জৌলুস হারিয়েছে নারায়ণগঞ্জের ছাত্র রাজনীতি

36
রনি, আজিজ, রিয়াদ, শাহেদ, রুপু, রাফায়েল, সজিব, বিন্দু,

নারায়ণগঞ্জ সমাচার:

নারায়ণগঞ্জের ইতিহাসে ছাত্র রাজনীতির রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা এবং স্বাধীনতা থেকে গণতন্ত্র মুক্তি আন্দোলনসহ সব আন্দোলনে রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলোর প্রধান ভূমিকা ছিল। সব মিলিয়ে ছাত্র রাজনীতির চর্চার অন্যতম প্লাটফর্ম ছিলো নারায়ণগঞ্জ। কেননা রাজনৈতিক দিক দিয়ে ঢাকার সবচেয়ে নিকটে নারায়ণগঞ্জের অবস্থান। তবে বর্তমানে আর সেই অবস্থা নেই বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহল।

এর কারণে হিসাবে তারা বলেন, অতীতে যেখানে যে কোনো দুর্যোগ প্রতিরোধ-মোকাবেলায় নারায়ণগঞ্জের ছাত্র নেতাসহ সকল ছাত্র-ছাত্রীরা এগিয়ে আসতো। বর্তমানে সেখানে শুরু হয়েছে কমিটি বাণিজ্য ও টেন্ডারবাজির মহোৎসব। বিরোধীদল বিএনপির অঙ্গসংগঠন ছাত্রদল নেতাদের বিরুদ্ধে প্রায় শোনা যায় কমিটি বাণিজ্যের অভিযোগ। অপরদিকে, সরকার দলীয় সংগঠন ছাত্রলীগ নেতাদের দখলবাজি, টেন্ডার, প্রভাব বিস্তারের চিত্রও চোখে পড়ে হর হামেশা। আর তাই নারায়ণগঞ্জের ছাত্র রাজনীতির সেই জৌলুস এখন আর নেই বলে দাবী করেন তারা।

তাদের মতে, বসবাসযোগ্য একটি সুশৃঙ্খল নারায়ণগঞ্জ বিনির্মাণে রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলোর উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। অতীতের ছাত্র নেতাদের ত্যাগের মহিমা মিশে আছে এ নারায়ণগঞ্জে। তবে ছাত্র রাজনীতির গৌরবজ্বল ইতিহাসের স্বাক্ষী এ নারায়ণগঞ্জে করোনাসহ বেশ কিছু কারণে ধীরে ধীরে ঝিমিয়ে পড়ছে ছাত্র রাজনীতি।

এক বছরেরও বেশী সময় ধরে চলমান রয়েছে করোনা ভাইরাসের প্রভাব। তাই ছাত্র সংগঠনগুলো সহ রাজনৈতিক দলগুলোর সকল সংগঠনের কার্যক্রম অনেকটা স্থগিত রয়েছে। এছাড়া দীর্ঘ প্রায় এক যুগেরও বেশী সময় ধরে বিএনপি ক্ষমতার বাইরে থাকায় এবং পুলিশি হামলা-মামলার কারণে করোনা পরিস্থিতিতেও ছাত্রদলের কার্যক্রম তেমন একটা লক্ষ্য করা যায়নি। হাতে গোনা দুয়েকজন নেতাকর্মী গতবছর করোনা পরিস্থিতিতে নিজ উদ্যোগে অসহায়দের পাশে দাড়ানোর চেষ্টা করলেও অধিকাংশরা ছিলো ঘরের ভেতরে। এবার এখনও পর্যন্ত ছাত্রদল বা ছাত্রদলের কোনো নেতাকর্মীকেও দেখা যায় নি অসহায়দের পাশে দাড়াতে।

ছাত্রদল সুত্রে জানা যায়, বছর দুয়েক আগে মশিউর রহমান রনিকে সভাপতি ও সজীবকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রদলের জেলা শাখার আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। একইসময়ে শাহেদকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করে মহানগর ছাত্রদলের কমিটি গঠন করা হয়।

অপরদিকে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের শুরুতেই ছাতরাজনীতি থেকে বিদায় নিয়ে আড়ালে চলে যাওয়ায় নারায়ণগঞ্জে ছাত্র শিবিরের কোন অস্তিত্ব নেই বলে জানা যায়। অথচ বিএনপি জামাত জোট সরকারের আমলে অন্য যে কোন সংগঠনের তুলনায় শিবির অন্যতম শক্তিধর সংগঠন হিসাবে দেশে তান্ডব চালিয়েছিলো বলেও অভিযোগ রয়েছে। বর্তমান আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় আসার পর নারায়ণগঞ্জে শিবিরের আধিপত্যের ইতি ঘটে।

এদিকে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে ছাত্রমৈত্রী, ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রফ্রন্টের সাংগঠনিক কার্যক্রম কিছুটা সক্রিয় থাকলেও উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক তৎপরতা নেই। স্বল্প সংখ্যক কর্মী দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে তাদের কার্যক্রম।

এদিকে তিন বছর আগে আংশিকভাবে গঠন করা জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগ পূর্ণতা পায় তার পরের বছরই। বর্তমান কমিটি দুটি পূর্ণতা পেলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে এখনো পর্যন্ত খোলস ভেঙ্গে বেরিয়ে আসতে পারেনি কমিটির নেতৃবৃন্দরা এমনটাই মনে করে রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহল। খোলস থেকে বেরিয়ে আসতে না পারার কারণ হিসাবে রাজনৈতিক বিশ্লেষক এ মহল মনে করে, বর্তমান জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের প্রায় সকল নেতাকর্মীরাই একটি পক্ষের অনুসারী ও অনুগামী। এছাড়াও এই কমিটি দুটির নেতৃবৃন্দের ভাষ্যমতে, তাদের অন্যতম অভিভাবক হচ্ছেন একজন সাংসদ পুত্র। এটিই ছিলো মুল কারণ দাবী বিশ্লেষক এ মহলের।

কেননা যে সময়টাতে জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি দুটি পূর্ণতা পায়, তখন পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদের কারণে অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলো সাংসদ শামীম ওসমান বলয়ের নেতাকর্মীরা। ফলে সে সময়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রাজপথে তেমন একটা গর্জে উঠতে পারে নি বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহল। গত বছর খুবই সামান্য পরিমাণে অসহায়দের পাশে দাড়ালেও বর্তমান করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কঠিন সময়ে এখনো পর্যন্ত অসহায়দের পাশে দেখা যায় নি ছাত্রলীগ নেতাদের। ফলে ছাত্রলীগের কার্যক্রমও চলছে ধীরগতিতে। তারা মনে করে, ধীরগতির কারণে আওয়ামীলীগের অন্যতম শক্তিশালী এ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা এখন অনেকটা নীরব ভুমিকায় আসীণ হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জে ছাত্র রাজনীতি ঝিমিয়ে পড়ায় সাধারণ ছাত্রসহ নারায়ণগঞ্জবাসী অনেক ক্ষেত্রে অধিকার বঞ্চিত হচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনীতি বিশ্নেষকরা। রাজনৈতিক বিশ্নেষক মহলের মতে, ‘ছাত্রসমাজকে ভবিষ্যতে দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়া ও দেশসেবায় সরাসরি নিয়োজিত হওয়ার জন্য রাজনীতি চর্চার বিকল্প নেই। সুশৃঙ্খল ও পরিচ্ছন্ন একটি নির্দিষ্ট ফোরামের আওতায় ছাত্র রাজনীতি পরিচালিত হওয়া দরকার।’

ছাত্রদলের কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়ার বিষয়ে এক ছাত্রদল নেতা বলেন, ‘কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়ার জন্য প্রশাসন ও সরকারের একমুখী নীতি দায়ী।’ তার উপর বর্তমানে চলছে করোনা প্রভাব।

ছাত্রলীগের কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়ার কথা অস্বীকার করে ছাত্রলীগের এক কর্মী বলেন, ‘ছাত্রলীগ সবসময় মাঠে-ময়দানে, রাজপথে ছিলো এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। এছাড়াও আমরা সাধারণ শিক্ষার্থী ও জনগনের সব যৌক্তিক আন্দোলনে সর্বদা পাশে ছিলাম, আগামীতেও থাকবো।