কি হবে লকডাউনে?

70

নারায়ণগঞ্জ সমাচার:

১৪ এপ্রিল থেকে নতুন করে আবারো এক সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা করেছেন সরকার। তবে এ লকডাউনে জরুরী সেবা ছাড়া বাকী সব কিছু বন্ধ রাখার ঘোষণাও ইতিমধ্যে দিয়েছে সরকার। তবে এ সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে নাকি চলতি লকডাউনের মতো আবারও সিথিল করা হবে তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে সৃষ্টি হচ্ছে নানা প্রশ্নের। সর্বোপরি জনগন ভাবছে কেমন হবে আগামী লকডাউনকালীণ সময়।

জানা যায়, সারাদেশের ন্যায় নারায়ণগেঞ্জও কিছুতেই কমানো যাচ্ছে না করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার। প্রতিদিনই অব্যাহত গতিতে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর এ সংখ্যা। গত ২৪ ঘন্টায় ১১৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন এবং মৃত্যু হয়েছে ২ জনের। গত ০৯ এপ্রিল সবচেয়ে বেশী ১৯৯ জন আক্রান্ত হন এবং ৩ জন মারা যায় এদিন। অব্যাহত এ উর্ধ্বগতির কারণে চলতি লকডাউনের মধ্যেই ১৪ই এপ্রিল থেকে আবারো এক সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার।

প্রথম রমজান থেকে শুরু হওয়া এ লকডাউনে শুধু ইমার্জেন্সি সেবা ছাড়া অন্য সকল কিছু বন্ধ থাকবে এমন ঘোষণায় এ লকডাউন অনেকটা কঠোরভাবে পালিত হতে পারে বলে ধারণা করছে সাধারণ জনগন। অনেকে আবার বলছে, মুখে কঠোর বললেও কার্যত চলতি লকডাউনের মতো ঢিলেঢালা ভাবেই চলবে লকডাউন কালীণ সময়। কেননা চলতি লকডাউনের আগেও ইমার্জেন্সি সেবা ছাড়া সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছিলো সরকার। পরে অবশ্য মানুষের দাবীর প্রেক্ষিতে সে অবস্থা থেকে সরে আসে সরকার। লকডাউনের ২ দিন পর সকল সিটি এলাকায় গণপরিবহন চালু রাখার এবং ৫ দিন পর সকল মার্কেট খোলার রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

তাই পরবর্তী লকডাউনেও এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে বলে মনে করে সাধারণ জনগন। তাদের মতে, সামনে ঈদ। এ ঈদকে কেন্দ্র করে ক্ষুদ্র, মাঝারী, বড়, পাইকারী-খুচরা সহ সকল ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন অঙ্কের পণ্য মজুদ, তৈরি করে রেখেছে। যদি এ লকডাউন কঠোরভাবে পালিত হয় এবং লকডাউনের সময় আরো বাড়ানো হয় তাহলে অন্তত নারায়ণগঞ্জের লক্ষাধিক মালিক – শ্রমিকের পরিবার নি:স্ব হয়ে পথে বসতে পারে। গত বছরের লকডাউনে যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নিতে ব্যবসায়ীদের প্রায় সকলেই ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছে।

তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি এমন ঢিমেতালে লকডাউন চলে তাহলে করোনার উর্ধ্বগতি কিছুতেই ঠেকানো বা কমানো সম্ভব নয়। করোনার এ থাবাকে থামাতে হলে আবারও কঠোরভাবে কমপক্ষে দুই সপ্তাহ বা চার সপ্তাহ লকডাউন দিতে হবে এবং নির্দিষ্ট এ সময়ে সরকারী সকল নির্দেশনা মানতে হবে জনগনকে। জনগনের সচেতনতাই করোনার এ বিপর্যয় থেকে দেশবাসী ও সাধারণ মানুষকে দুরে সরিয়ে রাখতে পারবে বলেও মনে করেন তারা। তাই সরকারের উচিত সর্বোচ্চ কঠিন ও কঠোরভাবে আগামী লকডাউন নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা।

এদিকে, সাধারণ মানুষের সাথে আলাপকালে জানা যায়, গত বছরের যে ক্ষতি হয়েছে এখনো সেই ক্ষতিই পুষিয়ে উঠতে পারে নি ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তরের মানুষ। এখন যদি আবারো কঠোর লকডাউন দেয়া হয় তাহলে অনেকেই কঠোরতা ভেঙ্গে জীবন বাচাঁনোর তাগিদে ঘরের বাইরে বের হয়ে আসতে পারে। পুরো দেশবাসীর ন্যায় আমরা নারায়ণগঞ্জবাসীরাও তাই সরকারের সিদ্ধান্তের দিতে তাকিয়ে আছি। কি হবে লকডাউনে একটাই প্রশ্ন ঘুরছে আমাদের মনে।

কতটুকু কঠোর হবে আগামীর লকডাউন বা কি নির্দেশনা আছে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ  বলেন, সরকারী প্রজ্ঞাপন হাতে পেলেই বলতে পারবো সবকিছু। তবে করোনা মোকাবেলায় সরকার যে সকল সিদ্ধান্ত গ্রহন করবে তা বাস্তবায়নে প্রস্তুত রয়েছে জেলা প্রশাসন।

০৯ এপ্রিল রেকডসংখ্যক অর্থ্যাৎ ১৯৯ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৩ জন। গত ২৪ ঘন্টায়ও প্রায় ১২০ জনের মতো আক্রান্ত এবং ২ জনের মৃত্যু হয়েছে উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ নারায়ণগঞ্জবাসীর উদ্দেশ্যে কঠোর বার্তা দিয়ে বলেন, কে করোনায় আক্রান্ত কে আক্রান্ত নয় তা বলা মুশকিল। তাই প্রথমে সকলকে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের না হওয়ার পাশাপাশি, জনসমাগমস্থল এড়িয়ে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সহ সরকারী সকল নির্দেশনা মানলেই আমরা নারায়ণগঞ্জকে আবারো করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারবো। তাই সকলকে স্বাস্থ্য বিষয়ক সরকারী সকল নির্দেশনা মানার অনুরোধও জানান তিনি।

জেলা সিভিল সার্জন একই বিষয়ে বলেন, এখনো বলতে পারছি না। তবে শুধু ইমার্জেন্সী সেবা ছাড়া অন্য সকল কিছু বন্ধ থাকবে। সকলকে বলবো অপ্রয়োজন ঘর থেকে বের না হয়ে নিজে সুস্থ থাকুন এবং নিজের পরিবারকে মহামারী এ করোনার হাত থেকে রক্ষা করুন।