
নারায়ণগঞ্জ সমাচার:
লিয়াকত হোসেন খোকা নাকি কায়সার হাসনাত কে হচ্ছেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁয়) আসনের সংসদ সদস্য তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে আরও ১ দিন। ভোট গ্রহনের এক দিন বাকী থাকলেও, প্রার্থীর অযোগ্যতা, প্রতিপক্ষের জনপ্রিয়তাসহ নানা কারণে আসনটিতে আবারো নৌকার নিশ্চিত ভরাডুবি দেখছে সোনারগাঁবাসী। তারা বলছে, নৌকার ভোট ব্যাংক থাকলেও ব্যক্তি ইমেজের কারণে জনপ্রিয়তার তলানীতে আছেন কায়সার হাসনাত।
জানা গেছে, এমপি থাকাকালীণ সময়ের নানা নেতিবাচক কর্মকান্ড, গত দশ বছরে আওয়ামী নেতাকর্মীদের সঙ্গে দুরত্ব বৃদ্ধি ও আলাদা বলয় সৃষ্টির চেষ্টাসহ নানা কারণে জনসাধারণের পাশাপাশি খোদ আওয়ামীলীগের বড় একটি অংশও তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। উপজেলা আওয়ামীলীগ ও তৃণমূল কর্মীদের অনেকে নৌকা প্রতীকের কারণে তার পাশে থাকলেও প্রকৃতপক্ষে লাঙ্গলের পক্ষেই ভুমিকা রাখছে বলে জানা গেছে। ফলে সার্বিক হিসাব কষে, নৌকার প্রার্থী একেবারে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন।
বিপরীতে, গেল দশ বছরে দল-মত নির্বিশেষে সকলকে সাথে নিয়ে সোনারগাঁকে শান্তির জনপদ হিসেবে গড়ে তোলা, ব্যাপক উন্নয়ণ কর্মকান্ড করা, জনগনের পাশে থেকে তাদের হৃদয়ে জায়গা করে নেয়া এবং সন্ত্রাসী ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থানের কারণে সংসদ সদস্য ও জাপার প্রার্থী লিয়াকত হোসেন খোকা রয়েছেন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। নির্বাচন উপলক্ষ্যে যেখানেই ভোট চাইতে গেছেন, সেখানেই ভোটার ও স্থানীয়দের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন তিনি। ফলে এবারের নির্বাচনেও খোকার জয় নিশ্চিত বলে দাবি সোনারগাঁবাসীর।
নির্বাচন সুত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত ৫ম ও ১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবুল হাসনাতকে (কায়সার হাসনাতের পিতা) ২ বার পরাজীত করে বিজয়ী হন বিএনপির প্রার্থী অধ্যাপক রেজাউল করিম। ২০০১ সালের ৮ম নির্বাচনেও জয়ী হন রেজাউল করিম। ২০০৮ এর নির্বাচনে কায়সার হাসনাত এবং ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন লিয়াকত হোসেন খোকা।
স্থানীয়রা জানান, ২০০৮ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য হওয়ার পর কাঙ্খিত উন্নয়নে ব্যর্থতার পরিচয় দেন আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত। শুধু ব্যর্থতাই নয়, সোনারগাঁকে রীতিমতো সন্ত্রাস ও আতঙ্কের জনপদে পরিণত করেন কায়সার এবং তার স্ত্রী। এ দুজনের আশ্রয় প্রশ্রয়ে তৎকালীণ সময়ে সোনারগাঁয়ে ব্যাপক চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালিত হয়। নদী থেকে বালু উত্তোলন নিয়ে খুনের ঘটনাও ঘটেছিলো সে সময়।
লাঙ্গলের বিষয়ে ভোটারদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানায়, লিয়াকত হোসেন খোকা একজন মানবিক নেতা। বাবা মরলে যখন ছেলে লাশ ধরতো না, সন্তান মরলে বাবা লাশ ধরতো না, সেই সময়ে অর্থ্যাৎ করোনাকালীণ সময়ে নিজের পরিবার-পরিজন ফেলে এলাকার মানুষের জন্য কাজ করেছেন তিনি। সরকারী ত্রাণ সহযোগীতার পাশাপাশি নিজের স্ত্রীর একটি ফ্ল্যাট বিক্রি করে সোনারগাঁবাসীর পাশে দাড়িয়েছিলেন তিনি। কঠিন ঐ সময়ে ক্ষুধার্তদের ঘরে খাদ্য সামগ্রীর উপহার পৌছে দেয়া, অসুস্থদের জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, এমনকি মৃতদের সৎকারও করেছেন এ সংসদ সদস্য। এছাড়া, গত দশ বছরে যে কোনো বিপদে-আপদে, সর্বদা সোনারগাবাসীর পাশে ছিলেন খোকা। একইসাথে, জরাজীর্ণ একটি উপজেলাকে মেরামতের লক্ষ্যে অসংখ্য রাস্তা-ঘাট, ব্রীজ-কালভার্ট নির্মাণসহ এলাকায় দৃশ্যমান ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। তার গৃহীত জনকল্যাণমুখী বেশকিছু প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য পুনরায় তার এমপি হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন ভোটাররা। সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন তারা।
তারা আরও বলেন, সোনারগাঁয়ের আজকে যে উন্নয়ন তার সবই হয়েছে খোকার হাত ধরে। ২০০৮ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সময়ে তথা কায়সার হাসনাতের এমপি থাকাকালীণ সময়ে আমরা বঞ্চিত হয়েছি। আওয়ামীলীগ সরকার গঠনের পর প্রথম ৫ বছরের রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে শেখ হাসিনা সরকার। এমপির অযোগ্যতার কারণে সেই উন্নয়নের ছিটেফোটাও তখন আমরা পাই নি। ঐ পাঁচ বছর শতভাগ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে কায়সার হাসনাত। এমন একজন ব্যক্তিকে কেন সোনারগাঁবাসী পুনরায় ভোট দিবে এমন প্রশ্নও ছুড়ে দেন তারা।
খোকার প্রশংসা করে তারা বলেন, ২০১৪ সালে খোকা হাল ধরার পর সোনারগাঁবাসী ঘুরে দাড়াতে শুরু করে। সোনারগাঁয়ে উন্নয়নের ছোয়া লাগতে শুরু করে। যার ধারাবাহিকতায় ঐতিহ্যের সোনারগাঁ দিনে দিনে তার হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাচ্ছে। এক সময়ের রাজধানী ও ব্যবসায়ী জোন হিসেবে পরিচিত সোনারগাঁ বর্তমানে আবারও দেশের অর্থনীতির ভিত্তি হিসেবে দাড়াতে যাচ্ছে। দেশের প্রায় সকল শিল্পগোষ্ঠির ব্যবসা কেন্দ্র, কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রধান ব্যবসা কেন্দ্র গড়ে উঠেছে সোনারগায়ের কাঁচপুর, মেঘনা শিল্পাঞ্চলসহ বেশ কয়েকটি এলাকায়। এর অবদান ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি খোকারও। কেননা, লিয়াকত হোসেন খোকার নেতৃত্বে সোনারগাঁয়ে সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে বলেই ব্যবসায়ীরা এই অঞ্চলটিকে ইকোনমিক জোন হিসেবে বেছে নিয়েছে। যার ফলে সোনারগাঁয়ে বেকারত্ব দুর হওয়ার পাশাপাশি কয়েক লাখ লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।
তফসিল ঘোষণার পর নৌকার সমর্থকদের উশৃঙ্খলতার কথা তুলে ধরে স্থানীয়রা বলেন, নৌকার প্রার্থীর পক্ষ নিয়ে সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ী ও অপকর্মকারীরা এরই মাঝে জোর জুলুম শুরু করেছে সোনারগাঁয়ে। নৌকার ভোটার ছাড়া অন্য প্রার্থীর ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যেতে বাধা, লাঙ্গলের প্রচার-প্রচারণায় বাধা, লাঙ্গলের কর্মী-সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি-ধামকি দেয়াসহ নানা ভয়ভীতি প্রদান করছে তারা। কায়সার এখনো এমপি হয় নাই, এখনই তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিরীহ জনগনের উপর নির্মম সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালাচ্ছে। যদি সে (কায়সার হাসনাত) এমপি হয়, তাহলে তো সন্ত্রাসীদের ভয়ে এলাকায়ই থাকা যাবে না বলে মনে হচ্ছে। এসকল কারণে, লিয়াকত হোসেন খোকার পক্ষে ভোট বিপ্লব হবে বলে দাবি স্থানীয়দের। বিপরীতে, নৌকার ভরাডুবি এখন সময়ের ব্যাপার বলেও অভিমত তাদের।