
নারায়ণগঞ্জ সমাচার:
নারায়ণগঞ্জ সদর ও বন্দর উপজেলা নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন। স্বাধীণতা পরবর্তী সময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে দুইবার করে জয়লাভ করেছে বিএনপি ও আওয়ামীলীগ। আর জাতীয় পার্টি ৪ বার জয়লাভ করে নিজেদের শক্ত ঘাটি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। যদিও গত দুবার জোটের কারণে এই আসনটিতে জাপাকে ছাড় দেয় আওয়ামীলীগ। তবে, প্রতিবারের ন্যায় এবারও ছাড় না দেয়ার কথা জানান আওয়ামীলীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
রাজণৈতিক, ভৌগলিক, সামাজিক ও ব্যবসায়ীক দিকে নিয়ে নারায়নগঞ্জ-৫ আসনটি নারায়নগঞ্জবাসীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা নারায়নগঞ্জ সদর ও বন্দর উপজেলা রয়েছে এই আসনের সীমানার মধ্যে। এই আসনটির অধিকাংশ জায়গাই সিটি কর্পোরেশন এরিয়াভুক্ত। জেলার মূল শহর হিসাবে পরিচিতি চাষাড়া, ২নং রেল গেইট, দেশের অন্যতম বৃহৎ পাইকারী বাজার নিতাইগঞ্জ, জেলার প্রধান ২টি সরকারী হাসপাতালসহ প্রায় সকল সরকারী প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় এই আসনটিতেই বিদ্যমান। সবদিক বিবেচনায় নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনটি নারায়ণগঞ্জের প্রাণকেন্দ্র হিসাবেই পরিচিতি।
জানা গেছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাকী আর মাত্র কয়েক মাস। আগামী নির্বাচনে কারা হবে নির্বাচনী আসনগুলোর প্রার্থী, পুরোনোরাই থাকবেন নাকি নতুন করে দেয়া হবে প্রার্থী তা নিয়ে রাজণৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরে চলছে নানা বিচার-বিশ্লেষণ। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের অন্যান্য আসনের মতো নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে সঠিক প্রার্থী বাছাই করতে কাজ করছে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো। আসনটিতে কারা পাবেন আওয়ামীলীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির মনোনয়ন এ বিষয়ে রাজণৈতিক মহলসহ সর্বমহলে শুরু হয়েছে নানা গুঞ্জনের।
গুঞ্জনের সুত্র ধরে জানা গেছে, এই আসনটিতে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ণ চাইতে পারেন অন্তত ২জন। তবে, জোটগত সম্পর্ক না থাকলে সরকারী দল তথা আওয়ামীলীগ থেকে এই আসনে ৩ থেকে ৪জন মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে জানা গেছে। বিএনপি থেকেও অন্তত ৩জন মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।
তবে, বরাবরের মতো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও অনেকটা হেভিওয়েট প্রার্থী সংকটে ভুগছে আওয়ামীলীগ। ইতিমধ্যেই আওয়ামীলীগের বেশ কয়েকজন নেতা এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে জানা গেছে। এরা হলেন, মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও জেলা যুবলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদির, আওয়ামীলীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য এড. আনিসুর রহমান দিপু।
এদিকে, মনোনয়নের বিষয়ে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন বর্তমান সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান ও প্রয়াত সংসদ সদস্য নাসিম ওসমানের স্ত্রী পারভীন ওসমান। তারা সম্পর্কে দেবর-ভাবী। যদি কোনো কারণে পারভীন ওসমান এ আসনে মনোনয়ণ নাও চান, তাহলে তার পুত্র আজমেরী ওসমান চাইবেন মনোনয়ন এটা প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায়।
অপরদিকে, বিএনপি থেকে এই আসনে প্রার্থী হতে পারেন মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি এড. আবুল কালাম। যিনি এর আগে দুবার এ আসনে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। তবে, শারীরিক অসুস্থ্যতা ও জোটগত কারণে গতবারের ন্যায় এবারও এস এম আকরাম হতে পারেন বিএনপি জোটের প্রার্থী। এছাড়া মহানগর বিএনপির বর্তমান আহবায়ক ও ২০১৬ সালের সিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী থাকা এড. সাখাওয়াত হোসেন খানও এ আসনে মনোনয়ন পাওয়ার একজন শক্ত দাবিদার। একইসাথে মহানগর বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি আতাউর রহমান মুকুলও এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।
এদিকে, জাতীয় পার্টির তৃণমূল নেতাকর্মীরা ২টি ভাগে বিভক্ত হয়ে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে কথা বলছেন। পারভীন ওসমান সমর্থকদের দাবি, এই আসনটিতে সবচেয়ে অবহেলিত ব্যক্তি পারভীন ওসমান। তাকে অথবা তার সন্তান আজমেরী ওসমানকে একবার হলেও জাপার মনোনয়ন দিয়ে এমপি হওয়ার সুযোগ করে দেয়া উচিত।
তাদের কারো কারো মতে, প্রয়াত এমপি নাসিম ওসমান ও শামীম ওসমানের কাধে ভর দিয়ে গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের অন্যতম শীর্ষ সংগঠন বিকেএমইএ এর সভাপতি সেলিম ওসমান এই আসনটিতে এমপি হয়ে যান। নাসিম ওসমানের মৃত্যুর পর কে পাবে এই আসনে মনোনয়ন, সেলিম ওসমান নাকি পারভীন ওসমান তা নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ দেখা দেয়। পরে শামীম ওসমানের হস্তক্ষেপে সেলিম ওসমানকে প্রার্থী ঘোষণা করেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ।
বিপরীতে, আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা বহুদিন ধরেই এ আসনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী চাইছেন। জোট না থাকলে ক্ষমতাসীণ আওয়ামীলীগ যে জাতীয় পার্টিকে খালি মাঠে গোল দিতে দিবে না তা একেবারে স্পষ্ট। আওয়ামীলীগ থেকে ইতিমধ্যেই আনোয়ার হোসেন এমপি হিসাবে দেখার আবেদন জানিয়ে পোষ্টার সাটিয়েছে তার সমর্থকরা। পাশাপাশি বিগত বেশ কয়েকবার প্রার্থী হতে চাওয়া জেলা যুবলীগ সভাপতি আব্দুল কাদিরও আছেন মনোনয়ণ প্রত্যাশীদের তালিকায়। এছাড়া আওয়ামীলীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য এড. আনিসুর রহমান দিপুও নৌকার মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে, সকল দলই চাইছে পরিচ্ছন্ন, গোছানো ও ক্লিন ইমেজের জনপ্রিয় ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিতে। দলীয় বিবেচনায় কারা হবেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ-বিএনপি ও জাপার প্রার্থী তার জন্য আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে আসনটির সাধারণ জনগন ও দলীয় নেতাকর্মীদের।