শূণ্যের কোঠায় কবির, জনপ্রিয়তার শীর্ষে কামরুল হাসান মুন্না

659

নারায়ণগঞ্জ সমাচার:

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৮ নং ওয়ার্ডে জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করছেন পর পর দুইবার নির্বাচিত সাবেক কাউন্সিলর কামরুল হাসান মুন্না। ২০০৩ সালে পৌরসভা আমলে কমিশনার ও ২০১১ সালে প্রথম সিটি কর্পোরেশনের সময়ে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন মুন্না। কিন্তু ২০১৬ সালের নির্বাচনে তারই অধীনস্থ এক বিশ্বাসঘাতকের মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক অপপ্রচারের কারণে জনগন তাকে ভুল বুঝে এবং সে নির্বাচনে তাকে পরাজয় বরণ করতে হয় বলে জানায় স্থানীয়রা।

তবে এলাকাবাসী তাদের সেই ভুল বুঝতে পেরে বলছে, এবার কোনো মিথ্যা অপপ্রচার ও মিথ্যা তথ্যে ভুল করবে না এলাকাবাসী। সময় এবার ভুল শুধরানোর। আর তাই ১৬ই জানুয়ারী বিপুল ভোটের ব্যবধানে কামরুল হাসান মুন্নাকে জয়ী করতে চায় এলাকাবাসী। আর তাই পুরো ১৮নং ওয়ার্ডে চলছে এক সাজ সাজ রব ও উৎসবমুখল পরিবেশ, এমনই দৃশ্য দেখা যায় সরেজমিনে।

গত সাত দিন এ ওয়ার্ডের বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে জানা যায়, গত নির্বাচনে পরাজয়ের পর গত ৫ বছরে কামরুল হাসান মুন্নার চেয়ে বেশী কষ্ট পেয়েছে এলাকাবাসীরাই। মুন্নার সময়কালীণ ব্যাপক উন্নয়নের কথা তুলে ধরে তারা বলছেন, মুন্না আমাদের ছেলে, মুন্নার পরাজয়ে যতোনা ক্ষতি মুন্নার হয়েছে, তার চেয়ে বেশী ক্ষতি হয়েছে আমাদের এলাকারই। কেননা মুন্নার সময়ে আমরা যে উন্নয়ন দেখেছি, গত পাঁচ বছরে তার ছিটেফোঁটাও দেখি নি আমরা। উল্টো দেখেছি বিশ্বাসঘাতক এক পরিবারের দুর্নীতি আর লুটপাটের চিত্র। ঐ পরিবারটি এক সময় মুন্নার খেয়ে, মুন্নার পড়ে মুন্নার সাথেই যদি বেঈমানী করতে পারে তাহলে আমরা তো ওয়ার্ডবাসী আমাদের সাথে বেঈমানী তো একেবারেই স্বাভাবিক। যা আমরা স্ব চোখে দেখেছিও বটে।

বর্তমান কাউন্সিলর কবির হোসাইন সম্পর্কে এলাকাবাসী বলেন, উন্নয়নের যে সকল প্রতিশ্রুতি দিয়ে কবির কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলো, তার কোনোটাই পূরণ করতে পারে নি সে। উল্টো আমাদের ওয়ার্ডকে নর্দমার ওয়ার্ড, সুইপার কলোনী বানাতে চাইছে সে। একইসাথে সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান, যুবসমাজের অবক্ষয় রোধেও চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে কবির। শুধু কি তাই, তার আপন ভাই নেওয়াজের বিরুদ্ধে অটোস্ট্যান্ড ও ট্রাকস্ট্যান্ড থেকে বিপুল পরিমাণ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগও করে স্থানীয়রা। সবকিছু মিলিয়ে বর্তমানে কবির হোসাইনের অবস্থান জনপ্রিয়তার তলানিতে এককথায় বলতে গেলে একেবারে শূণ্যের কোঠায়।

এলাকাবাসীর মতে, সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে করোনাকালীণ সময়ে যেখানে পাশ্ববর্তী ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ নাসিকের অধিকাংশ কাউন্সিলরই সরকারী সহযোগীতার পাশাপাশি নিজ্ব উদ্যোগে জনগনের সেবা, খাদ্য সহযোগীতায় নিরলসভাবে অর্থ ব্যায়, শ্রম ও সেবা দিয়ে গেছে। এ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নিজ অর্থায়নে করোনাকালে কারো কাউকে কোনো সহযোগীতা করে নি, শুধুমাত্র সরকারী যে ত্রাণ সামগ্রী এসেছে সেগুলোই বিতরণ করেছে। এখানেও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। তারা বলেন, যেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসহায় ও হতদরিদ্রদের জন্য খাদ্য উপহার সামগ্রী প্রেরণ করেছেন, সেখানে তিনি মুখ দেখে দেখে, তার নিজস্ব লোকদের মাঝেই বিতরণ করেছেন এ খাদ্য সহায়তা।

পক্ষান্তরে, সাবেক কাউন্সিলর কামরুল হাসান মুন্না’র বিষয়ে এলাকাবাসী বলেন, পরপর দুইবার কাউন্সিলর ছিলো কামরুল হাসান মুন্না। মুন্নার সময়ে আমরা কখনো সামাজিক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগিনি। সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা ছিলো, যুবসমাজের মধ্যে শৃঙ্খলাবোধ, মুরুব্বীদের মান্য করার, সম্মান করার রীতি ভালোভাবেই বিরাজমান ছিলো। একইসাথে উন্নয়নও হয়েছে দুর্বার গতিতে। স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসা, রাস্তা, কালভার্ট, সব উন্নয়নই হয়েছে তার সময়ে। এককথায় বলতে গেলে দৃশ্যমান সকল উন্নয়নই হয়েছে কামরুল হাসান মুন্নার সময়ে। মুন্নার আগে বা পরে এ ওয়ার্ডে তেমন কোনো উন্নয়নই হয়নি বলে দাবি তাদের।

এছাড়া, বিচার-শালিসের নামে টাকা খাওয়া, অটোস্ট্যান্ড থেকে চাঁদাবাজি, ট্রাকস্ট্যান্ড থেকে চাঁদাবাজি বা এ জাতীয় কোনো কেলেঙ্কারীতেও নাম নেই কামরুল হাসান মুন্নার। এলাকাবাসীর কাছে ক্লিন ইমেজের জনপ্রতিনিধি বলেই পরিচিত ছিলো এবং রয়েছে মুন্নার। যতটুকু পারেন পরিবারের সহযোগীতায় এলাকাবাসীর পাশে দাড়ানোর চেষ্টা করেন মুন্না জানায় স্থানীয়রা।

এদিকে, করোনাকালীণ সময়েও নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের আর্থিক সহযোগীতায় জনসেবায় নিয়োজিত ছিলেন মুন্না। স্থানীয় এমপি সেলিম ওসমানের তহবিল থেকে আসা খাদ্য সহযোগীতাও বন্টন করেছেন অসহায় এলাকাবাসীদের মাঝে। শুধু কি তাই, দিন নেই, রাত নেই সর্বদা এলাকাবাসীর সেবায় নিয়োজিত ছিলেন মুন্না। এমনকি নিজ বাড়িতে থাকলে পরিবারের সদস্যরা করোনাকালীন সময়ে বাড়ির বাইরে যেতে নাও দিতে পারে এই ভাবনা থেকে দিনের পর দিন বাড়ি ছেড়ে নিজ কার্যালয়ে ঘুমিয়েছেন সাবেক এ কাউন্সিলর। দিয়েছেন সেবা, ঘরে ঘরে পৌছে দিয়েছে খাদ্য সহযোগীতা। এমনকি সেবা দিতে গিয়ে ছেলেসহ নিজে আক্রান্ত হয়েছিলেন কোভিড-১৯ এ। এক পর্যায়ে ঢাকায় চিকিৎসার জন্য ভর্তি হন হাসপাতালে। আল্লাহর রহমত ও এলাকাবাসীর দোয়ায় সুস্থ হয়েই আবারো ঝাঁপিয়ে পড়েন আর্তমানবতার সেবায়।

আর এসব কারণেই এলাকাবাসী এবার নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছেন। যার ফলশ্রুতিতে কামরুল হাসান মুন্না ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাড়া পাচ্ছেন আশার চেয়েও বেশী। যাদের কাছেই যাচ্ছেন, পাচ্ছেন অফুরন্ত ভালোবাসা, স্নেহ, মায়া, মমতা। অনেকে আবার আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়ে বলছেন, গত নির্বাচনে আমরা যে ভুল করেছি ‘বাবা’ এবার আর সেই ভুল হবে না। তুমি আমাদের ছেলে, তোমাকেই আমরা নির্বাচিত করবো ইনশ্আাল্লাহ। সবমিলিয়ে বলা যায়, এলাকাবাসীর মনের সাথে মিশে আছে কামরুল হাসান মুন্নার নাম। আর তাই মুন্নার অবস্থান বর্তমানে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশী, এককথায় জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করছে মুন্না।

যদিও কাউন্সিলর কবির সমর্থকদের দাবি, আগের সময়ের চেয়ে বেশী উন্নয়ন হয়েছে কবির হোসাইনের সময়ে।