
মোঃ সাইফুল ইসলাম সায়েম:
নগরবাসীকে বসবাসযোগ্য একটি প্রাকৃতিক ও দৃষ্টিনন্দন সিটি উপহার দিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডাঃ সেলিনা হায়াৎ আইভী। যেখানেই সুযোগ পাচ্ছেন নির্মাণ করছেন দৃষ্টিনন্দন পার্ক, লেক, মাঠ। মেয়র আইভীর হাত ধরে এক সময়ের ময়লার ভাগাড় হিসাবে পরিচিত জল্লারপাড় আমহাট্টা এলাকায় এখন গড়ে তোলা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন লেক-পার্ক। যা দেখতে এবং প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশের ছোয়া পেতে প্রতিদিন নগরীর বিভিন্ন পাড়া মহল্লা এবং নগরীর বাইরের শত শত মানুষ ছুটে আসে এখানে।
নগর পরিকল্পাবিদদের মতে, ব্যবসায়ীক ঐতিহ্যের কারণে দেশের অত্যন্ত ব্যস্ত নগরী এই নারায়ণগঞ্জ। প্রায় ১ কোটির মতো লোক বাস করা অপরিকল্পিত এই নগরীতে প্রতিনিয়তই তৈরি হচ্ছে ইট-পাথর দ্বারা নির্মিত উচু উচু দালান কোঠা। দিনভর কাজের চাপ ও নানা ক্লান্তি নিয়ে মানুষ দিশেহারা হয়ে শেষ বিকেলে নির্মল প্রাকৃতিক হাওয়ায় বসবে কিছুক্ষণ, কাটাবে কিছু সুন্দর মুহুর্ত, তার কোন সুযোগ ছিলো না ব্যস্ত ও যান্ত্রিক এই নগরীতে। ফলে দমবন্ধ হয়ে আসছিলো নগরবাসীর, আর তাই একটু প্রশান্তির বাতাসের খোজে রাজধানীর বিভিন্ন পার্কে ছুটতে হতো তাদের।
পরিবেশ বিপর্যয়সহ নানা কারণে দিন দিন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছিলো এই নগরী। প্রশস্ত রাস্তা, খেলার মাঠ, উদ্যান, প্রয়োজনীয় জলাশয় কিছুই ছিলো না এখানে। নদী-নালা সব দখল দূষণে হয়ে পড়েছিলো পরিত্যক্ত। এ অবস্থায় এখানে জীবন ধারণ করাই কঠিন হয়ে পড়েছিলো নগরবাসীর। তবে, নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর ইস্পাত কঠিন মনোবল ও পরিকল্পিত নগরায়নের কারণে এখন মানুষের বসার একটু জায়গা হয়েছে, সৃষ্টি হয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করার মতো পরিবেশ। জিমখানা-জল্লারপাড়-বাবুরাইল ও মন্ডলপাড়া এলাকায় বেশ কয়েকটি জলাধার-পার্ক-লেক নির্মাণ করে দেশবাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন মেয়র আইভী। অসম্ভবকে করেছেন সম্ভব, তাই তো এখন জনতার আইভী নামেই সকলের কাছে পরিচিত তিনি।
স্থানীয়রা বলেন, আগে এই স্থানটি আমাদের জন্য ছিলো একটা অভিশাপের মতো। সারা শহরের ময়লা এখানে ফেলা হতো। হাটা চলা করা, বাড়ির বের হওয়া তো দুরে থাক, ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে ঘরের ভেতরেও থাকতে কষ্ট হতো অনেক। আমাদের পূর্ব পুরুষ এমনকি আমাদের প্রজন্মের কেউ হয়তো চিন্তাও করে নাই এখানে কোনো পার্ক হতে পারে। তবে, মেয়র আইভী আপার হাত ধরে পাল্টে যায় এখানকার চিত্র। তার সুচিন্তিত ও পরিকল্পিত উন্নয়নের অংশ হিসাবে দৃষ্টিনন্দন এই পার্ক নির্মাণ করা হয় এখানে। ফলে পরিবর্তন হতে থাকে আমাদের জীবনমান। এতো সুন্দর একটি পার্ক নির্মাণ করায় আইভী আপাকে অশেষ ধন্যবাদ। পার্কটির সৌন্দর্য বর্ণনা করতে গিয়ে স্থানীয়রা বলেন, পার্কটি এতোটাই সুন্দর হয়েছে যে এখন পারলে সারাদিন-রাত পার্কেই বসে থাকি। অসাধারণ লাইটিংয়ের কারণে দিনের চেয়ে রাতের বেলায় পার্কটির সৌন্দর্য কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায় বলেও জানান তারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে জল্লারপাড় লেক-পার্ক ঘুরে দেখা যায়, শিশু থেকে শুরু করে তরুন-যুবক, বৃদ্ধসহ সকল বয়সী নানা শ্রেণী পেশার মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে পার্কের সামনে এবং ভিতরে। লেকটির চারদিকেই ওয়াকওয়ে ধরে হাটা-চলা করছে অনেকে, অনেকে আবার বসে একটু বিশ্রাম নিচ্ছে, আড্ডা-গল্পে মেতে উঠেছেন অনেকে। সামনের দিকের ছোট্ট মাঠে খেলা করছে বাচ্চারা, মাঠের সামনেই পুকুরের সিড়ির উপর বসে নানা বায়সী মানুষ। একটু ভেতরে দিকে লেকের পাড়ে বসে আছেন অনেকে, অনেকে আবার লেকের ঘাটে এবং ঘাটের পাশে বসার জায়গাগুলোতে আড্ডা দিচ্ছে। যতই বেলা গড়াচ্ছে ততই যেন বাড়ছে ভ্রমন পিপাসুদের সংখ্যা। সন্ধ্যা থেকে রাত ১০/১১টা পর্যন্ত পার্কটিতে বসে আড্ডা দেয় নগরবাসী।
লেক সংলগ্ন মাঠে ৪ বছর বয়সী সন্তানের সাথে খেলা করছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রাসেল মিয়া। পাশ থেকে বাবা-ছেলের এই খুনসুটি পরম তৃপ্তি নিয়ে উপভোগ করছিলেন মা শাহিদা বেগম। পঞ্চবটি থেকে শেখ রাসেল পার্কের লেকে ঘুরতে এসেছেন তাঁরা। কথা হলে তারা জানান, আসলে এ ধরনের পার্ক গোটা নারায়ণগঞ্জের কোথাও চোখে পড়ে না। আইভী আপাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, আমাদের তথা সাধারণ মানুষের কথা মাথায় রেখে পাশাপাশি এতো সুন্দর বেশ কয়েকটি পার্ক-লেক করায়।
মনির হোসেন নামে আরেকজন বলেন, ‘ এই শহরে খোলা আকাশের নীচে মুক্ত বাতাস নেয়ার কোনো জায়গা ছিলোনা। বর্তমানে আইভী আপা আমাদের জন্য এমন সুন্দর ব্যবস্থা করে দিয়েছেন, তাই মাঝে মাঝেই রিফ্রেশ হতে আসি এখানে।
নগরবাসীর মতে, নারায়ণগঞ্জ আজ আইভীর নেতৃত্বে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় এগিয়ে যাচ্ছে। অথচ একটি স্বার্থান্বেষী মহল এই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রুখে দেওয়ার জন্য সর্বদা অপচেষ্টা করে চলেছে। তবে যত বাধাই আসুক, আইভীর হাত ধরে নারায়ণগঞ্জ একদিন উন্নত নগরীর মর্যাদা লাভ করবে বলে মনে করেন তারা। সেদিন বেশী দুরে নয়, যেদিন সমগ্র দেশবাসীর কাছে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হবে এই নারায়ণগঞ্জ। আইভীর হাত ধরে নারায়ণগঞ্জ ধীরে ধীরে মাথা উচু করে দাড়াচ্ছে। তবে, উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হলে সরকারের সকল সেক্টর থেকে মেয়র আইভীকে সহযোগীতা করতে হবে বলে মনে করে নগরবাসী।