
নারায়ণগঞ্জ সমাচার:
সোনারগাঁয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বারবার আওয়ামীলীগের প্রার্থী পরাজীত হওয়ার পেছনে নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী এক নেতাকে দায়ী করেছে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তাদের মতে, প্রভাবশালী এক নেতার অশুভ দৃষ্টির কারণে প্রার্থীরা বারবার পরাজীত হয় এখানে। মূলত নিজ স্বার্থ টিকিয়ে রাখতে বারবার দ্বন্দ্ব-বিভেদ সৃষ্টি করে নারায়ণগঞ্জের ঐ নেতা।
সম্প্রতি সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনের দিন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ঐ ভাইকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এক বড় ভাই নারায়ণগঞ্জে বসে সোনারগাঁকে নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু তৃণমূল অযাচিত এ হস্তক্ষেপ চায়না।
এদিকে, গেলো ১৭ই অক্টোবর জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে শুধুমাত্র চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হয়। সাধারণ ওয়ার্ড ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে দলীয় প্রতীক নির্বাচন না হলেও ৩নং সাধারণ ওয়ার্ড তথা সোনারগাঁ উপজেলায় জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম ইকবালের কাছে পরাজীত হয় জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা ও সাবেক সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম।
সোনারগাঁ উপজেলায় ১০টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে ৭টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সরাসরি নৌকা প্রতীকে বিজয়ী, ২জন আওয়ামীলীগ নেতা তবে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসাবে জয়ী ও ১জন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান রয়েছে। আওয়ামীলীগের ৯জন চেয়ারম্যান ও মেম্বার থাকার পরও এ নির্বাচনে ৩৪ ভোটের ব্যবধানে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর কাছে পরাজীত হয় তৃণমূল আওয়ামী সমর্থিত প্রার্থী।
এর কারণ হিসাবে তৃণমূল নেতাকর্মীরা নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী এক বড় ভাইকে দোষারোপ করছে। তারা বলছে, মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম ও তার ভাই মাহফুজুর রহমান কালাম এক সময় প্রভাবশালী ঐ ভাইয়ের বলয়ে রাজনীতি করলেও বর্তমানে তারা বিপরীত বলয়ের রাজনীতিতে জড়িত। এছাড়াও সোনারগাঁয়ে লাঙ্গল মার্কা কিছু আওয়ামীলীগ নেতা রয়েছে বলেও দাবি তৃণমূলের। লাঙ্গল মার্কা এ নেতারা আওয়ামীলীগের সাথে বেঈমানী করায় এবং কথিত সেই বড় ভাইয়ের ছত্রছায়া না থাকায় মূলত পরাজীত হতে হয় মাসুমকে।
এর আগে, গত ১৫ই জুন অনুষ্ঠিত হয় মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। এ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হিসাবে সাবেক চেয়ারম্যান আরিফ মাসুদ বাবুর নাম প্রস্তাব করে তৃণমূল তথা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ। তবে একক প্রার্থী হিসাবে বাবুর নাম ঘোষণা করা হলেও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সোহাগ রনি নৌকার মনোনয়ন পেয়ে যান। এখানেও নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী ঐ বড় ভাইয়ের হাত রয়েছে বলে মনে করে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
তারা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, আমরা তৃণমূল থেকে নাম প্রস্তাবের পরও নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী এক ভাইয়ের কারণে মূলত অযোগ্য সোহাগ রনি মনোনয়ন পায়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করে জয়লাভ করেন সাবেক চেয়ারম্যান আরিফ মাসুদ বাবু। পরে সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগ সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়ে দেয়, মূলত প্রার্থীর অযোগ্যতায় মোগরাপাড়ায় নৌকার পরাজয় হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সোনারগাঁ উপজেলা আহবায়ক কমিটির এক নেতা বলেন, নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী একজন রাজনীতিবীদ নিজের কর্তৃত্ব বজায় রাখতে উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের মাঝে দ্বন্দ্ব-বিভেদ জিইয়ে রাখেন। নিজ স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে দলীয় প্রার্থীকেও পরাজীত করার নির্দেশ দেন তিনি। আর নিজ প্রার্থী অযোগ্য হলেও তাকে মনোনয়ন এনে দিতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালায় এ নেতা।
পরপর দুটি নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থীর পরাজয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনে সোনারগাঁ উপজেলার বিষয়ে বলতে গেলে পরাজয়ের মূল কারণ হচ্ছে এখানে আওয়ামীলীগের সংসদ সদস্য না থাকা। বর্তমানে যিনি আছেন তিনি জাতীয় পার্টির। উন্নয়ন কর্মকান্ডের ব্যাপারে চেয়ারম্যানদের সাথে স্থানীয় সংসদ সদস্যের একটা যোগাযোগ থাকে। এ কারণেই মাসুমের পরাজয় হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের বিষয়ে তিনি বলেন, তৃণমূল তথা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ থেকে এককভাবে আরিফ মাসুদ বাবুর নাম প্রস্তাব করা হয়েছিলো। এ নামটাই আমরা জেলার মাধ্যমে কেন্দ্রে পাঠিয়েছিলাম। এখন এটা দু:খজনক, আসলে কিভাবে এককভাবে উনার নাম প্রস্তাব করার পরেও আরেকজন পাইলো।
পরক্ষনেই তিনি আবার বলেন, এটা পাইতেই পাইলো। কারণ আসলে আওয়ামীলীগের থেকে সিদ্ধান্ত দিয়েছে মনোনয়ন বোর্ড। কোন ক্রাইটেরিয়ায় তারা এই প্রার্থীকে দিলো এটা মনোনয়ন বোর্ডই ভালো বলতে পারবে। আমার মতে, এই নমিনেশনটা যেটা দেয়া হইছে এটা সঠিকভাবে আসলে হয়তোবা সিদ্ধান্তটা নেয়া হয় নাই।
৯জন চেয়ারম্যান থাকার পরও জেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম কেন পরাজীত হলো এমন প্রশ্ন শুনেই ব্যস্ততা জানাতে শুরু করেন সনমান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদ আলী জিন্নাহ। প্রশ্ন শুনে তিনি বলেন, আপনি সরাসরি এসে যা জানতে চান বলেন আমি বলবো। আমি এখন ব্যস্ত আছি।
একইবিষয়ে জানতে উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি, পিরোজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান মাসুম ও কাঁচপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোশাররফ ওমরের ফোন নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়। এছাড়া, বারদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লায়ন বাবুল কল রিসিভ করেন নি।