টানবাজার-নয়ামাটিতে ব্যবসায়ীদের মাঝে ডিবি আতংক

16

নারায়ণগঞ্জ সমাচার: 

তৈরি পোশাক শিল্পের প্রধান কাঁচামাল সুতার বৃহত্তম পাইকারী বাজার হিসেবে পরিচিত টানবাজার ও নয়ামাটিতে ব্যবসায়ীদের মাঝে ডিবি আতংক বিরাজ করছে বলে জানা গেছে। ঈদকে সামনে রেখে গত কয়েকদিনে ব্যবসায়ীদের দোকানের ভেতরে ও গুদামে ঢুকে তল্লাশির নামে হয়রানী করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সদস্যদের বিরুদ্ধে।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, কোনো কারণ ছাড়াই একদল ডিবি পুলিশ সদস্য বিভিন্ন দোকান ও সুতার গোডাউনে অভিযানের নামে হয়রানী করছে। এসব দোকানে ঢুকে সুতা ক্রয়ের রশিদ আছে কিনা, কোন দেশের সুতা, বিদেশী সুতা কোথা থেকে আসলো, কিভাবে আসলো, শুল্ক ফাঁকি দেয়া হয়েছে কিনা নানা প্রশ্ন করে ব্যবসায়ীদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। এক পর্যায়ে আটক ও মামলা করা হবে এবং দীর্ঘদিন সাজা হবে এমন ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। গত দুই মাসে এমনভাবে অন্তত ৭টি অভিযান চালিয়ে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে বলেও দাবি ব্যবসায়ীদের।

তবে, এ বিষয়ে লিখিত কোনো অভিযোগ করেন নি ব্যবসায়ীরা। এর কারণ হিসেবে তারা বলেন, ডিবি পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে কি হবে? তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া তো হবেই না, উল্টো নানা মিথ্যা অভিযোগ তুলে আমাদেরই নানাভাবে হয়রানী করা হবে? তাছাড়া পুলিশের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দিয়ে বিচার পাওয়া গেছে এমন ঘটনাও আমাদের দেশে বিরল বলে জানান তারা।

ব্যবসায়ীরা আরও উল্লেখ করেন, ডিবি পুলিশের যে সদস্যরা এই চাঁদাবাজি করছে, তারা একাই কি সেই টাকা খাচ্ছে? ব্যবসায়ীরা বলেন, সাবেক পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদের সময়ে নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে ভালো অবস্থায় ছিলো। ব্যবসায়ীদের কোনো প্রকার হয়রানী বা তাদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করা হয় নি। কিন্তু বর্তমান পুলিশ সুপারের সময়ে প্রায়ই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে বলে জানায় ব্যবসায়ীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সুতা ব্যবসায়ী জানান, ৪/৫দিন আগে রাতের বেলা একটি হায়েস গাড়িতে করে ডিবি পুলিশের ৭/৮ জন সদস্য আমার দোকানে ঢুকে আমার গোডাউন সম্পর্কে জানতে চায় এবং সেখানে যেতে চায়। গোডাউনে নিয়ে গেলে সুতা দেখার পর কবে সুতা কিনেছি, কোথা থেকে কিনেছি, ট্যাক্সের কাগজ আছে কিনা বিভিন্ন প্রশ্ন শুরু করে এক পর্যায়ে গ্রেফতার করা সহ নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। অবশেষে দর কষাকষি করে ১০ লাখ টাকা নিয়ে তারা আমাকে ছেড়ে দেয়। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করতে চাইলে উল্টো ঝামেলায় পড়তে পারেন এই ধারণা থেকে বিষয়টি নিয়ে কোনো অভিযোগ করেন নি বলে জানান এই ব্যবসায়ী।

জানা গেছে, গত মাসে ২নং রেল গেইট এলাকায় মহিউদ্দিনের বিল্ডিংয়ের ভাড়াটিয়া এক কাপড় ব্যবসায়ীর কাছ থেকেও একই কায়দায় ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় ডিবি পুলিশের সদস্যরা। এর আগে আরও একবার একই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা নেয়া হয় বলেও জানা গেছে। যদিও এ বিষয়ে ঐ ব্যবসায়ী মুখ খুলতে রাজী হয়নি। তবে, ঐ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে জড়িত প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, আমরা ভারত ও চায়না থেকে বৈধভাবে শুল্ক দিয়ে থান কাপড় এনে ব্যবসা করি। কিন্তু ডিবি পুলিশের একটি টিম নানা ফন্দি এটে আমাদের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করে। না দিলে গ্রেফতারের ভয় দেখায়, ব্যবসা ও নিজের সুনামের ক্ষতি হবে এমন চিন্তা থেকে টাকা দিয়ে রফাদফা করা হয় বলেও জানায় ঐ ব্যক্তি।

এ বিষয়ে সুতা ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ ইয়ার্ন মার্চেন্টস এসোসিয়েশনের সভাপতি লিটন সাহা বলেন, প্রকৃত কোনো ব্যবসায়ীকে কেউ হয়রানী করলে আমরা তার পাশে থাকবো। ডিবি পুলিশ হোক বা যে কেউ হোক হয়রানী করলে কোনো ছাড় দেয়া হবে না, অভিযোগ পেলে ব্যবসায়ীদের পক্ষে থেকে সর্বাত্মক সহযোগীতা করবে ইয়ার্ন মার্চেন্টস এসোসিয়েশন। একইসাথে শুল্ক দেয়ার বিষয়টি তদারকির দায়িত্ব কাস্টমস কর্মকর্তাদের, ডিবি পুলিশ বা থানা পুলিশের নয় বলেও জানান এ ব্যবসায়ী নেতা।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) তরিকুল ইসলাম বলেন, ডিবি পুলিশ এ ধরনের কোনো অভিযান চালায় নি। ডিবি পুলিশের নামে কোনো অপরাধী চক্র এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে। এমন একটি বিষয় আমি জেনেছে, যেখানে ডিবি পুলিশের নামে কয়েকটি মোবাইল নম্বর পাওয়া গেছে, যেগুলো অনুসন্ধান করে দেখা গেছে নাম্বারগুলো ঢাকার। তাদের গ্রেফতারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, এ ধরনের ঘটনা ঘটলে ব্যবসায়ীরা যাতে ভয় না পায়, তারা প্রতিরোধ গড়ে তোলে নিকটস্থ থানায় আমাদেরকে খবর দিলে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিবো।

এদিকে, ব্যবসায়ীরা বলছে, ভুয়া ডিবি পুলিশ বা অন্য কেউ নয় নারায়ণগঞ্জ ডিবি পুলিশের কয়েকজন সদস্যই এ ঘটনায় জড়িত। সকলের নাম জানা থাকলেও ভয়ে কারও নাম প্রকাশ করতে চান না ব্যবসায়ীরা। এ বিষয়ে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ব্যবসায়ীরা বলেন, সুতা ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে এবং ব্যবসায়ীদের হয়রানী বন্ধে পুলিশের ঢাকা বিভাগের রেঞ্জ ডিআইজি সহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুদৃষ্টি কামনা করছি।