
নারায়ণগঞ্জ সমাচার:
নীট গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বিকেএমইএ’র কাছ থেকে ৫ লাখ ও নারায়ণগঞ্জ জেলা ভিত্তিক ব্যবসায়ীদের সংগঠন নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ (এনসিসিআই) কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা চাঁদা নেয়া হয়েছে উল্লেখ করে চেম্বারের নব-নির্বাচিত সভাপতি মাসুদুজ্জামান বলেন, ভয়ভীতি দেখিয়ে এই চাঁদা নেয়া হয়েছে। আমি শক্তভাবে বলতে চাই, টাকা ফেরত দিতে হবে। এক পয়সা চাঁদা আর দিবো না, যে চাঁদা দিয়েছি সেই টাকাও ফেরত চাই। নাম উল্লেখ করলাম না, আমি সময় নিলাম। শহীদ মিনারে গিয়ে লাল কার্ড দেখাবো, নারায়ণগঞ্জ শহর থেকে বের করে দিবো, সে যত বড় শক্তিশালী নেতাই হোক। আমরা দরকার হলে, চেম্বারের পক্ষ থেকে দলীয় প্রধানদের কাছে নাম উল্লেখ করে লিখিত অভিযোগ দিবো। আমরা ব্যবসায়ী, আমরা ঝামেলা মুক্ত ব্যবসা করতে চাই। আজকে থেকে ব্যবসায়ীরা কোনো ভয়ভীতি পাবে না, ব্যবসায়ীরা নির্ভয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করবে।
নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম প্রেস কনাফারেন্সেই চাঁদাবাজদের শক্ত হাতে দমনের এ হুশিয়ারী দেন তিনি। শনিবার (০৭ সেপ্টেম্বর) বেলা ১২টায় নগরীর চাষাড়ায় চেম্বার ভবনে এ প্রেস কনফারেন্সের আয়োজন করে সংগঠনটি।
মাসুদুজ্জামান বলেন, ল এন্ড অর্ডার একটু দুর্বল আছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে না, এ অবস্থায় আমাদের ব্যবসা রক্ষা করতে আমাদের নিজেদেরকেই দায়িত্ব নিতে হবে। আমি সমস্ত ব্যবসায়ীদেরকে বলবো, যার যার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গরানের লাঠি রাখেন। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করবো। সকল ব্যবসায়ীদের নিয়ে হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ খোলার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, সকল ব্যবসায়ীদেরকে এই গ্রুপের আওতাধীন করেন। যেখানেই কোনো সমস্যা হবে, আমরা সবাই একত্রিত হয়ে প্রতিহত করবো।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, কোনো ব্যবসায়ী দয়া করে কোনো ধরনের ভুল অভিযোগ করবেন না। যদি প্রমাণিত হয়, কেউ ভুল অভিযোগ করেছেন, তাহলে চেম্বারের সদস্য পদ খারিজসহ তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
নারায়ণগঞ্জের এসপি ও পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা একটু এক্টিভ হোন। ব্যবসায়ীদের কি সহযোগীতা লাগবে, যদি আপনারা তা বলেন, তাহলে আমরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিবো। ট্রাফিক সিস্টেম ভেঙ্গে গেছে, যা ঠিক করা অতি প্রয়োজনীয়। এখানে এসপি সাহেব ও ডিসি সাহেবকেও অনুরোধ জানাবো, আপনারা সহযোগীতা করেন। নারায়ণগঞ্জ শহরে চলা যাচ্ছে না। নারায়ণগঞ্জের মানুষ কালীরবাজার থেকে চাষাড়ায় আসবে, এতে প্রায় ৫০ মিনিট সময় লেগে যায়। মাত্র ৬/৭ মিনিটের রাস্তা ৫০ মিনিট কেন লাগবে? খুবই বাজে ব্যবস্থা।
তিনি আরও বলেন, চেম্বার কোনোদিন আর রাজনৈতিক ঢাল হিসেবে ব্যবহৃত হবে না। এটা একটা স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান। শুধু ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কাজের ভিতরে থাকবে বলেই আশা করি। আমরা যখন চেম্বারে ঢুকবো, আমাদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় থাকবে না।
নারায়ণগঞ্জের সকল হত্যার বিচার চেয়ে চেম্বার সভাপতি বলেন, মেধাবী ছাত্র ত্বকী, চঞ্চলসহ যতগুলো হত্যা হয়েছে এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যতগুলো হত্যা হয়েছে সমস্ত হত্যার বিচার চাই। ব্যবসায়ীরাও মানুষ, হয়তো পরিস্থিতির কারণে বলতে পারি নাই। কিন্তু মন সবসময় সায় দিয়েছে, রায় দিয়েছে রাব্বি ভাইয়ের (নিহত ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি) পাশে থাকার। আমি ব্যক্তিগত ভাবে পাশে ছিলাম। আমরা সমস্ত হত্যার বিচার চাই। নারায়ণগঞ্জ একটি ঐতিহ্যবাহী জেলা, ব্যবসায়ী নগর, বন্দর নগর, আমাদের অতীত ইতিহাস আছে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আমরা সবাই মিলে মিশে এই নারায়ণগঞ্জে বসবাস করতাম। আমার আবারও সেই অবস্থায় ফিরে যেতে চাই। নারায়ণগঞ্জের নাম শুনলে মানুষ ভয় পায়, এমন একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছিলো। আমরা এই অবস্থা থেকে পরিত্রান চাই। আমরা পুর্বের মতো সবাই মিলে মিশে থাকতে চাই।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আইভীর বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের বিষয়ে উস্মা প্রকাশ করে মাসুদুজ্জামান বলেন, সাবেক মেয়র আইভী তার সারাজীবনে একাই যুদ্ধ করে গেছেন। পক্ষ কিন্তু দুই টাই ছিলো, এই পক্ষ এবং ঐ পক্ষ। উনি তখনো নির্যাতিত ছিলো, এখনও দেখছি নির্যাতিত। উনি এখনো নির্যাতনের ভিতরে আছেন। আমরা কখনোই এটা সাপোর্ট করি না। দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়া উচিত, এই মামলার বিষয়টা আসলে আমরা সমর্থন করতে পারছি না। এটা দুঃখজনক, ভালো জিনিসটা আমরা কেন ভালো বলতে পারবো না, সেই সাহস কেন নাই আমাদের।
সবশেষে সাংবাদিকদের সহযোগীতার চেয়ে তিনি বলেন, সাংবাদিকরা জাতির দর্পণ, আমি আপনাদের সহযোগীতা চাই। আপনারা যদি ভুল ব্যাখ্যা করেন বা ভুল তথ্য দেন, তাতে নারায়ণগঞ্জবাসী বিভক্ত হয়ে যায়। নিরপেক্ষ থেকে কলমটাকে নিরপেক্ষ করেন এই আহবান জানাচ্ছি। হয়তো এতে কষ্ট হবে, চ্যালেঞ্জ আছে, কিন্তু সত্যের পথে থাকবো আমরা। আমরা আপনাদের পাশে থাকবো, আপনারাও আমাদের পাশে থাকবেন এই প্রত্যাশা করছি।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিকেএমইএ’র নব-নির্বাচিত সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমকে উদ্দেশ্য করে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি আরিফ আলম দিপু প্রশ্ন করেন, গার্মেন্টস সেক্টর বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ একটি সেক্টর। বর্তমানে বিভিন্ন শিল্প এলাকায় শ্রমিকদের কিছু অস্থিরতার বিষয় সামনে এসেছে। এই অস্থিরতার কারণে বিদেশী বায়াররা ভারত ও পাকিস্তানের দিকে ঝুকতে পারে, তাই এই শিল্প রক্ষায় বিকেএমইএ’র পক্ষ থেকে কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে?
প্রশ্নের উত্তরে বিকেএমইএ সভাপতি বলেন, বর্তমানে শ্রমিকদের নামে যে আন্দোলন চলছে, বাস্তবে সেখানে বেশিরভাগ লোকই শ্রমিক নয়। এখানে বেকার যুব সংঘ নামে কিছু ব্যক্তি চাকরি প্রার্থী হয়ে রাস্তায় নামে। চাকরির নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গিয়ে তারা বলছে, কোনো ইন্টারভিউ নেয়া যাবে না, যে কজন আছে সকলকে চাকরি দিতে হবে। এটা অযৌক্তিক দাবী। কোনো ব্যবসায়ী তার প্রয়োজনের বাইরে কাউকে নিয়োগ দিবে না এটাই স্বাভাবিক। পাশর্^বর্তী একটি রাষ্ট্র বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করে গার্মেন্টস ব্যবসাটাকে তার নিজের দেশে নিয়ে যেতে চায়, আমি সেই দেশের নাম বললাম না, এখানে উপস্থিত সকলেই হয়তো বুঝতে পেরেছেন। যে সকল এলাকায় গার্মেন্টস শিল্প-প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেই সকল এলাকায় রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, শ্রমিক নেতৃবৃন্দ ও শ্রমিক ভাই-বোনেদেরকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে বলবো। যারা এই দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে সকলকে রূখে দাড়ানোর আহবান জানান তিনি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মাসুদুজ্জামান বলেন, রক্তের দাগ এখনো শুকায় নাই কিন্তু দালালি কিন্তু শুরু হয়ে গেছে। চেম্বার এবং চেম্বারের আওতাভুক্ত অন্যান্য সংগঠনগুলো থাকবে রাজনীতিমুক্ত। আমরা সমস্ত জায়গায় গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচনের উদ্যোগ নিবো।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিকেএমইএ’র নব-নির্বাচিত সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, সহ-সভাপতি অর্থ মোর্শেদ সারোয়ার সোহেল, নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি আরিফ আলম দিপু, সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জীবন, সিনিয়র সাংবাদিক আবু সাউদ মাসুদ, আব্দুস সালামসহ চেম্বার অব কমার্সের বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রমুখ।