আইভী পেলে দোষ কোথায় প্রশ্ন নগরবাসীর

231
মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, এমপি শামীম ওসমান, এড. আনিসুর রহমান দিপু

নারায়ণগঞ্জ সমাচার, মো: সাইফুল ইসলাম সায়েম:

শামীম ওসমান নির্দেশ দিয়েছিলেন কর্মীসভা করতে, নির্দেশ পালন করেছেন তার অনুসারীরা। নির্দেশনা মোতাবেক নগরীর ২৭ ওয়ার্ডের মধ্যে ২৪/২৫টি ওয়ার্ডে কর্মীসভা করে আইভীর বিরুদ্ধে বক্তব্যও দিয়েছেন তারা, করেছেন বিষোদাগার। ভিপি বাদল, চন্দন শীল, খোকন সাহা, শাহ নিজাম, সাজনুসহ অনেকেই আইভীকে উদ্দেশ্য করে এক সুরে বলছেন, ১৮ বছর ধরে পরপর তিনবার চেয়ারম্যান ও মেয়র হয়েছেন আর কতো। নামেন না এবার, নতুনদের সুযোগ দেননা। শামীম অনুসারীদের এ ধরনের বক্তব্যকে হাস্যকর বলে মন্তব্য করেছেন সাধারণ জনগন ও আইভী অনুসারীরা।

তাদের মতে, বিতর্কিত কর্মকান্ডে বারবার নাম আসার পরেও ওসমান পরিবার যদি নারায়ণগঞ্জ থেকে এমপি পদে বারবার দলীয় মনোনয়ন পেতে পারে তাহলে ক্লিন ইমেজেরে অধিকারী, নারায়ণগঞ্জের সর্বকালের সবচেয়ে বেশী উন্নয়নকারী হিসাবে চিহ্নিত চুনকা পরিবার বা ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী মেয়র পদে মনোনয়ন পেলে দোষ কোথায়?

নারায়ণগঞ্জবাসীর মতে, নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে ওসমান পরিবার বারবারই চেয়েছে একচ্ছত্র দাপট দেখাতে। নিজেদেরকে বারবার অসীম ক্ষমতার অধিকারী হিসাবে জাহির করতে চেয়েছে। কিন্তু প্রথমে আলী আহাম্মদ চুনকার আমলে ও বর্তমানে সিটি মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর কারণে সেই দাপট দেখাতে পারেননি তারা। আইভীর সাথে লড়াই করে নির্বাচনে হেরেছেন লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে, হারিয়েছেন ক্লিন ইমেজের রাজনৈতিক গুরু, বন্ধু, শীষ্য ও জনসমর্থন সবই। কারণ বারবার হারছেন মেয়র আইভীর সৎ কাজ, সাহসি মনোভাব, অনড় সিদ্ধান্ত ও দৃঢ় চেতনার কাছে।

এসব কারণে আইভীই বর্তমানে ওসমান পরিবারের তথা শামীম ওসমানের সবচেয়ে বড় শত্রু এমনটাই মনে করে নারায়ণগঞ্জবাসী। তাদের মতে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর হিসাবে পরিচিত, প্রতিবাদী মেয়র আইভীই বর্তমানে শাামীম ওসমানের পথের কাটা। এই আইভীকে কাবু করতে পারলেই বা রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতে পারলেই আবারো দেখাতে পারবেন একচ্ছত্র আধিপত্য। আর তাই বারবার আইভী প্রতিহত করতে সাজানো হয় ভিন্ন ভিন্ন নাটক। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি সংসদ সদস্য শামীম ওসমান নির্দেশ দেন নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডে কর্মীসভা করার। প্রকৃতপক্ষে, কর্মীসভার নামে আইভী ঠেকাও সভার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি এমনটাই দাবী আইভী অনুসারী ও সাধারণ জনগনের।

আরও জানা যায়, শামীম ওসমানের নির্দেশের পরে ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৪/২৫টি ওয়ার্ডে কর্মীসভা করেছেন তার অনুসারী-অনুগামীরা। যদিও এসব কর্মী সমাবেশের অধিকাংশই ফ্লপ হয়েছে এমন দাবী করেন স্থানীয়রা। সভাগুলোতে ঘটে নি আশানুরূপ কর্মীসমাগম, অধিকাংশ কর্মীসভায়ই দেখা গেছে বক্তার চেয়ে শ্রোতা ছিলো কম, চেয়ার ছিলো ফাঁকা।

তারপরও এসব সভায় শামীম ওসমান অনুগত ও তার বন্ধু লাঙ্গল মার্কা আওয়ামীলীগ খ্যাত জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ভিপি বাদল, শামীম ওসমানের একনিষ্ঠ বন্ধু মহানগর আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি চন্দন শীল, আরেক বন্ধু নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী রাজনীতির দাদা খ্যাত মহানগরের সাধারণ সম্পাদক এড. খোকন সাহা, চাষাড়া-ডনচেম্বারসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শনকারী মহানগরের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম, উলট-পালট বক্তব্য দানকারী সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, শহর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন সাজনু, তাদের ভাগিনা পরিচয়ে মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের পদ দখলকৃত মো. জুয়েল হোসেনসহ অনেকেই সিটি মেয়র আইভীকে উদ্দেশ্য করে বিভিন্ন বক্তব্য রেখেছেন।

তাদের প্রায় সবাই ই আইভীকে উদ্দেশ্য করে অভিন্ন সুরে বলেছেন যে, ১৮ বছর ধরে এক চেয়ারে বসে আছেন, আর কতো। প্রথমে পৌরসভার চেয়ারম্যান হিসাবে ও পরপর দুইবার সিটি মেয়র হিসাবে চেয়ার দখল করে বসে আছেন। নামেন না এবার, সরেন না এবার, নতুনদের সুযোগ দেননা, আর কতো। এতো মধু খাওয়ার সখ কেন? এ ধরনের আরও বক্তব্য রাখেন তারা।

এ ধরনের বক্তব্যকে হাস্যকর বলে মন্তব্য করেছেন নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষ ও আইভী অনুসারীরা। তাদের মতে, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের বিরোধের কথা নারায়ণগঞ্জ ছাপিয়ে জানে পুরো দেশবাসী। এই বিরোধের জেরে বারবার আইভীকে ঘায়েল করতে চান শামীম ওসমান, কিন্তু হয় তার উল্টোটা।

তারা পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, ওসমান পরিবারের সদস্যরা বছরের পর বছর ধরে এমপি হয়ে আছেন। তাদের এলাকায় তো উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নয়নই দেখা যায় না। সাংসদ শামীম ওসমানের এলাকার মানুষ প্রতিবছরই বৃষ্টির মধ্যে পানিতে তলিয়ে যায়। পানির মধ্যেই তাদের বসবাস। সীমাহীন দু:খ-কষ্ট ভোগ করছেন তারা। তারপরও বারবার এমপি হতে চান শামীম ওসমান।

পক্ষান্তরে, নারায়ণগঞ্জের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশী উন্নয়নকারী, নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নের রূপকখ্যাত ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বারবার মনোনয়ন পেলে নারায়ণগঞ্জেরই আরো উন্নয়ন হবে। কিন্তু গাঁ জ¦ালা হবে একটি পরিবার ও তাদের অনুসারীদের। নারায়ণগঞ্জের মানুষ আগে যেভাবে ভয়ে ভয়ে জীবন-যাপন করতো তা থেকে মানুষকে আলোর পথে এনেছেন, সাহস যুগিয়েছেন মেয়র আইভী। তাই আইভীকে সরাতে পারলেই আবারো নারায়ণগঞ্জের ভয়ের রাজনীতি শুরু করতে পারবে ঐ পরিবার ও তার অনুসারীরা এমনটাই মনে করে নারায়ণগঞ্জবাসী।

এসব বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের জাতীয় কমিটির সদস্য, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এড. আনিসুর রহমান দিপু বলেন, আওয়ামীলীগের মনোনয়নের জন্য আমাদের একটি মনোনয়ন বোর্ড আছে, যার প্রধান হচ্ছেন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি আরও বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা যদি মনে করে যে এই লোকটা যোগ্য, এই মানুষটা যোগ্য, তাকে বারবার মনোনয়ন দিতে পারেন। যারা বলছেন নামেন না, সরেন না, টাইপ কথা বলে তারা জননেত্রী শেখ হাসিনার মনোনয়নকে চ্যালেঞ্জ করতেছে। এটা খুব দু:খ জনক। জননেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেছে। এমপি, মেয়র এমনকি বর্তমানে ইউপি চেয়ারম্যান পদেও মনোনয়ন দেয়ার একমাত্র মালিক তিনি। কাকে কয়বার মনোনয়ন দিবেন এটা উনি বিবেচনা করবেন, উনি তৃণমূলে খোঁজ-খবর নিয়ে কার যোগ্যতা আছে, কার যোগ্যতা নেই, কে নির্বাচনী বৈতরণী হতে পারবেন, কার গ্রহনযোগ্যতা তাকে মনোনয়ন দিবেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। তিনবার দেক, চারবার দেক, পাঁচবার দেক এটা জননেত্রীর সিদ্ধান্ত। এ সিদ্ধান্ত আমরা যারা আওয়ামীলীগ করি, আওয়ামীলীগের কর্মী, আমরা এই সিদ্ধান্ত মাথা পেতে নিতে বাধ্য। সেখানে নামেন না, সরেন না এসব কথা বলে আমাদের নেত্রীর সিদ্ধান্তকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে।