
নারায়ণগঞ্জ সমাচার:
নির্বাচনের দিনক্ষণ যত ঘনিয়ে আসছে নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনে জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী, সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকার পক্ষে জনমত ও গণজোয়ার সৃষ্টি হচ্ছে। সাধারণ জনগন, ভোটার, জাতীয় পার্টির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে প্রচারণার শেষ দিনে গণসংযোগ ও পথসভায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। তীব্র শীত উপেক্ষা করে, ঘন কুয়াশা ভেদ করে সকাল থেকে ঘুরছেন ভোটারদের বাড়ি বাড়ি। দিচ্ছেন বিগত দিনের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি। জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে করছেন পথসভা।
বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) দিনভর উপজেলার জামপুর ও কাঁচপুর ইউনিয়নের পাড়া-মহল্লায় গণসংযোগ-পথসভা করেন লিয়াকত হোসেন খোকা। সরেজমিনে দেখা যায়, এ প্রার্থীর প্রতিটি পথসভা রূপ নিচ্ছে জনসভায়। খোকাকে আবারও জয়ী করতে সোনারগাঁবাসী সংঘবদ্ধভাবে কাজ করছে। তার স্ত্রী, সোনারগাঁ উপজেলা নারী সংস্থার সভাপতি ডালিয়া লিয়াকতের নেতৃত্বে নারী সমর্থকরাও গ্রামগঞ্জে ভোটারদের কাছে ভোট চাইছেন।
লাঙ্গলের প্রার্থীর পক্ষে জনমত-গণজোয়ারের কারণ জানতে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লিয়াকত হোসেন খোকা একজন মানবিক নেতা। বাবা মরলে যখন ছেলে লাশ ধরতো না, সন্তান মরলে বাবা লাশ ধরতো না, সেই সময়ে অর্থ্যাৎ করোনাকালীণ সময়ে নিজের পরিবার-পরিজন ফেলে এলাকার মানুষের জন্য কাজ করেছেন তিনি। সরকারী ত্রাণ সহযোগীতার পাশাপাশি নিজের স্ত্রীর একটি ফ্ল্যাট বিক্রি করে সোনারগাঁবাসীর পাশে দাড়িয়েছিলেন তিনি। কঠিন ঐ সময়ে ক্ষুধার্তদের ঘরে খাদ্য সামগ্রীর উপহার পৌছে দেয়া, অসুস্থদের জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, এমনকি মৃতদের সৎকারও করেছেন এ সংসদ সদস্য। এছাড়া, গত দশ বছরে যে কোনো বিপদে-আপদে, সর্বদা সোনারগাবাসীর পাশে ছিলেন খোকা। একইসাথে, জরাজীর্ণ একটি উপজেলাকে মেরামতের লক্ষ্যে অসংখ্য রাস্তা-ঘাট, ব্রীজ-কালভার্ট নির্মাণসহ এলাকায় দৃশ্যমান ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। তার গৃহীত জনকল্যাণমুখী বেশকিছু প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য পুনরায় তার এমপি হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন ভোটাররা। সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন তারা।
বিপরীতে, নৌকার প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাতের বিষয়ে স্থানীয়রা জানান, ২০০৮ সালে এমপি হওয়ার পর তার এবং তার স্ত্রীর নেতৃত্বে পুরো সোনারগায়ে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়েছিলো। সেই সময়ে তিনি যতটা না এমপি ছিলেন, তার চেয়ে তার স্ত্রী বেশী এমপির ক্ষমতা ও প্রভাব খাটিয়েছেন। ক্ষমতার লোভে সন্ত্রাসীদের পাশে রেখে বিভিন্ন অপকর্মকারীদের শেল্টার দিয়েছেন তার স্ত্রী ও তিনি। সেই সময়ে খুনের ঘটনাও ঘটেছিলো উল্লেখযোগ্যভাবে, যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিতও হয়েছিলো। পরবর্তীতে, লিয়াকত হোসেন খোকা এসে হাল ধরেন সোনারগাঁয়ে। সন্ত্রাসের জনপদ থেকে শান্তির জনপদে পরিণত হয় সোনারগাঁ। তাই আমরা পুনরায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড দেখতে চাই না, আমরা শান্তি চাই, শান্তি চাই। সোনারগাঁয়ে শান্তির প্রতীক লিয়াকত হোসেন খোকা। খোকাকেই আবারও এমপি নির্বাচিত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তারা।
গণসংযোগকালে ও পথসভায় ভোটারদের উদ্দেশ্যে লিয়াকত হোসেন খোকা বলেন, স্থানীয় জনসাধারণ ও ভোটারদের সমর্থন-ভালোবাসার মাধ্যমে একজন নেতা-জনপ্রতিনিধি বেঁচে থাকে। এ বিষয়টি মাথায় রেখে রাজনীতি করে আসছি। নিজের সবটুকু সামর্থ্য দিয়ে আপনাদের (জনগণের) জন্য কাজ করেছি। সবসময় আপনাদের পাশে থেকেছি। আমি দশ বছরে সংসদ সদস্যর দায়িত্বে থাকাকালীন সোনারগাঁ ছিলো শান্তি শৃঙ্খলার জনপদ। এই দশ বছরে সোনারগাঁকে জমি দখল, মারামারি, হত্যা, ইভটিজিং ও মাদক মুক্ত রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি। বিগত দশ বছরে আমি কোন সম্পদ গড়ি নি, আমার স্ত্রীর ফ্ল্যাট বিক্রি করে সোনারগাঁয়ে করোনাকালীন সময়ে অসহায় মানুষের মাঝে উপহার হিসেবে খাদ্য ও স্বাস্থ্য সচেতন সামগ্রী বিতরণ করেছি। আজকে নিজের পৈতৃক মার্কেট বিক্রি করে নির্বাচন করছি, আমার কাছে অর্থ সম্পদ নেই, আছে আপনাদের (সোনারগাঁবাসীর) দোয়া ও ভালোবাসা। আপনারা (সোনারগাঁবাসী) যে স্নেহ ভালোবাসা আমাকে দিয়েছেন তাতে আমি তৃপ্ত।
তিনি আরও বলেন, জয় পরাজয় আল্লাহ পাক ভালো জানেন, তবে আমার অনুরোধ সামান্য কিছু টাকার জন্য নিজের বিবেক বিক্রি করবেন না। ভোট আপনার পবিত্র আমানত, এটা একজন ভালো মানুষকে দিবেন। অন্য কেউ ক্ষমতায় আসলে সোনারগাঁয়ের প্রতিটি ইউনিয়নে একের অধিক এমপি ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তি তৈরি হবে। এতে আপনাদের উপর জুলুম অত্যাচার ও রাহাজানি বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু গত ১০ বছরে আমি তেমন কোনো উশৃংখল আচরণের নেতা কর্মী তৈরি করিনি। তাই বিবেককে ব্যবহার করে সিদ্ধান্ত আপনাদেরই নিতে হবে এবং আপনাদের সিদ্ধান্তেই আগামী পাঁচ বছরে আপনাদের সেবক নির্বাচিত হবে।
এ সংসদ সদস্য বলেন, নির্বাচিত হলে অতীতের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বেকারত্ব দূর করার লক্ষ্যে শিক্ষা-কর্মসংস্থান খাতকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়নে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাঁধে-কাঁধ মিলিয়ে চলমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা হবে। সর্বোপরি জনকল্যাণে সারা জীবন কাজ করে যেতে চান এই নেতা।
তিনি আরও বলেন, আমি মিথ্যা আশ্বাস দিবোনা, এই সোনারগাঁয়ের মা-বোনদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বৈধ গ্যাসের জন্য আবেদন করেছি। প্রয়োজনে আমি আপনাদের সকলকে নিয়ে আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে যাবো। সোনারগাঁয়ে আমার হাত ধরে ৭৫টি স্কুলের কাজ সম্পন্ন হয়েছে বাকি ৩৮টি চলমান রয়েছে। এছাড়া ৫৭টি বড় এবং ছোট ব্রিজ সম্পন্ন হয়েছে। তাছাড়া রাস্তা, মাদ্রাসা, মসজিদ তো রয়েছেই। আমার এই দশ বছরের দায়িত্ব কালীন সময়ের আগেও সংসদ সদস্য ছিলেন তারা কি করেছে তা আপনারাই ভালো জানেন।
অপরদিকে, লিয়াকত হোসেন খোকার সহধর্মিনী ডালিয়া লিয়াকত একই দিনে শম্ভুপুরার চর কিশোরগঞ্জ এলাকায় বিভিন্ন স্থানে জাপা নেতা ও জাতীয় মহিলা পার্টির নেতৃবৃন্দদের নিয়ে লাঙ্গলের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা করেন।