাজ করে। যারা সততা ও নিয়ম-নীতি মেনে ব্যবসা করবেন, তাদের কোনো রকম ভয় পাওয়ার কারণ নেই। তবে, যারা নকল, ভেজাল, ওজনে কম দেওয়া, মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রি বা পচা-বাসি খাবার সরবরাহ করবেন, তাদের অবশ্যই আইন অনুযায়ী জেল-জরিমানার সম্মুখীন হতে হবে।
ক্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ভোক্তারা যেন ন্যায্য মূল্যে কোনো প্রকার প্রতারণা ছাড়াই পণ্য ক্রয় করতে পারেন, সেটাই তাদের মূল লক্ষ্য। এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ক্যাব তাদের সচেতনতামূলক প্রচারণা আরও জোরদার করবে।
সেমিনারে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা উঠে আসে। প্রস্তাবে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের মাঝে ভোক্তা অধিকার ও সংশ্লিষ্ট আইন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে ‘ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন’ সম্পর্কিত বিষয়াবলী অন্তর্ভুক্ত করা হোক।
সব মিলিয়ে, এই সেমিনার ভোক্তা ও ব্যবসায়ী উভয়ের জন্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দিয়েছে এবং বাজারে সুস্থ পরিবেশ বজায় রাখতে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।