সম্মেলন নয় নেত্রীর সিদ্ধান্তেই নির্বাচিত হবে সভাপতি-সম্পাদক

23
সম্মেলন নয় নেত্রীর সিদ্ধান্তেই নির্বাচিত হবে সভাপতি-সম্পাদক

নারায়ণগঞ্জ সমাচার:

আগামী ২৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। তবে সম্মেলনের মাধ্যমে নয় বরং নেত্রীর সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতেই নির্বাচিত করা হবে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, এমনটাই দাবি দলটির নির্ভরযোগ্য সুত্রের। এ লক্ষ্যে গোপনে সভাপতি-সম্পাদক প্রার্থীদের তথ্যও যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

দীর্ঘ প্রায় পচিশ বছর পর হতে যাওয়া এ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে প্রস্তুতি সভাসহ নানামুখী তৎপরতা শুরু করেছে দলটির নেতাকর্মীরা। সম্মেলনকে ঘিরে সরগরম হয়ে উঠেছে জেলার রাজনৈতিক মাঠ। নতুন কমিটির নেতৃত্বে কারা আসছেন, তা নিয়ে নেতাকর্মীসহ জেলাবাসীর মধ্যে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। এখনও পর্যন্ত কোনো প্রার্থী নিজে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থিতার কথা প্রকাশ না করলেও জেলার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম।

দলীয় সূত্র জানায়, ১৯৯৭ সালের ২০ ডিসেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলনে নাজমা রহমানকে সভাপতি ও শামীম ওসমানকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে জেলা কমিটি গঠন করা হয়। পরবর্তীতে ২০০২ সালে এস এম আকরাম ও ২০১৪ সালে মফিজুল ইসলামকে আহবায়ক করা হয়।

২০১৪ সালে মফিজুল ইসলাম মারা গেলে ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর আবদুল হাইকে সভাপতি, মেয়র আইভীকে সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ভিপি বাদলকে সাধারণ সম্পাদক করে আংশিক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র। পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ২৫ নভেম্বর ৭৪ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়।

এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী এক নেতা সোজা সাপটাকে জানান, আমি নিজেও সভাপতি প্রার্থী। আমি ছাড়াও অন্য যারা সভাপতি-সম্পাদক প্রার্থী তাদের সকলের ডাটা গোপনে কালেকশন করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতা মির্জা আজম এমপি। কেন্দ্র তথা দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে এ ডাটা পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এ জেলায় একটি পরিচ্ছন্ন, স্বচ্ছ ও শক্তিশালী কমিটি উপহার দিতে চায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পুরাতনরাই থাকবেন নাকি নতুন কেউ নেতৃত্ব পাবেন তা জানেন শুধু নেত্রীই।

প্রবীণ রাজনীতিবীদদের মতে, সত্যি যদি শেখ হাসিনা নেতা নির্বাচন করে দেন তাহলে হয়তো নিজেদের মত প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকতে হতে পারে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের। তবে, দলের নেতাকর্মীরা দলীয় প্রধানের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাতেও ভুল করবেনা বলে মনে করেন তিনি।

আওয়ামী লীগের তৃলমূল নেতাকর্মীরা জানান, জেলার পদধারী নেতারা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে তাদের নিজ নিজ বলয় নিয়ে দলীয় রাজনীতি ও কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে। যদিও মাঝে মাঝে তারা একসাথেও কর্মসূচী পালন করে। তবে, তাদের এ বিভক্তি প্রভাব ফেলেছে ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ সব অঙ্গ সংগঠনের মধ্যে। বর্তমানে দুই গ্রুপের কোন্দলের কারণে প্রকৃত ত্যাগী নেতাকর্মীরা দলে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন।

জানা গেছে, দুই ভাগে বিভক্ত নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের এক অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন সংসদ সদস্য ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামীম ওসমান। অপরপক্ষে রয়েছেন, সিটি মেয়র ও বর্তমান সহ-সভাপতি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ দখলে রাখতে চায় উভয় পক্ষই।

এ পর্যন্ত জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি পদে অন্তত পাঁচজনের নাম শোনা গেছে। এরা হলেন, জেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান সভাপতি আবদুল হাই, সিনিয়র সহ-সভাপতি মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান, বর্তমান সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কাদির ও মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন।

বিপরীতে সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশীদের সংখ্যাও কম নয়। এ পদে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহিদ বাদল, সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এড. আনিসুর রহমান দিপু, সহ-সভাপতি আরজু ভুইয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক মীর সোহেল আলীর নাম শোনা যাচ্ছে।

সম্মেলনের বিষয়ে জেলা পরিষদ প্রশাসক আনোয়ার হোসেন বলেন, কে কি চায় তা মূল বিষয় নয়। মূল বিষয় হচ্ছে নেত্রী যাকে যোগ্য মনে করবে তাকেই নেতৃত্বভার তুলে দেয়া হবে।

জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আবদুল কাদির বলেন, নেত্রী যাদের যোগ্য মনে করবে তাদেরকেই সভাপতি-সম্পাদক নির্বাচিত করবেন।