
নারায়ণগঞ্জ সমাচার:
আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আসন্ন ঈদের পরপরই নিজ নিজ দলের পক্ষে দাবি আদায়ে রাজপথে নামবে আওয়ামীলীগ-বিএনপিসহ সকল রাজনৈতিক দলগুলো এমনটাই ধারণা রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহলের। তাদের মতে, ঈদের পরপরই সরগরম হয়ে উঠবে নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গন। নিজ নিজ দলকে শক্তিশালী করতে কেন্দ্রীয়ভাবে সাংগঠনিক কর্মকান্ড শুরু করার পাশাপাশি তৃণমূলে ব্যাপক সাংগঠনিক তৎপরতা চালানো হবে বলে দাবি দলগুলোর কেন্দ্রীয় সুত্রের। আর তাই শিগগিরই রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবে রাজনৈতিক দলগুলো। উত্তপ্ত হয়ে উঠবে নির্বাচনী রাজনীতি।
বিশ্লেষক মহলের মতে, নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যু নিয়েই মূলত এই রাজনীতি আবর্তিত হচ্ছে। নিজ নিজ রাজনৈতিক কর্মসূচির পক্ষে জোরালো অবস্থান নিবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি। সেখানে সমঝোতা, নাকি সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে, তা নিয়ে আশা ও উৎকণ্ঠার দোলাচলে রয়েছে সাধারণ মানুষ। আর তাই ঈদের পরই রাজপথ উত্তপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকার পাশাপাশি তৃণমূলের রাজনীতি ঈদের পর চাঙ্গা হয়ে উঠবে এমনটাই ধারণা করা হচ্ছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের পক্ষ থেকে।
সংযমের মাস রমজানের কারণে রাজনৈতিক দলগুলো কিছুটা নমনীয় হয়ে রয়েছে। তবে, ইতিমধ্যেই ঈদের পরে মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা। সম্প্রতি, তোলারাম কলেজের নবীন বরণ অনুষ্ঠানে এ প্রসঙ্গ টেনে শামীম ওসমান বলেন, কিছুদিন যাবৎ নারায়ণগঞ্জে খুনীদের আস্ফালন দেখছি। অনেকেই আমাদের সাথে খেলতে চান, আমরাও খেলতে প্রস্তুত আছি। কবে খেলবেন, কোথায় খেলবেন জানিয়ে দিয়েন, সেই খেলায় ইনশ্আাল্লাহ আমরাই জিতবো। তিনি আরও বলেন, রমজান মাস সংযমের মাস, তাই আসুন সবাই একটু সংযত হই। ঈদের পরে নারায়ণগঞ্জের বাড়িতেই থাকবো, কখন খেলবেন আইসেন, নারায়ণগঞ্জেই আছি।
শামীম ওসমানের বিভিন্ন কথার প্রেক্ষিতে সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দিন বলেন, অনেকেই এখন বড় বড় কথা বলেন। কিন্তু দল যখন ক্ষমতায় না থাকে তখন অনেকেই দেশ ছেড়ে চলে যান। কিন্তু আকাশে যখন মেঘ কেটে যায়, তখন আবার অনেকে নানান কথা বলেন, হুমকি দেন। আমরা কারো রক্তচক্ষুকে ভয় করিনা।
সবমিলিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ঈদের পরে ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলগুলো মাঠে নামছেন এটা নিশ্চিত। বেগম জিয়ার মুক্তি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে মাঠে নামবে বিএনপি। বিপরীতে ক্ষমতাসীনদল আওয়ামীলীগসহ তাদের শরীকদলগুলো বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হবে বলে ঘোষনা দিয়েছেন। এই দুই ইস্যুকে কেন্দ্র করে অন্যান্য জেলার ন্যায় নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতেও উত্তাপ ছড়াচ্ছে। প্রধান দু’টি রাজনৈতিক দলগুলোর পাল্টাপাল্টি হার্ডলাইনে অবস্থানের ঘোষনার পর থেকে আতঙ্ক বিরাজ করছে নারায়ণগঞ্জবাসীর মধ্যে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় একটি সুত্রের দাবি, রাজনৈতিকভাবে অনেকটাই কোণঠাসা বিএনপির কেন্দ্রীয় ও তৃণমুল নেতাকর্মীরা দলীয় চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনা এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ঈদের পরই সরকারের উপর সব ধরনের চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করা হবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা ইতিমধ্যেই এই সকল কর্মসূচী নিয়ে রাজনীতির মাঠে নেমেছে। ঈদের পরে এই আন্দোলন আর তীব্র হবে বলে দাবি বিএনপি নেতাকর্মীদের।
পক্ষান্তরে, অনেকটা কৌশলী মনোভাব নিয়ে এগোচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। বিএনপির মতো হুমকি-ধমকির রাজনীতিতে না গিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ দলের অন্য নেতারা বক্তব্যে অনেকটাই শালীনতা বজায় রেখেছেন। দলের জন্য ভোট প্রার্থনা করেছেন। অবশ্য উদ্ভূত ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় দুই দলই ভেতরে ভেতরে নানা কৌশল এঁটেছেন। ঈদের পর সেই কৌশল বাস্তবায়নেই মাঠে তৎপর হবে দল দুটি ও তাদের শরিকরা। ফলে আসন্ন রাজনৈতিক পরিস্থিতি যে উত্তপ্ত হবে এমন আশঙ্কা রয়েছে সাধারণ মানুষের মাঝে।
অবশ্য রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী রাজনীতিতে সরকার ও বিরোধী উভয়পক্ষেরই সমান দায়িত্ব রয়েছে। বিএনপি যে দাবি করছে, সাংবিধানিকভাবে সেই সহায়ক সরকারের বৈধতা নেই। আবার এটিও সত্য যে, বিএনপিকে আস্থায় আনতে গেলে সরকারকে অবশ্যই এক ধরনের সমঝোতা বা মতৈক্যের রাজনীতিতে যেতে হবে। দুই পক্ষই চাইলে শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি সম্ভব।
বিশ্লেষকরা আরো বলছেন, সংঘাতময় রাজনীতি যে দলের জন্য ক্ষতিকর, তা বিএনপি ইতোমধ্যেই টের পেয়েছে। আবার একতরফা নির্বাচন যে গ্রহণযোগ্যতা পায় না, সরকারে সে উপলব্ধিও হয়েছে। ফলে নিশ্চয় এবার আর কোনো পক্ষই বৈরী রাজনীতির দিতে যাবে না।
সংবিধান অনুযায়ী, বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৩ সালের অক্টোবরে। তাই আগামী বছরের জানুয়ারীর মাসের মধ্যেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
কেমন হতে পারে ঈদ পরবর্তী নির্বাচনী রাজনীতি- জানতে চাইলে দলীয় সূত্রগুলো বলেছে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি শরিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনী মাঠ দখলের কৌশল ও পরিকল্পনা নিয়েছে। লক্ষ্য একটাই পরস্পরকে ঘায়েল করে নিজেদের পক্ষে জনমত গঠন করা। প্রধান দুই দলের এই দৌড়ে পিছিয়ে নেই ছোট ছোট দলগুলোও। সব মিলেই দেশের রাজনীতি ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠবে- এমনটাই মনে করা হচ্ছে। তবে রাজনৈতিক মাঠ দখলের কৌশলকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গন সহিংস হয়ে ওঠার পূর্বাভাসও মিলেছে।
সর্বপ্রথম বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি এবং নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবিতে ঈদের পর মাঠ দখলের আন্দোলনের ডাক দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন দলের নেতারা। বিএনপি নেতারা বলেছেন, অচিরেই বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্তি দিয়ে একটি অবাধ, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেয়া। কেননা শেখ হাসিনার অধীনে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে, তার কোনোটাই সুষ্ঠু হয়নি। ফলে সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্র প্রস্তুত হলেই নির্বাচনে যাবে বিএনপি।
বিএনপির হুমকির তোয়াক্কা না করে নির্বাচনমুখী গঠনমূলক রাজনীতির দিকেই ঝোঁক ছিল বেশি আওয়ামী লীগের। জনগনের আস্থাকে পুনরায় জয় করতে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন হিসাব কষছেন বলে রাজনৈতিক সূত্রগুলো মনে করছে। তাদের মতে, বিএনপিসহ সকল দলের অংশগ্রহণে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনকে মাথায় রেখেই এগোচ্ছে ক্ষমতাসীন দল। যে কারণে সাংগঠনিকভাবে শাক্তিশালী দল নিয়েই নির্বাচনী মাঠের লড়াইয়ে নামতে চায় আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা জানিয়েছেন, আপাতত বিএনপির আন্দোলনে নামার হুমকিকে অতটা আমলে নিচ্ছেন না তারা। এখন প্রধান কাজ হবে রাজনৈতিক মাঠ নিজের দখলে রাখা। সে জন্য বিএনপিকে কৌশলে নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি নিজেদের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করার নানামুখী কর্মসূচি সাজিয়েছে দলীয় হাইকমান্ড, যা সরাসরি দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করবেন। তবে বিএনপি কঠোর হলে আওয়ামী লীগও তা কঠোরভাবে দমন করবে বলেও জানা গেছে।
অন্যদিকে, নির্বাচনী রাজনীতির প্রস্তুতিতে পিছিয়ে নেই বিএনপিও। রমজানে আগেই দলের রাজনীতিতে অন্তত এই আভাস মিলেছে যে, দীর্ঘদিনের দুর্বলতা গুছিয়ে দল এখন অনেকটাই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। নেতাকর্মীরা মনোবল চাঙ্গা করার চেষ্টা চলছে। বিএনপির সূত্র জানায়, ঈদের পর নির্বাচনে সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের জন্য নির্বাচনী লেভেল পে¬য়িং ফিল্ড দাবি নিয়ে নতুন করে মাঠে নামা। সে জন্য বিশেষ কৌশলও নিয়েছে দলের হাইকমান্ড। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনা এবং নির্বাচনী লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের জন্য নতুন করে সহায়ক সরকারের রূপরেখা উপস্থাপন করার লক্ষ্যে সম্প্রতি তারেক রহমানের সাথে বৈঠক করেছেন মির্জা ফখরুল। এই রূপরেখায় বেগম জিয়ার মুক্তি এবং একটি সর্বদলীয় সরকার ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচন করার প্রস্তাবনা থাকছে।