বিজয় দিবসে মাঠ কাঁপালো বিএনপি, ব্যাকফুটে আ.লীগ

20
বিজয় দিবসে মাঠ কাঁপালো বিএনপি, ব্যাকফুটে আ.লীগ

নারায়ণগঞ্জ সমাচার:

দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় না থেকেও মহান বিজয় দিবসে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে বিশাল বিশাল মিছিল ও বিজয় র‌্যালি করে নারায়ণগঞ্জের রাজপথ নিজেদের দখলে রেখেছিলো নারায়ণগঞ্জ বিএনপি, বিপরীতে স্বল্পসংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে দলীয় কার্যালয়ে ঘরবন্দি হয়ে দিবসটি পালন করেছে আওয়ামীলীগ। এতে অনেকটা অসহায়ত্ব প্রকাশ করতে দেখা যায় আওয়ামীলীগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের। তারা অনেকেই এসময় বলেন, ক্ষমতায় থেকেও আমাদের উপস্থিতি বিএনপির তুলনায় সত্যিই লজ্জাজনক।

এদিন, জেলা-মহানগর বিএনপি পৃথক পৃথকভাবে দুটি এবং মহানগর বিএনপির বিদ্রোহী কমিটি একটি বিশালকার বিজয় র‌্যালি করে শহরে। পক্ষান্তরে জেলা-মহানগর আওয়ামীলীগ দলীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভা ও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করেছে। এছাড়া মেয়র আইভী কাউন্সিলরদের সাথে নিয়ে পুস্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহলের মতে, ২০২৩ সালের শেষে অথবা ২০২৪ সালের শুরুতে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আওয়ামীলীগ-বিএনপি উভয় দলের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবারের নির্বাচন। কেননা আওয়ামীলীগ চাইবে জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে, পক্ষান্তরে বিএনপির জন্য এটি অনেকটা অস্তিত্বের লড়াই। ফলে রাজপথ দখলে নিতে ব্যস্ত দু দলই।

আওয়ামীলীগের এমন অসহায়ত্ব দেখে তারা মনে করেন, রাজপথ দখলে উভয় দলের এ লড়াইয়ে এখনো পর্যন্ত বিএনপি যে শতভাগ সফল তাতে সন্দেহ নেই কারোই। কেননা বিগত কয়েকমাস ধরে রাজপথেই আছে দলটি। নানা কর্মসূচী ও আন্দোলন সফলভাবে পালন করছে দলটি। এছাড়া, সম্প্রতি গিয়াসউদ্দিনকে আহবায়ক করার পর গুটি কয়েকজন নেতাকর্মী বাদে বাকী সবাই এসেছেন একই ছায়াতলে। ফলে আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে সবচেয়ে শক্তিশালী ভুমিকায় রয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি।

অপরদিকে, মহানগর বিএনপির উভয় পক্ষের কর্মসূচীতে উপস্থিতির হার দেখে বোঝা যায় না যে, তারা দুটি ভাগে বিভক্ত। কেননা উভয় গ্রুপেই বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতি চোখে পড়ে। ফলে, নারায়ণগঞ্জের রাজপথ বর্তমানে বিএনপির দখলে আছে বলেই মনে করে রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহল।

রাজপথ দখলে রাখার অংশ হিসাবে বিজয় দিবসে সাবেক এমপি ও জেলা বিএনপির আহবায়ক মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন এবং সদস্য সচিব গোলাম ফারুক খোকনের নেতৃত্বে ডাকা বিজয় র‌্যালিতে যোগ দিতে সকাল থেকেই বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের সকল ইউনিট থেকে খন্ড খন্ড মিছিল এসে জড়ো হতে থাকে ডিআইটি এলাকায়। রূপগঞ্জ উপজেলা বিএনপি, সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপি, আড়াইহাজার উপজেলা বিএনপি, ফতুল্লা থানা বিএনপি, জেলা যুবদল, জেলা স্বেচ্ছাসেবকদল, জেলা ছাত্রদল, জেলা মহিলাদল, জেলা শ্রমিকদল, জেলা কৃষকদলের সকল ইউনিটের নেতাকর্মীরা ডিআইটিতে এসে উপস্থিত হন। নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে এসময় সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন গিয়াস-খোকন।

পরে বেলা এগারো টার দিকে ১৫-২০ হাজার নেতাকর্মী নিয়ে ডিআইটি এলাকা থেকে বিজয় র‌্যালি বের করে জেলা বিএনপি। র‌্যালিটি ২নং রেল গেইট হয়ে চাষাড়ায় বিজয় স্তম্ভে গিয়ে শেষ হয় এবং সেখানে নেতৃবৃন্দরা স্মরণে পুস্পস্তবক অর্পণ করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এসময় জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক শহীদুল ইসলাম টিটু, মাশুকুল ইসলাম রাজীব, লুৎফর রহমান খোকা, সোনারগাঁ বিএনপির আহবায়ক আজহারুল ইসলাম মান্নান, সদস্য সচিব মোশাররফ হোসেন, রূপগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহবায়ক এড. মাহফুজুর রহমান হুমায়ন, সদস্য সচিব বাছির উদ্দিন বাচ্চু, কাউন্সিলর ইকবাল হোসেন, বিএনপি নেতা রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরীসহ সকল থানা ও ইউনিটের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা অংশ নেয়।

একইসাথে মহানগর বিএনপির আহবায়ক ও সদস্য সচিবের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে বিজয় র‌্যালি বের করা হয়। একইসময়ে মহানগর বিএনপির বিদ্রোহী কমিটির নেতৃবৃন্দদের নেতৃত্বে আরেকটি বিজয়র‌্যালি বের করা হয়। উভয় র‌্যালিতেই নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মতো।

বিপরীতে, নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগ বর্তমানে ঘরবন্দী অবস্থায় আছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহল। এতদিন বিএনপির কর্মকান্ড সহ্য করা হয়েছে, কিন্তু এখন থেকে আর সহ্য করা হবে না এ ধরনের নানা বক্তব্য রাখলেও আওয়ামীলীগ মূলত নিজেদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলেই দিশেহারা বলে দাবি তাদের। যদিও নেতৃবৃন্দরা প্রায় বলে থাকেন নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগ ঐক্যবদ্ধ, তবে কাজে-কর্মে তাদের দ্বন্দ্ব দৃশ্যমান। তাছাড়া, গেল কয়েকমাস রাজপথে তারা নিজেদেরকে সেভাবে মেলে ধরতে পারছেনা বলেও মনে করে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

বিজয় দিবসের দিন জেলা-মহানগর আওয়ামীলীগ কার্যালয়ে পৃথকপৃথকভাবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণ মহানগর যুবলীগ, জেলা-মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগ, জেলা-মহানগর শ্রমিকলীগ, মহিলালীগের নেতৃবৃন্দরা। পরে বেলা ১১টার খোকন সাহা ও আনোয়ার হোসেনের সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শেষে পুস্পস্তবক অর্পণ করে মহানগর আওয়ামীলীগ।

এর পরেই জেলা আওয়ামীলীগের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় এ দলীয় কার্যালয়ে। এতে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবদুল হাই, সাধারণ সম্পাদক ভিপি বাদল, সিটি মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, আওয়ামীলীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য এড. আনিসুর রহমান দিপু, আওয়ামীলীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা বাচ্চু, জাহাঙ্গীর হোসেন প্রমুখ।