নারায়ণগঞ্জকে অস্থির করার অপচেষ্টা করছে একটি গোষ্ঠি : শামীম ওসমান

9
নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্যে রাখছেন শামীম ওসমান

নারায়ণগঞ্জ সমাচার:

ইতিহাস বিকৃতকারী রাজাকারের সন্তান উল্লেখ করে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান বলেছেন, নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের আয়োজনে একটি সুন্দর গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। যা সামাজিক ও রাজনৈতিক উভয় ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এর পর থেকে নারায়ণগঞ্জ খুব ভালো চলছে। কিন্তু একটি গোষ্ঠি দীর্ঘদিন ধরে আমার ও আমার পরিবারের নামে উল্টা-পাল্টা কথা বলে আসছে। আমি কখনো তাদের প্রতিবাদ করিনি, কারণ আমি তাদের কাউন্ট করি না। কিন্তু গত ০৭ই মার্চ আমার মায়ের মৃত্যুবার্ষিকীর দিন তারা আমার বাবা ও দাদুকে জড়িয়ে ইতিহাস বিৃকত করে কিছু কথা বলেছে। আমি বলতে চাই, যারা ইতিহাস বিকৃত করে তারা রাজাকারের সন্তান, তারা মুখোশধারী শয়তান। নারায়ণগঞ্জকে অস্থির করার জন্য তারা অপচেষ্টা করছে। তাদেরকে বলতে চাই, আপনাদের বয়স হয়েছে এবার থামুন। আপনারা যদি ভুল করে থাকেন তাহলে স্বীকার করেন ভুল করে স্বীকার করাটা লজ্জার কিছু না। কিন্তু ভুলটাকে স্টাবলিশ করাটাই লজ্জার বিষয়। স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃত করা চরম অন্যায়।

গত (১৩ মার্চ) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের সাথে সংক্ষিপ্ত মতবিনিয়ম সভায় তিনি এ কথা বলেন।

শামীম ওসমান বলেন, আমার বাবা এ কে এম সামসুজ্জোহা ৩৭ বছর আগে মারা গিয়েছেন। যিনি মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক, ভাষা সৈনিক, বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারকে রক্ষা করতে গিয়ে বুকে গুলি খেয়েছেন। যার কথা বঙ্গবন্ধু তার আত্মজীবনীতে বার বার লিখে গেছেন। জাতির পিতার কণ্যাও তার বক্তব্যে যার কথা বলেছেন। ৬ দফা আন্দোলনের যে সমাবেশ হয়েছিল টাউন হল ময়দানে এটার সভাপতিত্ব করেছে আমার বাবা সামসুজ্জোহা। এটা আমি জানতাম না, সাংবাদিকদের মাধ্যমেই এটা আমি জানতে পারি। তারপর আমি সেটা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বক্তব্য রাখি। কিন্তু একটি গোষ্ঠি আমার এই বক্তব্যকে ভুল আখ্যায়িত করে ইতিহাস বিকৃত করে নানা কুরুচীপূর্ণ বক্তব্য দেয়। ঐ গোষ্ঠির একজন চেক জালিয়াতির মামলায় একবার ও অন্য একটি মামলায় একবার সাজাপ্রাপ্ত হয়ে জেলও খেটেছেন। আরেকজন এই প্রেসক্লাবেরই সাবেক সভাপতি, যারা ইতিহাস বিকৃত করে নানান কথা বলছেন। ইতিহাসটাকেই বিকৃতি করা হচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, যদি আপনারা ভুল করে থাকেন তাহলে ক্ষমা চেয়ে নেন। আর যদি আপনারা চ্যালেঞ্জ করেন যে আপনারাই ঠিক, তাহলে আসেন আমিও প্রমাণ নিয়ে বসবো প্রেস ক্লাবেই।

শামীম ওসমান আরও বলেন, তাদের এই কুরুচীপূর্ণ বক্তব্যের পর আমি ১৯৬৬ সালের দৈনিক ইত্তেফাক, তৎকালীণ পাকিস্তানী পত্রিকা দৈনিক পাকিস্তান, দৈনিক আজাদ এবং বাংলাদেশের ইতিহাসবিদের সকল বই আমি সংগ্রহ করেছি। সেখানে আমি দেখেছি আমাদের এই নগরের বালুর মাঠ সেই সময় সভা হয় এবং সেই সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন একেএম সামসুজ্জোহা। কুকুর মানুষকে কামড়ালে, মানুষ কুকুরকে কামড় দেয় না। তাই আমি তাদের সাথে কোন কথার প্রতিবাদ করি নি। তারা আমাদের নারায়ণগঞ্জের ইতিহাসকে বিকৃত করে ফেলেছে। এই মিথ্যা তথ্য প্রচারের বিচার আমি নারায়ণগঞ্জবাসীর কাছে দিচ্ছি। আগামীকাল বা পরশুদিনের মধ্যেই আমার কাছে যে তথ্যগুলো আছে সেই পত্রিকার ও বইগুলো নিয়ে প্রেসক্লাবে আসবো। এটা যেন প্রেসক্লাবের কালেকশনে থাকে।

তিনি বলেন, আমার ইচ্ছে আছে ভবিষ্যতে ছয় দফা মঞ্চ করবো। নারায়ণগঞ্জে কে কোন দল করেন সেটা দেখব না, এরকম যারা ভাষা সৈনিক বা বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধে যারা ভূমিকা রেখেছেন আছেন তাদের জন্য ছোট একটি মিউজিয়ামের মতো করবো। সেই মিউজিয়াম সব সময় খোলা থাকবে সকলের জন্য। সেখানে আমাদের পূর্বপুরুষেরা নারায়ণগঞ্জের জন্য কি কি করে গেছেন সেটাও থাকবে এবং ইতিহাসে নারায়ণগঞ্জ কি কি ভূমিকা রেখেছে সেই জিনিসগুলো উল্লেখ থাকবে।

এসময় উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি আরিফ আলম দীপু, সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জীবন, সহ-সভাপতি বিল্লাল হোসেন রবিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসান সাদিক শাওন, কোষাধ্যক্ষ আনিসুর রহমান জুয়েল, কার্যকরী সদস্য আবু সাউদ মাসুদ, মাহফুজুর রহমান, আব্দুস সালাম, আফজাল হোসেন পন্টি, প্রেসক্লাবের স্থায়ী সদস্য নাহিদ আজাদ, এম আর কামাল প্রমুখ।