
নারায়ণগঞ্জ সমাচার:
নারায়ণগঞ্জে অনেকটাই ঢিলেঢালা ভাবে পালিত হচ্ছে কঠোর লকডাউন। রাস্তায় গণপরিবহন বন্ধ থাকার কথা থাকলেও চলছে প্রচুর পরিমাণ রিক্সা, অটোরিক্সা, ইজিবাইক, থ্রি হুইলার, বাইক, মোটরবাইক। বাস ছাড়া অন্যান্য যানবাহন চলাচল চালু থাকায় নগরীতে বেড়েছে মাদক বিক্রেতাদের আনাগোনাও। বিশেষ করে শীতলক্ষা নদীর তীরবর্তী ওয়াকওয়েতে চলছে মাদকের রমরমা বাণিজ্য। স্থানটি বর্তমানে মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে।
নগরবাসীর বিনোদনের কথা মাথায় রেখে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে সেন্ট্রাল খেয়াঘাট এলাকায় ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হলেও শীতলক্ষ্যা নদীর তীরবর্তী এ এলাকায় সাধারন সময়ে সন্ধ্যার পরে থাকতো মাদক কারবারীদের আনাগোনা। কিন্তু লকডাউন কালীণ সময়ে সারাদিনই এ স্থানটি থাকে মাদক কারবারীদের দখলে এমনটাই জানায় স্থানীয়রা।
জানা যায়, নগরবাসীর কাছে কদর পাওয়ার পাশাপাশি মাদক সেবী ও বিক্রেতাদের কাছেও এ ওয়াকওয়ের কদর বেশ। বিশেষ করে লকডাউন কালীণ সময়ে এ স্থানে চলছে মাদকের রমরমা বাণিজ্য। নগরীর অন্যান্য এলাকার তুলনায় এ স্থানটি কিছুটা নিরব থাকায় এবং প্রশাসনের নজরদারী কম থাকায় জায়গাটি এখন মাদক সেবীসহ অন্যান্য অপরাধীদের অভয়ারণ্য হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে জানায় স্থানীয়রা। বিভিন্ন পাড়া মহল্লার মাদক বিক্রেতা ও ক্রেতারা এখানে এসে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করছে বলেও জানায় তারা। ফলে স্থানটিতে দিনে দিনে মাদকসেবী ও ছিনতাইকারীদের উৎপাত বেড়ে চলেছে।
আরও জানা যায়, সারাদিন যেমন তেমন, তবে দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে শুরু করলেই এখানে বিভিন্ন ধরনের মাদক পাওয়া যায় বলে জানায় স্থানীয়রা। এখানে পাওয়া যায় গাজা, হেরোইন, ইয়াবাসহ হরেক রকমের মাদকদ্রব্য। সাধারণ সময়ে সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলতো বেচাকেনা, রাত বাড়ার সাথে সাথে শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার মাদকসেবিদের আসতো এখানে। তবে বর্তমানে লকডাউনের কারণে দিনের বেলায়ই প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি হচ্ছে বলে জানা যায়।
মাদক কারবারীদের কেউ আসে মোটরসাইকেল হাকিয়ে, কেউ আসে রিকশায়, পায়ে হেটে আসা মাদক কারবারীর সংখ্যাও কম নয়। দিনে দিনে ক্রেতা-বিক্রেতার উৎপাত উঠে চরমে, তাদের বেপরোয়া চলাফেরা আর অশালীন আচরনে ওয়াকওয়েতে একটু বিনোদনের খোঁজে আসা মানুষের পথচলা দুরূহ হয়ে উঠেছে।
নগরবাসীর মতে, নগরবাসীর বিনোদনের জন্য যে দুই-একটা স্থান রয়েছে তাদের মধ্যে সেন্ট্রাল খেয়াঘাট সংলগ্ন শীতলক্ষ্যার নদীর তীরের ওয়াকওয়েটি অন্যতম। তবে লকডাউন ও সরকারী নির্দেশনার কারণে মানুষ বাড়ি থেকে বের হতে না পারায় এ স্থানটি বর্তমানে একটি অনিরাপদ স্থান হিসাবে চিহ্নিত হয়ে পড়েছে। লকডাউন ছাড়াও প্রায় সবসময়ই মাদক বিক্রেতা ও ক্রেতাদের আনাগোনা থাকে এখানে। এসকল ছিনতাইকারী, মাদক বিক্রেতা ও ক্রেতাদের কারণে এখানে একটু স্বস্তির খোঁজে আসা সাধারণ মানুষ চরম নিরাপত্তাহীণতায় ভুগে।
সেন্ট্রাল খেয়াঘাট সংলগ্ন এক চা দোকানী বলেন, এখানে প্রায় সবসময়ই বখাটেরা আড্ডা দেয়। তবে দিনের বেলায় যেমন তেমন রাতের বেলায় এদের উৎপাত বেড়ে যায় কয়েকগুন। আর বর্তমানে তো লকডাউন, মানুষের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। তাই মাদক বিক্রি ও সেবনের পরিমাণ আগের চেয়ে বেড়েছে বলে জানায় এ চা দোকানী।
আরেক চা বিক্রেতা বলেন, এ স্থানটিতে সাধারণ মানুষেরা প্রায়ই হাটতে এবং গল্প-গুজব করতে আসতো। তখন আমাদের বেচা-বিক্রিও বেশী হতো। কিন্তু লকডাউনের কারণে সাধারণ মানুষ কম আসলেও কিছুদিন ধরে গাজা খোর, ইয়াবা খোরদের আনাগোনা বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই সব বখাটে, মাদক সেবী, বিক্রেতা ও ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছে সচেতন মহল।
তবে, সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশের তৎপরতাও ছিলো চোখে পড়ার মতো। তাদের তৎপরতার কারণে বিভিন্ন এলাকায় মাদকের উৎপাত কমেছে। এছাড়া প্রায় প্রতিটি পাড়া মহল্লার মাদক সেবী ও বিক্রেতারাও বারবার গ্রেফতার হচ্ছে পুলিশের হাতে।
পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে আমরা বরাবরই জিরো ট্রলারেন্স নীতিতে চলি। প্রায় প্রতিদিনই মাদক সেবী ও বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান। তবে সাম্প্রতিক সময়ে লকডাউন কার্যকরে শহরে আমাদের বেশ কয়েকটি চেকপোস্ট থাকায় পুলিশ সদস্যরা চেকপোস্টগুলোতে ব্যস্ত সময় পাড় করছে। তবে মাদক বিক্রেতাদের গ্রেফতারে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।