নির্ভার সেলিম-শামীম-বাবু ॥ এগিয়ে খোকা, চাপে গাজী

23

নারায়ণগঞ্জ সমাচার:

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার শেষে শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে একেবারেই নির্ভার জাতীয় পার্টির প্রার্থী সেলিম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামীলীগ মনোনীত শামীম ওসমান ও নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে নজরুল ইসলাম বাবু। নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে নৌকার প্রার্থী কায়সার হাসনাত মাঠে থাকলেও উন্নয়নের কারণে ঢের এগিয়ে আছে বর্তমান সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা। তবে, বিএনপি চেয়ারপার্সনের সাবেক উপদেষ্টা এড. তৈমুর আলম খন্দকার ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান ভুইয়ার চাপে কিছুটা বেকায়দায় রয়েছেন গোলাম দস্তগীর গাজী এমনটাই দাবি রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহলের।

জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন গতকাল রবিবার (১৭ ডিসেম্বর) জেলা রিটার্নিং অফিসারসহ বিভিন্ন উপজেলায় সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে লিখিত আবেদনের মাধ্যমে জাতীয় পার্টির একজন, জাকের পার্টির একজন ও স্বতন্ত্র তিনজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন। এরা হলেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে জাকের পার্টির মোর্শেদ হাসান, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে জাতীয় পার্টির ছালাহ উদ্দিন খোকা এবং নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে তিন স্বতন্ত্র প্রার্থী এরফান হোসেন দীপ, রুবিয়া সুলতানা ও মারুফুল ইসলাম ঝলক। পাঁচ প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করায় জেলার পাঁচটি আসনে নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ৩৪ জন প্রার্থী।

নারায়ণগঞ্জ-৫:

নারায়ণগঞ্জ শহর-বন্দর নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে সবচেয়ে বড় চমক দেন খোদ আওয়ামীলীগ সভানেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৮টি আসনে আওয়ামীলীগের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করলেও নারায়ণগঞ্জ-৫ ও কুষ্টিয়া-২ আসনে কোনো প্রার্থী দেয়নি আওয়ামীলীগ। এর মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে সেলিম ওসমানকে আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে গ্রীণ সিগন্যাল দেয়া হয়েছে বলে দাবি তার সমর্থকদের। বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় তার বিপরীতে তেমন কোনো শক্ত প্রার্থী ছিলো না। তারপরও গত ৩০ নভেম্বর আসনটিতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন আরও ৪জন। এদের মধ্যে নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নে কারো কোনো অবদান বা ব্যক্তিগত তেমন কোনো পরিচতি নেই। তারপরও জাকের পার্টির প্রার্থী নির্বাচনে কিছুটা লড়াই করতে পারবে এমনটা আশা করা হয়েছিলো। তবে, গতকাল জাকের পার্টির প্রার্থী মোর্শেদ হাসান জামালও মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। কাজেই আসনটিতে সেলিম ওসমানের জয় এখন শুধু সময়ের ব্যাপার।

নারায়ণগঞ্জ-৪:

ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকা নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বরাবরই দেশের সবচেয়ে আলোচিত ও প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধিদের তালিকায় অন্যতম। তার বিপরীতে আরও ১০ জন মনোনয়নপত্র কিনলেও যাচাই বাছাইয়ে পর্যাপ্ত তথ্য না থাকায় গত ৪ ডিসেম্বর বাতিল হয় ২ জনের প্রার্থীতা। বাকী আটজনের মধ্যে বড় দলের প্রার্থী ছিলো শুধু জাতীয় পার্টির প্রার্থী ছালাউদ্দিন খোকা মোল্লা। গতকাল প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ দিনে তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করায় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে বড় দলের প্রার্থী হিসেবে আছেন কেবল শামীম ওসমান। অবশিষ্ট ৭ প্রার্থীর কারো সম্পর্কে খুব একটা জানেনা ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জবাসী। কাজেই ৭ তারিখের নির্বাচনে শামীম ওসমানের জয়ের কোনো বিকল্প নেই বলে দাবি ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জবাসীর।

নারায়ণগঞ্জ-২:

নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনের মধ্যে বরাবরই শক্ত অবস্থানে থাকেন নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবু। আসনটিতে বাবুর বিপরীতে নেই শক্ত কোনো প্রার্থী। আসনটিতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী থাকলেও তাকেসহ যারা মনোনয়নপত্র কিনেছেন, তাদেরকে কখনোই নির্বাচনী এলাকার মানুষের পাশে দাড়াতে দেখা যায়নি বলেও দাবি আড়াইহাজারবাসীর। লড়াই করার মতো কোনো প্রার্থী না থাকায় টানা ৪র্থ বার এমপি হতে যাচ্ছেন নজরুল ইসলাম বাবু।

নারায়ণগঞ্জ-৩:

নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে তৃতীয়বারের মতো মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন লিয়াকত হোসেন খোকা। এর আগে লাঙ্গল নিয়ে পরপর দুইবার নির্বাচিত হওয়ায় অনেকটাই নির্ভার খোকা। তার কর্মী-সমর্থকরা মনে করছেন, তিনি এ আসনে অন্য প্রার্থীদের চেয়ে অনেক এগিয়ে। এখানে তার সঙ্গে লড়াই করতে মাঠে রয়েছেন নৌকার প্রার্থী কায়সার হাসনাত। জাতীয় পার্টির নেতাকর্মী ও স্থানীয়রা বলছেন, লিয়াকত হোসেন খোকা জাপার প্রার্থী হলেও বিগত ১০ বছরের উন্নয়ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে দলমত নির্বিশেষ সমগ্র সোনারগাঁবাসীর মনে স্থান করে নিয়েছেন তিনি। করোনাকালীণ সময়ে নিজের জীবন বাজি রেখে জনগনের কল্যাণে কাজ করেছেন তিনি। তারা জানান, সাধারণ মানুষ ও স্থানীয় নেতাকর্মীরা খোকার পক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন। এর অন্যতম কারণ, সোনারগাঁ উপজেলায় আমূল পরিবর্তন। গত ১০ বছরে সোনারগাঁয়ের চিত্র পাল্টে দিয়েছেন খোকা। একসময়ের জরাজীর্ণ একটি উপজেলাকে উন্নয়নের মাধ্যমে বদলে দিয়েছেন তিনি। বিপরীতে, কায়সার হাসনাতের পক্ষে আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীলা একাট্টা থাকার ঘোষনা দিলেও অতীত ইতিহাস বলছে, সোনারগাঁ আওয়ামীলীগ দু ভাগে বিভক্ত। বিগত কয়েকটি নির্বাচনে এখানে নৌকার প্রার্থীদের ভরাডুবির বিষয়টি জানা আছে সমগ্র দেশবাসীর। তাই কায়সার হাসনাতও যে একই পথে হাটছেন, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছু দিন।

নারায়ণগঞ্জ-১:

জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হিসেবে পরিচিত রূপগঞ্জ আসনে পরপর ৪ বার এমপি হওয়ার পথে সর্বোচ্চ বাধার সম্মুখীন হবেন বর্তমান সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী এমনটাই দাবি রূপগঞ্জবাসীর। এবারের নির্বাচনে তার বিপরীতে লড়াই করছেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের সাবেক উপদেষ্টা ও তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব দেশব্যাপী আলোচিত এড. তৈমুর আলম খন্দকার। এছাড়া, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান ভুইয়া উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ ছেড়েছেন এমপি হওয়ার লক্ষ্যে। কাজেই জেলায় সবচেয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে আছেন গাজী। অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এবার কঠিনতম প্রার্থীদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হচ্ছে তাকে। বিএনপি ও গাজী বিরোধী ভোটারদের প্রথম পছন্দ এড. তৈমুর আলম খন্দকার। তাছাড়া, দেশের অন্যতম বৃহৎ এক শিল্প প্রতিষ্ঠানের সমর্থনে স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন শাহজাহান ভুইয়া।