জনসমর্থন ও নেতাকর্মী হারিয়ে দূর্বল শামীম ওসমান

200

নারায়ণগঞ্জ সমাচার:

জনসমর্থন ও নেতাকর্মী হারিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি এলাকায় আওয়ামী রাজনীতিতে দুর্বল হয়ে পড়ছেন শামীম ওসমান এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহল। সম্প্রতি শামীম ওসমানের ডাকা ২৭ টি ওয়ার্ডের কর্মীসভার শুরুতে মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দের মতপ্রার্থক্য, অনুষ্ঠিত হওয়া ওয়ার্ডগুলোর কর্মীসভায় নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগনের অনুপস্থিতির ভিত্তিতেই এমন দাবি করেন বিশ্লেষক এ মহল।

তাদের মতে, শামীম ওসমান ভিন্ন আঙ্গিকে ভিন্ন ভিন্ন নাটক সাজিয়ে মেয়র আইভীকে ঘায়েল করতে গিয়ে উল্টো নিজেই হয়ে পড়ছেন জনবিচ্ছিন্ন, হারাচ্ছেন জনসমর্থন, কর্মী-সমর্থক। তারই প্রমাণ পাওয়া যায় নাসিম ওসমানের কবরের মাটি নিয়ে মিথ্যাচারের প্রেক্ষিতে উল্টো কুপোকাত হওয়ার ঘটনায়। শুধু তাই নয়, আইভী ঠেকাতে নির্দেশকৃত নাসিক এলাকার কর্মীসভাগুলোতেও ২/১ জন নেতৃবৃন্দ ছাড়া আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দদের অনুপস্থিতির মাধ্যমেও এর প্রমাণ পাওয়া যায়।

জানা যায়, গত ৬ সেপ্টেম্বর রাইফেলস ক্লাবে জরুরী সভা করে ১০ দিনে নাসিকের ২৭ টি ওয়ার্ডে কর্মীসভা করার নির্দেশ দেন। শামীম ওসমান ও তার অনুসারীদের দাবি, এ কর্মীসভা হলো কর্মীদের চাঙ্গা করার জন্য। যদিও সাধারণ মানুষ ও মেয়র আইভী অনুসারীদের দাবি, কর্মীসভার নামে আইভী ঠেকাও সভার নির্দেশ দিয়েছিলেন বার বার বিতর্কিত হওয়া ঐ নেতা। ১০ তারিখ থেকে আজ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হওয়া সভাগুলোতে একচেটিয়াভাবে আইভীকে কটাক্ষ করে, তার বিরোধীতা করে বক্তব্য দেয়ার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের ঐ দাবির সত্যতা পাওয়া গেছে।

আওয়ামীলীগের প্রবীন এক নেতা বলেন, মহানগর আওয়ামীলীগের কর্মীসভার আহবান করা হয়েছে, অথচ মহানগরের সভাপতি, যুগ্ম সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ অধিকাংশ সিনিয়র নেতৃবৃন্দই উপস্থিত ছিলো না সভাগুলোতে। যা শামীম ওসমানের রাজনৈতিক দৈন্যদশারই প্রমাণ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মী সভাগুলোতে উপস্থিত আওয়ামীলীগের একজন কর্মী বলেন, গত ৮ দিনে ১৯/২০ টি কর্মীসভায় উপস্থিত ছিলাম। সভাগুলোতে শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ ভিপি বাদল, চন্দন শীল, খোকন সাহা, হেলাল, সাজনু, জুয়েল ও রিয়াদ ছাড়া তেমন কাউকেই দেখা যায় নি। ৩ টি সভায় লিটন, ৩ টি সভায় হুমায়ন কবির মৃধা, ১ টি সভায় নিজামকে দেখা যায়। এছাড়া প্রতিটি সভার দায়িত্বপ্রাপ্ত ১/২ জন নেতা ছাড়া স্থানীয় নেতৃবৃন্দদের কেউই উপস্থিত ছিলোনা। ২/১টি কর্মীসভা ব্যতীত প্রায় প্রতিটি সভাতেই নেতাকর্মীদের বসার চেয়ারগুলো ছিলো ফাঁকা। প্রতিটি সভাতেই ছিলো ছাত্রলীগের একশ্রেনীর নির্দিষ্ট কর্মী-সমর্থক, যারা না থাকলে সভাগুলোতে একশ মানুষও হতো না। এছাড়া অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশু-কিশোরদেরও দেখা গেছে সভাগুলোতে।

বিশ্লেষক মহলের দাবি, ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হওয়ার পরে শামীম ওসমানের প্রভাব ছিল জেলা জুড়ে। তখন তার ডাকে যে কোনো সভাতেই হাজার হাজার কর্মী সমর্থক ও নেতৃবৃন্দের আগমন ঘটতো। কিন্তু এখন সেখানে দেড়/দুইশ কর্মী-সমর্থকও খুঁজে পাওয়া যায় না। এর কারণ হিসাবে তারা বলছে, মানুষ এক সময় শামীম ওসমানকে ভালোবাসতো বা তার কর্মীবাহিনীকে ভয় পেতো। তবে, এখন আর সেই ভালোবাসা বা ভয় কিছুই নেই মানুষের মনে। কেননা মানুষ এখন নাসিক মেয়র আইভীর নেতৃত্বে আগের চেয়ে অনেক বেশী সাহসী। সাধারণ মানুষ এখন আর কোনো গুন্ডাবাহিনী বা সন্ত্রাসী বাহিনীকে ভয় পায় না। ফলে সংগঠনে তার সে অবস্থান এখন আর নেই। আর তাই শামীম ওসমান দিনে দিনে সিটি এলাকাসহ আওয়ামী রাজনীতিতে দুর্বল হয়ে পড়ছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ঐ মহল।