
নারায়ণগঞ্জ সমাচার:
বর্তমান সময়ে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী রাজনীতির সবচেয়ে উজ্জল নক্ষত্রের নাম ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, এমনটাই দাবী তৃণমূল নেতাকর্মীদের। তাদের মতে, দু:সময়ে দলের হাল ধরে, নিপীড়িত-নির্যাতিত নেতাকর্মীসহ জেলার সর্বস্তরের আওয়ামী নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে, সন্ত্রাসী ও গডফাদারদের জুলুম-নির্যাতন, অন্যায়-অত্যাচার-অবিচারের বিরুদ্ধে জোরালো ভুমিকা রেখে চলেছেন মেয়র আইভী। ইস্পাত-কঠিন মনোবলের কারণে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বলছে, আইভী হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগের ঐক্যের প্রতীক।
জানা গেছে, বাবার কাছে রাজনৈতিক হাতে খড়ি হলেও মূলত ১৯৯৩ সালে শহর আওয়ামীলীগের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক হিসাবে রাজনীতিতে নাম লেখান ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। পরবর্তীতে ২০০৩ সালে বিএনপি-জোট সরকারের আমলে নারায়ণগঞ্জসহ সারা দেশে দলের চরম দু:সময়ে, রাজনৈতিক প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নেন প্রয়াত পৌরপিতা আলী আহাম্মদ চুনকা কণ্যা। বিএনপি ক্ষমতায় থাকলেও পিতার সুনাম ও সুখ্যাতির উপর ভর করে বিএনপির প্রার্থী নুর ইসলাম সরদারকে পরাজীত করে বিজয় ছিনিয়ে এনে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সৃষ্টি করেন তিনি।
জয়ী হওয়ার পর তৃণমূল নেতাকর্মীদের নিয়ে বিএনপি জোট সরকারের অনিয়ম-দুর্ণীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামে ভুমিকা রাখেন তিনি। ২০০৪ সালের ২১ শে আগস্ট আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের উপর নিক্ষিপ্ত গ্রেনেড হামলার পর শহর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহাকে সাথে নিয়ে প্রতিবাদের ঝড় তুলেন আইভী।
একইসময়ে, জনপ্রতিনিধি হিসাবে জনগনের সেবা করার লক্ষ্যে সততা ও নিষ্ঠার সাথে পৌর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তার কর্মকান্ডে খুশী হতে থাকে শহরের বাসিন্দারা। পরবর্তীতে ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ, বন্দর ও সিদ্ধিরগঞ্জ পৌরসভা ভেঙ্গে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন গঠন করা হলে শুরু হয় সিটি নির্বাচনের তোড়জোড়।
এই নির্বাচনে আইভীকে বাদ দিয়ে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয় শামীম ওসমানকে। তবে, জনতার আইভী, জনতাকে সাথে নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করে লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করে। এই নির্বাচনের পরে আইভীকে ডেকে নিয়ে জড়িয়ে ধরে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, আমি জানতাম আমার আইভী জয়লাভ করবে, এমনটাই দাবী ততকালীণ সময়ে আইভীর সফরসঙ্গীদের অনেকের।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শেখ হাসিনার সানিধ্যে আশার পর থেকেই মূলত অন্যায়কে রুখে দেয়ার শক্তি ও সাহস পায় আইভী। নারায়ণগঞ্জের আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে, নারায়ণগঞ্জবাসীকে সাথে নিয়ে অনিয়ম-অত্যাচার, অবিচার-জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেন আইভী। নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগের ত্যাগী অথচ একটি পক্ষ দ্বারা নির্যাতিত-নিগৃহীত নেতাকর্মীরাও তখন আইভীর সাহস দেখে নিজেদের মাঝে শক্তির সঞ্চার করে, আইভীর হাত ধরে আওয়ামী রাজনীতিতে পুনরায় সক্রিয় হন।
বিশ্লেষকদের মতে, শামৗম ওসমান তথা ওসমান পরিবারের চাপে দিশেহারা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা মেয়র আইভীর দৃঢ় চেতনার প্রসংশা করে আইভীর সাথে মিলে রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে থাকেন। নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় পরিষদের সাবেক সদস্য এড.আনিসুর রহমান দিপু, বর্তমান যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, মহানগর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জি এম আরাফাত, কেন্দ্রীয় শ্রমিক নেতা কাউসার আহম্মেদ পলাশ এমনকি পাট ও বস্ত্র মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক)সহ আরও অনেকেই তখন থেকে মেয়র আইভীর সাথে সখ্যতা গড়ে তোলেন।
আইভীও তাদেরকে সাথে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে ২০১৩-১৪ সালে বিএনপি-জামায়াতে জ¦ালাও-পোড়াওয়ের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যান। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার বিচার চেয়ে শামীম ওসমান ও তার পরিবারের সদস্যদের শাস্তি দাবি করেন। আইভীর এ সাহসী ভুমিকার কারণে ধীরে ধীরে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগের প্রবীন রাজনীতিবীদসহ সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা তার প্রতি ঝুকতে থাকেন বলে জানায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
দলীয় সুত্রে জানা গেছে, পরবর্তীতে ২০১৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে আইভীকে সিনিয়র সহ-সভাপতি করে জেলা আওয়ামীলীগের ৩ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটির অনুমোদন দেয়া হয় কেন্দ্র থেকে। একইবছর সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নৌকার মনোনয়ন দেয়া হয় আইভীকে। মনোনয়ণ পাওয়ার পর তৃণমূল নেতাকর্মীরা আইভীকে ঘিরে আরও বেশী উজ্জীবিত হতে থাকে। সেই নির্বাচনেও বিএনপির প্রার্থী এড. সাখাওয়াতকে প্রায় এক লক্ষ ভোটের ব্যবধানে পরাজীত করে আইভী।
এরপর, ২০১৭ সালের শেষের দিকে ৭১ সদস্য বিশিষ্ট জেলা আওয়ামীলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেয়া হয় কেন্দ্র থেকে, যেখানে মেয়র আইভীর মতামতকেই বেশী প্রাধান্য দেয়া হয়েছিলো বলে দাবি সুত্রের। সুত্রানুযায়ী, দীর্ঘদিন দল থেকে বঞ্চিত নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করা হয় এ কমিটিতে। পরিচ্ছন্ন ও ত্যাগীদের রাখা হয় গুরুত্বপূর্ণ পদেও, আর এসবই হয়েছিলো মেয়র আইভীর কারণে। সবশেষ জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনেও আইভীর মতামতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
একসময় অবহেলীত তবে বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনকারী নেতাকর্মীদের মতে, ২০১৬ সালের পর থেকে এখনো পর্যন্ত এ জেলায় আওয়ামীলীগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসাবে নিজের অবস্থান শক্ত করেছেন আইভী। সর্বশেষ চলতি বছরের সিটি নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়ন নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে পরাজীত করে রেকর্ড গড়ে টানা ৩বার মেয়র হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন তিনি। বর্তমানে জেলা-মহানগর থেকে শুরু করে থানা-ইউনিয়নসহ সর্বস্তরের আইভীর জয়গান চলছে। এ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা আজ আইভীতে একতাবদ্ধ।
এদিকে, নিজের সাহসিকতার কারণে শুধু তৃণমূল নয়, দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দলীয় হাইকমান্ড ও কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে অত্যন্ত সুদৃঢ় অবস্থান গড়েছেন আইভী একথা জানা সকলেরই। সুত্র মতে, নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ রাখার সুচিন্তা ও বিচক্ষণতার কারণে মূলদল হোক বা অঙ্গসংগঠন, যে কোনো কমিটি দেয়ার ক্ষেত্রে আইভীর মতামতকেই অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়। এককথায় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরাও বর্তমানে তাকে ঘিরে একতাবদ্ধ।
যদিও এতোসব কাজ সহজ ছিলো না, তারপরও ইস্পাত কঠিন মনোবলের কারণে একে একে সকল মাইলফলক স্পর্শ করতে থাকে আইভী, জয় করতে থাকে আওয়ামীলীগ সহ পুরো জেলার সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের মন। সহজ না থাকার পিছনে বহু কারণ ছিলো, কেননা তৎকালীণ সময়ে একজন গডফাদারের সবচেয়ে বড় শত্রুতে পরিণত হয়েছিলো আইভী। সেই গডফাদার, পদে পদে আইভীকে হেয় করতে উঠে পড়ে লেগেছিলো। যদিও আইভীর কোনো ক্ষতি করতে পারেনি ঐ দুষ্টচক্র, উল্টো তাদের মিথ্যার সাম্রাজ্য আজ ভেঙ্গে চুরমার হওয়ার পথে, এমনটাই জানান আইভীর সমর্থকরা।