
নারায়ণগঞ্জ সমাচার:
নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের ২৭টি ওয়ার্ডের কর্মীসভার ধারাবাহিকতায় গতকাল ৮ নং ওয়ার্ডে কর্মীসভার আয়োজন করা হয়েছিলো। এই কর্মীসভার শুরু থেকেই অনেকটা গায়ে পরে ঝগড়ার পায়তারা করছিলো কাউন্সিলর রুহুলের সমর্থকরা এমনটাই দাবি উপস্থিত নেতাকর্মী ও স্থানীয়দের।
তারা বলেন, বিকেলে শুরু হওয়া কর্মীসভা বেশ ভালোভাবেই চলছিলো। শামীম ওসমানের নির্দেশনা মোতাবেক কর্মীরা সম্মেলনের মাধ্যমে আওয়ামীলীগ, যুবলীগসহ অঙ্গ-সংগঠনের কমিটি গঠনের প্রস্তাবনাসহ কর্মীদের চাঙ্গা করার জন্য বক্তব্য রাখছিলেন। কিন্তু আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হঠাৎই কাউন্সিলর রুহুল আমিনের পক্ষে নির্বাচনী আলোচনা শুরু করেন অনুষ্ঠানটির সঞ্চালক ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য এস এইচ এম মাহবুব আলম। এই মাহাবুব ইতিপূর্বে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বিনামূল্যে দেয়া বই টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে বিতর্কিত ঘটনার জন্ম দিয়েছিলেন। সেই মাহাবুবের বিতর্কিত বক্তব্যের কারণে অপর কাউন্সিলর প্রার্থী মহসিন ভুইয়ার লোকজন ও সাধারণ মানুষ উত্তেঝিত হয়ে পড়ে এবং পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে উঠে।

এসময় উপস্থিত সিনিয়র নেতৃবৃন্দদের সামনে দুই গ্রুপের মাঝে তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়। পরিস্থিতি ক্রমশই খারাপের দিকে যাচ্ছিলো, এমন সময় সিনিয়র নেতৃবৃন্দরা উভয় পক্ষের লোকদের নিবৃত করেন এবং পরিস্থিতি শান্ত করেন।
রুহুল সমর্থক মাহবুবকে উদ্দেশ্য করে শহর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন ভুইয়া সাজনু বলেন, এটা একটা কর্মী সভা। যারাই এখানে উপস্থাপনা করছেন, মাহাবুব সাহেব সহ আপনারা কেউই এখানে মনোনয়ন দাবি করতে পারেন না।
কাউন্সিলর রুহুল যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতেই স্পষ্টত গায়ে পড়ে ঝগড়ার প্রস্তুতি ছিলো বলে মনে করে স্থানীয়রা। তারা বলেন, শান্তিপূর্ণ একটি কর্মীসভায় রুহুল ও মহসিন ভুইয়া কেন নির্বাচনী বক্তব্য রাখতে গেলেন এবং কেনই বা রুহুল সমর্থক মাহবুব ও হাবিব কাউন্সিলর রুহুলকে আবারও মনোনয়ন দেয়ার দাবি জানালেন।

অনেকে আবার বলেন, আগে থেকেই রুহুল ও মহসিন ভুইয়ার মাঝে দ্বন্দ চলে আসছে। তাই অনুষ্ঠানের শুরু থেকেই কাউন্সিলর রুহুলের সমর্থকরা মহসিন ভুইয়া ও তার সমর্থকদের সাথে ঝগড়ার পায়তারা করছিলো। তারই অংশ হিসাবে কর্মীসভায় নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও নির্বাচনী বক্তব্য রেখে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করে কাউন্সিলর রুহুল ও তার সমর্থকরা এমনটাই দাবি স্থানীয়দের।
বিতর্কিত বক্তব্যে কাউন্সিলর রুহুল আরও বলেন, সামনে নির্বাচন, যদিও একথা বলা ঠিক না তারপরও বলছি। আওয়ামীলীগের কর্মী হয়ে দুবার নির্বাচিত হয়েছি। এ এলাকায় যথেষ্ট উন্নয়ন করেছি, এলাকার মানুষের সাথে মিশেছি। দলমত নির্বিশেষে আমাকে সবাই পছন্দ করে। কিছু লোক যদি বলে, দল আমাকে কাউন্সিলর বানিয়ে দিবে। তাহলে আমরা কি জামাত-বিএনপি।
তিনি আরও বলেন, যদি দল থেকে নমিনেশন দেয়, তাহলে আমাদের আগে দিতে হবে। কারণ আমাদের দাবি আছে, আমরা দুইবার প্রতিদ্বন্দিতা করেছি, এই এলাকায় যথেষ্ট উন্নয়ন ঘনিয়েছি।
মনোনয়ন না দিলে নির্বাচন না করার হুমকি দিয়ে তিনি বলেন, সুতরাং আপনারা নেতৃবৃন্দ সিদ্ধান্ত নিবেন, বিবেচনা করেই নিবেন। আমরা আপনাদের সম্মান করি, আপনাদের সুবুদ্ধি আছে, জ্ঞানবুদ্ধি আছে। মাঠপর্যায়ে আপনারা খোঁজ-খবর নিয়ে, আপনারা সিদ্ধান্ত নিবেন। যদি দল অন্য কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে আমি বুঝে শুনেই সিদ্ধান্ত নিবো নির্বাচন করবো কি করবো না। তবে আমি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত।

এদিকে, হট্টগোলের পর মহসিন ভুইয়া সভাস্থল ত্যাগ করলে তার সমর্থকরাও সভাস্থল ত্যাগ করে। ফলে মুহুর্তের মধ্যেই সভাস্থল ফাকা হয়ে যায় এবং চেয়ারগুলো খালি পড়ে থাকে।
হট্টগোলের বিষয়ে মহসিন ভুইয়া নারায়ণগঞ্জ সমাচারের কাছে বলেন, কর্মীসভার মধ্যে নির্বাচনী বক্তব্য রাখা উচিৎ হয়নি। যদি এটা নির্বাচনী সভা হতো তাহলে আমিও তো নির্বাচনী বক্তব্য রাখতে পারতাম। এখানে মহানগর আওয়ামীলীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দরা ছিলেন তারাই দেখেছে, তারাই দেখবে কার দোষ ছিলো এবং কে কি করেছে? উপস্থাপনার দায়িত্ব ছিলো এনামুল হক মিয়া বাদল ভাইয়ের কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবেই রুহুল সমর্থক মাহবুব অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করে সুন্দর পরিবেশটিকে অস্থিতিশীল করে তোলে।
একইবিষয়ে জানতে চাইলে কাউন্সিলর রুহুল হট্টগোলের কথা অস্বীকার করে নারায়ণগঞ্জ সমাচারকে তিনি বলেন, কই ঘটলো হট্টগোল। ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজ আছে জানালে তিনি বলেন, একটা মিটিং হলে একেকজনের পক্ষে মিছিল হয়ই, এটা তো আর হট্টগোল না। যেহেতু নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অতি সন্নিকটে, তাই একেকজন একেকজনের প্রার্থী নিয়ে কথা বলতেই পারে। ছাত্রলীগের একজন সদস্য বলছে যে, যদি কোনো প্রার্থী দেয়া হয় তাহলে আমরা রুহুল আমিন মোল্লাকে দাবি করে নেতৃবৃন্দের কাছে। একথা বলার পরই ওরা হৈ চৈ করে আসছে, তারপরই নেতৃবৃন্দরা বলছে কারে দেই না দেই এটা এখনকার বিষয় নয়, এখানে বলার দরকার নাই।