
নারায়ণগঞ্জ সমাচার:
নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে অন্তর্ভুক্তি, বিভিন্ন থানা ও ইউনিট কমিটি গঠনের নামে অর্থ বাণিজ্য, আহবায়ক কমিটির সুপার ফাইভের মাঝে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব সৃষ্টিসহ নানা ইস্যুতে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব মনিরুল ইসলাম সজলের বিরুদ্ধে।
এমনকি আহবায়ক মমতাজ উদ্দিন মন্তুকে মাইনাস করে পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সভাপতি হতে উঠে-পড়ে লেগেছেন সজল। সুপার ফাইভের সাথে কোনো আলাপ-আলোচনা ছাড়াই একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারে মরিয়া হয়ে উঠেছে সজল। ফলে, সুপার ফাইভেও দেখা দিয়েছে দ্বন্দ্ব। রীতিমত সজলের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়ছে যুবদলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা।
এদিকে, তার এসব কর্মকান্ডের কারণে বিতর্কিত হচ্ছেন বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ। কেননা সজল সবসময় তাকে রাজনৈতিক গুরু-অভিভাবক বলে সম্বোধন করে থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সজলের বিতর্কিত কর্মকান্ডের দায় আজাদের উপর এসে পড়ে।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের আহবায়ক কমিটি গঠনের পর থেকেই অর্থ বাণিজ্যে মরিয়া হয়ে উঠে মনিরুল ইসলাম সজল। মূলত সজল এর আগে মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে যুগ্ম সম্পাদক পদে ছিলেন। কিন্তু ঐ পদে থেকে অর্থ বাণিজ্য করা খুবই দুরুহ হড়ে পড়ে বলে মূলদল ছেড়ে অনেকটা ডিমোশন হওয়ার মতো করে যুবদলে নাম লেখায়।
যুবদলের সুপার ফাইভে সদস্য সচিবের পদ বাগিয়ে আনেন নজরুল ইসলাম আজাদের মাধ্যমে। পদ পাওয়ার পর শুরুতে বিভিন্ন কর্মসূচী পালনের নামে অর্থ হাতাতে শুরু করে সজল। এমনকি গত রমজানে ইফতার আয়োজনে কেন্দ্রীয় নেতাদের দাওয়াত দেয়ার বাহানায় নেতাকর্মীদের কাছ থেকে কয়েকলাখ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। এতো টাকা চাঁদাবাজির পরও ইফতার সংকটের কারণে কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনেই যুবদল নেতাকর্মীরা তুমুল সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। ঘটনাস্থলে দাড়িয়েই যুবদল নেতাদের অনেকেই প্রশ্ন তুলেন লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদাবাজির পরও কেন রোজাদাররা ইফতার পেলো না। কেন ইফতার সংকট হলো, তাহলে এতো টাকা গেলো কোথায়?
পরবর্তীতে সদর থানা ছাত্রদলের এক নেতাকে থানা যুবদলের সভাপতি করার শর্তে ঐ নেতার কাছ থেকে ঈদ মার্কেটিং বাবদ ৫০ হাজার টাকা অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগও রয়েছে সজলের বিরুদ্ধে। পদ দেয়ার পরে আরও দেড় লাখ টাকা দেয়ারও চুক্তি হয় বলেও জানা গেছে। থানা ছাত্রদলের ঐ নেতার একাধিক ঘনিষ্ঠজনের দাবি, সজল ভাইকে ঈদ মার্কেটিং বাবদ ৫০ হাজার টাকা দিয়েছেন আমাদের নেতা।
এছাড়াও বিভিন্ন থানা ও ইউনিট কমিটি গঠনের নামে একইভাবে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে সজলের বিরুদ্ধে। এখানেই শেষ নয়, মহানগর যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে নগরীর বাইরের অর্থাৎ জেলার আওতাধীন ফতুল্লা ও বন্দর থানার নেতাকর্মীদের অন্তুর্ভূক্ত করার অভিযোগের তীর সজলের দিকে। বন্দর উপজেলার ঝাউতলা এলাকার পারভেজ খান, মুছাপুর ইউনিয়নের লাঙ্গলবন্দ এলাকার হারুনুর রশিদ লিটন ও কলাগাছিয়া ইউনিয়নের সায়েদ উল্লাহ মুকুল, ফতুল্লা ইউনিয়নের নুর ইলাহী সোহাগ সহ আরও অনেককেই অর্থ বাণিজ্যের বিনিময়ে কমিটিতে স্থান দিতে চাচ্ছেন সজল যা আহবায়ক কমিটির অন্যরা মেনে নিতে পারছেনা।
যুবদল নেতাকর্মীরা বলছেন, মহানগরের আওতাধীন ২৭টি ওয়ার্ডের ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে মূলত নিজের মনগড়া কমিটি সাজাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন সজল। তার এই একপেশী সিদ্ধান্তের কারনে কমিটিতে থাকা নেতাদের মধ্যে বিভক্তির দেখা দিয়েছে। বাকি ৪ নেতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজের মনগড়া কমিটি সাজাঁতে মরিয়া হয়ে উঠেছে সে।
এসব বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে মনিরুল ইসলাম সজল সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, যারা বর্ডার লাইনে থাকে অর্থ্যাৎ সিটি কর্পোরেশন ও ইউনিয়নের মাঝামাঝি তাদের তো মহানগর কমিটিতে রাখলে কোনো অসুবিধা নাই।
আজাদ সম্পর্কে তিনি বলেন, মানুষ কি নজরুল ইসলাম আজাদের নাম শুনলে খুব বড় মনে করে? নজরুল ইসলাম আজাদের কি এতো ক্ষমতা যে একবারে সব করে ফেলে? সে কি সুপার পাওয়ারের লোক? সে আমাদের দলের একজন সম্মাণিত নেতা। আমার সাথে উনার ১৪ বছরের উপরে সর্ম্পক। আমার রাজনীতি আমি করছি।