
নারায়ণগঞ্জ সমাচার:
নারায়ণগঞ্জবাসীর আন্দোলন, সংগ্রাম, দুর্যোগ, দুর্দশা, হাসিকান্না, সুখ-দুঃখ বেদনা সবকিছুর সাথেই যেন মিশে আছে একটি নাম- নারায়ণগঞ্জের প্রাণ পুরুষ একেএম শামীম ওসমান। তাকে কেউ কেউ নারায়ণঞ্জের সিংহ পুরুষ নামে ডাকতে ভালবাসেন। তবে সাধারণের কাছে তিনি ভরসার প্রতীক হিসাবেই পরিচিত। শামীম ওসমান শুধু একজন সংসদ সদস্য নন, পুরো নারায়ণগঞ্জবাসীর গর্ব ও অহংকার। তিনি জয় করেছেন নারায়ণগঞ্জের প্রতিটি মানুষের হৃদয়। যার ফলে নারায়ণগঞ্জ আজ আওয়ামীলীগের শক্ত ঘাটি হিসেবে পরিচিত।
ঐতিহ্যবাহী ওসমান পরিবারের দ্বিতীয় প্রজন্মের সন্তান একেএম সামসুজ্জোহার কনিষ্ঠ ছেলে তিনি। আন্দোলন সংগ্রাম আর রাজনৈতিক চর্চা সেই ছোট্ট বেলা থেকে। স্কুল জীবন থেকে বুঝে গেছেন সে শুধু তার নয়! তার জন্মই হয়েছে এই দেশ, এই জাতির জন্য। নারায়ণগঞ্জের মাটি ও মানুষ তার অঙ্গে-অন্তরে মিশে একাকার।
কলেজ জীবনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের মাধ্যমে রাজনীতির হাতে খড়ি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান তার আর্দশ, প্রেরণা ও চেতনা। ৭৫’ এ স্বপরিবারের-বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বাংলাদেশের যে কয়টি অঞ্চলে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফাসির দাবী তোলা হয়েছিলো, তার মধ্যে নারায়ণগঞ্জ ছিলো অন্যতম। তৎকালীণ সময়ে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফাসির দাবীতে বন্ধুদের সাথে নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছিলেন সেই সময়ের তরুণ শামীম ওসমান। যার কারণে খানপুরস্থ বিবি মরিয়ম স্কুলের সামনে নির্মম নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছিল তাকে। শুধু নির্যাতনই নয়, মারতে মারতে একটি বাই সাইকেল তার পিঠে ভাঙ্গা হয়েছিল বলে জানা যায়, যার বর্ণনা দিতে গিয়ে প্রায়ই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন খোদ শামীম ওসমান। সেই আন্দেলন থেকে শুরু করে বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের সকল আন্দোলনসহ দেশ-জাতি ও নারায়ণগঞ্জবাসীর সংকটময় যে কোন পরিস্থিতিতে তাকে কেউ কখনো দাবিয়ে রাখতে পারেনি। কোনো দুর্যোগে কখনো ঘরে বসে থাকেননি সাহসী এই নেতা। সর্বদাই ছুটে গেছেন অসহায় মানুষের পাশে।
১৯৯৬ সালে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। তিনি যেসব সাহসী উদ্যোগ নিয়েছিলেন, তা নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নে ব্যপক ভূমিকা রেখেছে। দেশের অন্যান্য নির্বাচনী আসনের তুলনায় শামীম ওসমানের নির্বাচনী এলাকায় যে উন্নয়ন হয়েছে তা ভবিষতের জন্য উল্লেখ্যযোগ্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তখন প্রায় ২৬’শত কোটি টাকার উন্নয়ন করেছিলেন তিনি। নারায়ণগঞ্জে একটি উন্নতমানের ও বিশ্বমানের স্টেডিয়াম নির্মাণ সহ প্রায় সকল এলাকার সড়ক নির্মাণ, সংস্কার, স্কুল-কলেজ, রাস্তাঘাট, পুল-কালভার্ট, স্বাস্থ্যসহ সকল বিষয়ে অনস্বীকার্য অবদান রেখেছিলেন তিনি।
নারায়ণগঞ্জের ইতিহাসে বড় বড় যেসব উন্নয়ন হয়েছে তাঁর প্রায় অধিকাংশ তাঁর আমলে হয়েছে। আর এসব শুধু দুঃরদর্শী চিন্তা ও বলিষ্ঠ নেতৃতের অধিকারী শামীম ওসমানের পক্ষেই সম্ভব ছিলো। ২০১৪ সালে পুনরায় আবার নির্বাচনে জয়লাভ করে উন্নয়নের মাত্রা ছাড়িয়েছেন অন্য যে কোন সময়ের তুলনায় ঢের বেশী। দ্বিতীয় বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর প্রায় ৭ হাজার ৪শ কোটি টাকার উন্নয়ন করেছেন তিনি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ৩য় বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে তার নির্বাচনী এলাকার প্রায় সকল রাস্তা-ঘাট নির্মাণ কাজ শেষ করেছেন বলেও জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। যেটুকু বাকি আছে তার প্রায় সবই টেন্ডার হয়ে গেছে, শুধু টেন্ডারই নয় কাজও চলছে দ্রুত গতিতে, শীঘ্রই এসকল কাজ সমাপ্ত হবে বলেও জানা যায়। ডিএনডি বাসীর দুর্ভোগ ও জলাবদ্ধতা দুর করতে হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্পের কাজ মাঝামাঝি পর্যায়ে রয়েছে। শুধু তাই নয়, দেশের মোট রপ্তানি আয়ে সবচেয়ে বড় ভুমিকা রাখা বিসিক শিল্প নগরীসহ দেশের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়ীক জোন হিসাবে পরিচিতি নারায়ণগঞ্জ শহরকে চাঁদাবাজ, মাদক মুক্ত রাখতে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি।
এ ধরনের বড় বড় দৃশ্যমান উন্নয়ন প্রকল্প শামীম ওসমানের দ্বারাই সম্ভব বলে মনে করেন এলাকাবাসী। যা ইতোপূর্বে নারায়ণগঞ্জের কোন এমপি করেননি বা করতে পারেন নি। এ জন্যই নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে তার কোন বিকল্প নেই বলে মনে করছে সাধারণ জনগন ও নেতাকর্মীরা। তাকে ঘিরেই নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতি পরিচালিত হয়ে আসছে। তাই নারায়ণগঞ্জ বলতেই শামীম ওসমান। এসব কারণে নারায়ণগঞ্জে তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ এবং শক্তিশালী।
তার জীবন জুড়ে শুধু একটি স্বপ্ন, এই নারায়ণগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জবাসীকে নিয়ে। নারায়ণগঞ্জকে তিনি সাজাতে চান নববধুর মতো, নারায়ণগঞ্জ একদিন উন্নত বিশ্বের বড় বড় শহরের মতো সমৃদ্ধশালী হবে এই স্বপ্নই দেখেন তিনি। নারায়ণগঞ্জের প্রতিটি মানুষ একদিন সাবলম্বী হবে। থাকবে না ক্ষুধা-দারিদ্রতা। শিক্ষা-চিকিৎসা বঞ্চিত হবে না কোন নাগরিক। রাস্তাঘাট হবে নিরাপদ পরিচ্ছন্ন। আর তাই নারায়ণগঞ্জবাসীর প্রানের দাবী অনুযায়ী, লিংক রোডের পাশে ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার লক্ষ্যে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন শামীম ওসমান, যা শুধু তারই পক্ষে সম্ভব। ইতিমধ্যে ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট মেডিকেল কলেজের অনুমোদনও দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জানিয়েছেন শামীম ওসমান নিজে।
দেশের সবচেয়ে ধনী পরিবারে জন্ম হলেও ব্যক্তি জীবনে তিনি অতি উচ্চ বিলাসি জীবনযাপন করেননি। ছেলে-মেয়েদেরও গড়ে তুলেছেন সম্পূর্ণ সুশৃংখল পারিবারিক পরিবেশে। ব্যক্তি ও রাজনৈতিক জীবনে অসংখ্য প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছিলো তাকে, জেল জুলুম অত্যাচার এক সময় তার জীবনের অংশে পরিণত হয়ে ছিলো। ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে হারিয়েছেন অনেক প্রিয় সহযোদ্ধা-সাথীকে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতে গিয়ে এক সময় রাজপথ ছিল তার আসল ঠিকানা, মিছিল ছিলো তার নিত্য দিনের সাথী, শ্লোগান ছিলো তার মুখের ভাষা। আক্রমণের শিকার হয়ে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বেচেঁ এসেছেন একাধিকবার। আহত হয়েছেন অসংখ্য বার। ২০০১ এর ১৬ই জুন চাষাড়ায় আততায়ীদের ঘাতক বোমা কেড়ে নিয়েছে ২০ জন সহযোদ্ধা-সাথীর প্রাণ, এসময় আহত হন তিনি নিজেও।
চাইলেই যে কেউ সহজে দেখা করতে পারেন এই নেতার সাথে। নারায়ণগঞ্জের যে কোন নাগরিকের সাথে তিনি নিজের আপন সাথীসুলভ কথা বলেন। কাউকে বড় কাউকে ছোট কিংবা কাউকে আপন কাউকে পর এমন কখনো কোনদিন বিভেদ করতে দেখা যায়নি তাকে। নারায়গণঞ্জের পরিচিত-অপরিচিত যার সাথে কথা বলুক না কেন, দেখলে মনে হয় সেই ব্যক্তিটি উনার অতি কাছের একজন।
শামীম ওসমান পেয়েছেন মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসা। কাজ করে চলেছেন শুধুমাত্র মানুষের কল্যাণে, এর চাইতে বেশী কিছু চাননি কোনদিন। রাজনীতিকরা ভাবেন পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে, শামীম ওসমান ভাবেন পবরর্তী প্রজন্ম নিয়ে, দক্ষতা-যোগ্যতায় শামীম ওসমানকে কেউ অতিক্রম করতে পারেনি। জেলার রাজনীতিতে আওয়ামীলীগ মানেই শামীম ওসমান, শামীম ওসমান মানেই নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগ। শামীম ওসমানের বিকল্প শামীম ওসমান নিজেই। শুধু দলে নয় সমসাময়িক রাজনীতিতেও তার কোন বিকল্প নেই বলে মনে করেন তার সহকর্মীরা। তাদের মতে, শামীম ওসমান হচ্ছেন নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগের মেরুদন্ড, শামীম ওসমান একটি সুতা, যেই সুতায় একই বন্ধনে গাথা আছে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা।
তারা মনে করেন, পাহাড় সমান কৃতিত্বের অধিকারী এই সাহসী পুরুষের নাম নারায়ণগঞ্জবাসী মনে রাখবে চিরদিন। অন্তত নারায়ণগঞ্জ যতদিন বেঁচে থাকবে, যতদিন শীতলক্ষ্যা, বুড়িগঙ্গা নদী বহমান থাকবে ততদিন নারায়ণগঞ্জের আকাশে, বাতাসে বইতে থাকবে শামীম ওসমানের নাম।