
নারায়ণগঞ্জ সমাচার:
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহম্মদ ইব্রাহীম বলেছেন, এই নারায়ণগঞ্জকে যদি আমরা সাজাতে পারি তাহলে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সিটি হতে পারে এই নারায়ণগঞ্জ। এখানকার জনপ্রতিনিধিদের যে অবদান, তাদের যে কর্মকান্ড মূলত তার উপরই নির্ভর করবে আমরা এটা পারবো কিনা। সম্প্রতি পরিসংখ্যান ব্যুরোর একটি পরিসংখ্যান প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে দেখা গেছে, দেশের সবচেয়ে ধনী জেলা হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ। এই জেলার মানুষের আয় অন্য জেলার তুলনায় বেশী। এই জেলার মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা বেশ ভালো।

স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, গ্রাম আদালত পরিচালনা, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, বাল্য বিবাহ নিরোধ, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমন ইত্যাদি বিষয়ে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
গতকাল শনিবার (১৭ জুন) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসক মো. মঞ্জুরুল হাফিজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. মোহাম্মদ শের আলী, ড. মলয় চৌধুরী।

সচিব বলেন, আয় বেশী হওয়ায় সুবিধার পাশাপাশি দুটো অসুবিধাও আছে। যার মধ্যে একটি হচ্ছে মাদকের ভয়াবহতা। কেননা মাদক বরাবরই একটি দামি জিনিস। কাজেই মাদক বিক্রির জন্য ধনী লোকদের সবসময় টার্গেট করা হয়ে থাকে। এখানকার মানুষের অর্থনেতিক অবস্থা ভালো হওয়ায় এখানের মানুষের শিক্ষার গতি খুব একটা ভালো নয়। কেননা আমরা চিন্তা করি ব্যবসা-বাণিজ্য করলেই হয়, একটা দোকান দিয়ে বসে পড়লেই হয়। তাই শিক্ষার গতি একটু কম। তবে, আমাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি শিক্ষার হার বাড়াতে হবে। আমাদের সন্তানদের উচ্চ শিক্ষা ও সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে আগামীতে দেশ ও জাতির হাল ধরার উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে।

এর আগে, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবের কাছে জেলার সকল উপজেলা চেয়ারম্যানদের পক্ষে সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এড. সামছুল ইসলাম ভুইয়া, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানদের পক্ষে রূপগঞ্জ উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ফেরদৌসী আক্তার নীলা, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের পক্ষে বক্তাবলী ইউপি চেয়ারম্যান এম শওকত আলী, মেম্বারদের পক্ষে দাউদপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের মেম্বার শপন, মহিলা মেম্বারদের পক্ষে ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা মেম্বার ফেরদৌস আরা অনা, ইউনিয়ন সচিবদের পক্ষে কুতুবপুর ইউনিয়নের সচিব ও গ্রাম পুলিশদের পক্ষে গ্রাম পুলিশ কর্মচারী ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল দফাদার বিভিন্ন দাবি দাওয়া তুলে ধরেন।

এসময় গ্রাম পুলিশ, ইউপি সচিব, মেম্বার ও ইউপি চেয়ারম্যানদের বেতন অত্যন্ত কম উল্লেখ করে তা বৃদ্ধির দাবি জানান তারা। পাশাপাশি সরকারী বিভিন্ন কাজ চেয়ারম্যানের পাশাপাশি যাতে করে মেম্বারদের মাধ্যমেও করানো হয় এমন দাবিও জানিয়ে তারা বলেন, বর্তমানে যে কাজ আসে প্রয়োজনে তার ৬০/৭০ ভাগ কাজ চেয়ারম্যান সাহেবের মাধ্যমে আর বাকী ৩০/৪০ ভাগ কাজ যদি সরাসরি মেম্বারদের মাধ্যমে করানো হয় তাহলে আমরা যারা তৃণমুলে থাকি, যারা ভোটারদের নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হই, তারা কিছুটা স্বস্বি পাবো। এছাড়াও, বিভিন্ন এলাকার হোল্ডিং ট্যাক্স যারা আটকে রাখে তারা প্রভাবশালী হওয়ায় অনেক সময় তাদের কাছ থেকে হোল্ডিং ট্যাক্স উদ্ধার করা সম্ভব হয়না। তাই কেউ যখন ব্যাংক একাউন্ট করতে যায় বা জমি-জমার রেজিস্ট্রি করতে যাবে তখন যেন হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ না থাকলে জমি রেজিস্ট্রি না করা হয় এমন দাবি জানান আড়াইহাজার উপজেলার গোপালদি ইউনিয়নের মেয়র সুন্দর আলী। এছাড়াও বিভিন্ন প্রস্তাবনা ও দাবি দাওয়া তুলে ধরেন তারা।

তাদের এসকল দাবির প্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহম্মদ ইব্রাহীম বলেন, আমি জানতাম আপনারা আজকে কিছু দাবি দাওয়া করবেন। এজন্য যে দুজন অতিরিক্ত সচিব সাহেব আপনাদের ডিপার্টমেন্টটা দেখেন তাদের আমি সাথে করে নিয়ে এসেছি। পাশাপাশি মেয়র সুন্দর আলীর দাবির প্রেক্ষিতে সচিব বলেন, আমি এখান থেকে গিয়েই হোল্ডিং ট্যাক্সের বিষয়টি আলাপ করবো। হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ না থাকলে যাতে জমি রেজিস্ট্রি না করা হয় সে বিষয়েও কাজ করবো। বেতন বৃদ্ধির বিষয়ে সচিব বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ সমগ্র পৃথিবীর অর্থনৈতিক অবস্থার পাশাপাশি বর্তমানে আমাদের অর্থনীতির যে অবস্থা এ সময়ে বেতন বৃদ্ধি না করার পক্ষে আমাদের অবস্থান। তবে, অর্থনীতির অবস্থা কিছুটা ভালো হলেই আমরা বেতন বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে কাজ করবো।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে আরও বক্তব্য রাখেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. এ এফ এম মশিউর রহমান, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সর্বিক) সাকিব আল রাব্বি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এইচ এম সালাউদ্দিন মনজু, এনডিসি মোহাম্মদ রবিন মিয়া, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) নাজমুল হাসান। অনুষ্ঠানে জেলার সকল উপজেলা, পৌরসভা, ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেয়র ও মেম্বারবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।