
নারায়ণগঞ্জ সমাচার:
নারায়ণগঞ্জ মহানগরে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের কর্মকান্ড নিয়ে হ-য-ব-র-ল অবস্থা দেখা দিয়েছে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী মহানগর কমিটির মেয়াদ তিন বছর হলেও প্রায় ৯ বছর আগের কমিটি দিয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে দলীয় কার্যক্রম। দীর্ঘ এই সময়ে একটি ওয়ার্ড কমিটিও গঠন করতে পারেনি নেতৃবৃন্দরা দাবি তৃণমূলের। ফলে প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ডে নেতাকর্মীদের মাঝে চরম হতাশা দেখা দিয়েছে। তাই মহানগর আওয়ামীলীগের নেতৃত্বের পরিবর্তন চায় তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়া আওয়ামীলীগের জাতীয় কাউন্সিলের পূর্বেই মহানগর আওয়ামীলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠানের কথা ছিলো। সেই লক্ষ্যে গত ২৫ অক্টোবর দিন তারিখও ঠিক করা হয়েছিলো। তবে, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাবের কারণ দেখিয়ে সম্মেলন স্থগিত করা হয় বলে জানানো হয়েছিলো। যদিও কোনো থানা বা ওয়ার্ড কমিটি গঠন করতে না পারার ব্যর্থতার দায়ে এ সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছিলো বলে দাবি তৃণমূল নেতাকর্মীদের।
পরে অবশ্য কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের নির্দেশে থানা ও ওয়ার্ড কমিটি গঠনের তোরজোড় দেখা যায় মহানগর আওয়ামীলীগের। তবে এবারও নিজেদের ব্যর্থতার পরিপূর্ণ পরিচয় দিয়েছেন তারা। দীর্ঘ ২ মাসেও একটি ওয়ার্ড কিংবা থানা কমিটির সভা করতে না পারায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের অনেকে টিপ্পনি কেটে বলেন, যেটা ৯ বছরে হয়নি সেটা ২ মাসে কিভাবে হবে?
এর সমাধান হিসাবে তারা বলেন, বর্তমান সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহাসহ সকল পদধারীর উচিত নিজ নিজ পদ থেকে পদত্যাগ করে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মুক্তি দিলেই এর সমাধান হতে পারে। কেননা তাদের ব্যর্থতার ভার আর সইতে পারছেনা নেতাকর্মীরা। তাই অতিসত্ত্বর পদত্যাগ করে যোগ্যদের কাধে দায়িত্বভার তুলে দেয়ার দাবি জানান তারা।
জানা গেছে, ২০১৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে আনোয়ার হোসেনকে সভাপতি ও খোকন সাহাকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়। ৭ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে বলেছিলেন খোদ দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তবে তার সেই নির্দেশও মানে নি আনোয়ার-খোকন। দুই বছর পর ২০১৫ সালের ২৬ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের ৭১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্নাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়।
গঠনতন্ত্র মোতাবেক এই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে দীর্ঘ সময় পাড় হলেও এখনো পর্যন্ত একটি ওয়ার্ড বা ইউনিট কমিটি গঠন করতে পারেনি আনোয়ার-খোকনের নেতৃত্বাধীন এই কমিটি। দুই গ্রুপে বিভক্ত সভাপতি-সম্পাদকের ব্যর্থতা ও নেতাকর্মীদের অনৈক্যের কারণে ক্ষমতাসীণ দলের মহানগর শাখার এই দুর্দশা, দাবি তৃণমূল নেতাকর্মীদের।
এদিকে, সহসাই নতুন কমিটি গঠন হওয়ার সম্ভাবনা না থাকলেও এখনই আনোয়ার-খোকনের ব্যর্থতার কারণে নেতাকর্মীদের মাঝে সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক পদসহ গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। কেননা, কোনো থানা বা ওয়ার্ড কমিটি গঠন ছাড়াই যে কোনো সময় ভেঙ্গে দেয়া হতে পারে চরমভাবে ব্যর্থ এই কমিটি। আওয়ামী লীগের একাধিক দলীয় সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে। তাই নতুন কমিটিতে কারা আসতে পারেন তা নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন।
নির্ভরযোগ্য সুত্রের দাবী, মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চন্দনশীল, শাহ নিজাম, জি এম আরাফাতদের মধ্য থেকেই সভাপতি-সম্পাদক নির্বাচন করা হতে পারে। তবে, আনোয়ার হোসেন ও খোকন সাহা নতুন করে গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদে আসুক তা চায়না তৃণমূল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নেতাকর্মীরা জানান, নেতৃত্বে পরিবর্তন এনে নতুনদের দায়িত্ব দেয়া উচিত।
এদিকে, শীঘ্রই মহানগর আওয়ামীলীগের বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত করা হতে পারে বলেও জানা গেছে। পদপ্রত্যাশীদের অনেকে বলেন, ৯ বছর ধরে সভাপতি-সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন আনোয়ার-খোকন। আর পূর্ণাঙ্গ কমিটি আছে সাত বছর যাবৎ। দীর্ঘ সময় ধরে একই কমিটি থাকায় অনেক নেতাকর্মীরা কাজে উৎসাহ হারাচ্ছেন। মেধাবী, উদ্যোমী ও পরিশ্রমীদের নিয়ে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হলে নেতাকর্মীরা কাজে আরও বেশি উৎসাহ পাব।
অপরদিকে, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি গঠন নিয়ে এখন প্রকাশ্যে কোনো তৎপরতা না থাকলেও ভেতরে ভেতরে এ নিয়ে ব্যাপক তৎপরতা চলছে বলেই জানা গেছে। কেনোনা কমিটিতে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা: সেলিনা হায়াৎ আইভী এবং নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি একেএম শামীম ওসমানের অনুসারীরা প্রাধান্য পেতে চাইবেন।
তবে গাজী ও আইভী অনুসারীরা মনে করেন, ক্লিন ইমেজের অধিকারী গাজী ও আইভী যেভাবে চাইবেন সেভাবেই হবে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি। কিন্তু এই ক্ষেত্রে শামীম সমর্থকরাও চুপ করে বসে নেই। তারাও এ ইউনিটের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসিন হতে সর্বাত্বক চেষ্টা ও তদবির করছেন বলে জানা গেছে।
কবে নাগাদ নতুন কমিটি হতে পারে এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর আওয়ামীলীগের এক নেতা বলেন, নতুন কমিটি কবে আইতে পারে এটা কেন্দ্রীয় কমিটির যে প্রেসিডেন্ট আছে শেখ হাসিনা তারে জিজ্ঞাসা করলে পাইবা। বুঝছনা? এটা কি আমি কইতে পারমু কবে কমিটি দিবো।