
নারায়ণগঞ্জ সমাচার:
বাচ্চাদের শরীরে সুষম খাদ্যের ঘাটতি পূরণে ও তাদের সুস্থ রাখতে প্রতিদিন এক গ্লাস দুধ, ১টি ডিম ও কলা খাওয়াতে হবে। বাবা-মাদের এটা জানতে হবে, প্রতিদিন দুধ খাওয়ালে একসময় তারা কিন্তু আর দুধ খেতে চায় না। তাই প্রতিদিন দুধ না দিয়ে দুধ-ডিম দিয়ে পুডিং তৈরি করে বা দুধ-ডিম-কলা দিয়ে পিঠা সহ ভিন্ন ভিন্ন আইটেমের খাবার খাওয়ালেও কিন্তু বাচ্চারা যথেষ্ট পুষ্টি পাবে। তাই বাবা-মা’দেরকে বিশেষ করে মায়েদেরকেও স্মার্ট হতে হবে, বাচ্চাদের বেশী বেশী করে দুগ্ধজাত খাবার খাওয়াতে হবে।
“টেকসহ দুগ্ধ শিল্প, সুস্থ মানুষ, সবুজ পৃথিবী” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিশ^ দুগ্ধ দিবস-২০২৩ উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা ও ছাত্রছাত্রীদের মাঝে দুধ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেলিম ওসমান একথা বলেন। বুধবার সকালে সৈয়দপুর বঙ্গবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয়ের ২সহস্রাধিক শিক্ষার্থীদের মাঝে দুধ বিতরণ করা হয়।
সেলিম ওসমান বলেন, জ্ঞান-বুদ্ধি ও মেধা সম্পন্ন হতে হলে নিয়মিত দুধ খেতে হবে। দুধ খেলে ক্যান্সার সহ নানা রোগ থেকে বাঁচা যায়। নিয়মিত দুধ খেলে দিনরাত ২৪ ঘন্টা পড়তে হবে না, ভালোভাবে অল্প পড়লেও সেই পড়া মনে থাকবে। আজকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে লক্ষ-কোটি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলি, এটার প্রয়োজনীয়তা ছিলো। আপনি এটা উৎসাহিত করছেন, এটাকে আপনি সহযোগীতা করছেন। আমরা যদি নিয়মিত দুধ খাই, তাহলে গরুর সংখ্যা বাড়বে, গরুর সংখ্যা বাড়লে কিছু ষাড় গরুও হবে। ষাড় গরু বাড়লে মাংসের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, ফলে মাংসের ঘাটতিও কমবে। দুধ মানে কিন্তু শুধু গরুর দুধ নয়, দুধ মানে দুধ। সেটা মহিষের দুধও হতে পারে। আজকাল কিন্তু গরুর দুধের চেয়ে অনেক উন্নত মহিষের দুধ। মহিষ পালতে খাদ্য খরচ অনেক কম লাগে। ৩ লিটার গরুর দুধ খেলে যা হবে, ১লিটার মহিষের দুধ খেলেই তা হবে। এটার মধ্যে ভিটামিন অনেক বেশী, আর মহিষের মাংসের মধ্যে কোলেষ্টেরল নাই।
তিনি বলেন, আমি নিশ্চিত উপস্থিত বাচ্চারা সবাই বুঝতে পেরেছো, দুধ খেলে কি হয়। কিন্তু এটা জেনে লাভ কি, গরুর দুধটা পাবো কোথায়। আম-কাঠালের সিজনে মা-বাবারা দুধ কিনে না। তারা বলে, দুধ তো বারো মাসই পাওয়া যায়, এখন আম-কাঠাল খাবো। ৯০ টাকা কেজি দুধ না কিনে ১৮০টাকা কেজি ভালো আম কিনবে। এই আম খেয়ে তার কি লাভ হবে, আর দুধ খেয়ে কি লাভ হবে তাই বাবা-মায়েরা এখনো জানে না। তাই তাদেরকে জানতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আপনারা জানেন একসময় আমার আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো ছিলো না। আমার মেয়ে যখন ছোট ছিলো তখন হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়লো। ঠান্ডা-সর্দি লেগেই থাকতো। ডাক্তাররা যে ওষুধ দেয়, সে ওষুধ কেনার মতো টাকা আমার কাছে ছিলো না। তখন একজন আমাকে বুদ্ধি দেয়, আপনে একটা ছাগল কিনেন, আর বাচ্চাকে সেই ছাগলের দুধ খাওয়ান। দেখবেন সর্দি-কাশি, ঠান্ডা সব নাই হয়ে যাবে। তখন আমি ৮০০ টাকা দিয়ে একটি ছাগল কিনি, ছাগলটা ভালো দুধ দিতো। সেই যে ছাগলের দুধ মেয়েকে খাওয়ালাম, আল্লাহর রহমতে ৬ মাসের মধ্যে আমার মেয়েটা যে ভালো হলো, আজ পর্যন্ত আর অসুস্থ হয় নি। এই ছাগল থেকেই কিন্তু আজকের আমার কাছে এই মুহুর্তে ৬শত দুগ্ধজাত গরু আছে। আমি প্রতিদিন আড়াই হাজার লিটার গরুর দুধ বিক্রি করতে পারি।
বাঙ্গালীরা ভালো কাজ করতে পারে উল্লেখ করে সেলিম ওসমান বলেন, আজকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দুগ্ধজাত খাবার সম্পর্কে বাচ্চাদের সচেনত করার এ ডাক কেন দিয়েছেন। কারণ বাঙ্গালী পারে, ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর এক ডাকে ৯ মাসে একটা দেশ স্বাধীণ করে ফেললো। ৯ মাসে একটা বাচ্চার জন্ম হয়নি। ৯ মাসে একটি মানচিত্র নিয়ে আসছে, স্বাধীণতা নিয়ে আসছে। আর আজকে আমরা স্বাধীণ। এই স্বাধীন দেশে আমি যা করবো আমার ইচ্ছানুযায়ী করবো, আলোচনার মাধ্যমে করবো। আমি অপরাজনীতি করবো। এলাকার মানুষ একে অপরের সাথে ঝগড়া করবো না। যুদ্ধের সময় আমাদের ছিলো সাড়ে ৭ কোটি মানুষ। আর এখন প্রায় ২০ কোটি মানুষ। কেউ কি না খেয়ে মারা গেছে। করোনা গেলো, এতো বড় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে। কেউ কি না খেয়ে মারা গেছে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে, কিন্তু না খেয়ে কেউ মারা যায় নাই।
স্কুলের পিছনে গরুর খামার করার লক্ষ্যে এডিসি জেনারেলকে উদ্দেশ্য করে সংসদ সদস্য বলেন, এটা তো সরকারী স্কুল, এখানে আমাদের কিছু করার নেই। তারপরও এডিসি জেনারেল সাহেব এখানে আছেন, আমি তার কাছে বলবো স্কুলের পিছনে ৪৫ শতাংশ জায়গা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। আপনি হয়তো বলবেন, ফান্ড পাবো কোথায়, ফান্ড পেতে তো অনেক সময় লাগবে। আপনারা চাইলে ফজর আলীর সহযোগীতা নিতে পারেন। আমি তাকে চিনি, তিনি অত্যন্ত ভালো মানুষ। এরকম মানুষ পাওয়া যায় না। এই ৪৫ শতাংশ জায়গায় প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের মাধ্যমে একটি গরুর খামার গড়ে তোলা হবে। গরুর খামার গড়ে তোলার জন্য যা যা করার সম্পূর্ণটা করবো। আমার খামার থেকে ৩টি গাভী গরু ও ৩টি ষাড় গরু কালেক্ট করা হবে। দুধ দেয়া গরুর কোনো সমস্যা হলে যাতে ষাড় গরু বিক্রি করে সেই সমস্যা সমাধান করা যায়।
প্রতিটি ইউনিয়নে গরুর খামার করা হবে উল্লেখ করে সেলিম ওসমান বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্কুলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ডাকে আমরা একটা গরুর খামার দিবো, যেটা থেকে দুধ উৎপাদন হবে। আমার ছাত্র-ছাত্রীরা জানতে পারবে গরু কি খায়, কিভাবে, কখন টিকা দিতে হয়, কখন তাকে চিকিৎসা দিতে হয়। আমরা একটি সিদ্ধান্তে চলে আসলাম, প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ভালো মানুষ, ডিসি সাহেব ভালো মানুষ, আমার চেয়ারম্যান অত্যন্ত ভালো মানুষ। একটা জায়গায় আপনারা টিম করে ফেলেন। ইনশাআল্লাহ দেখবেন আমার প্রত্যেকটা ইউনিয়নে আল্লাহর রহমতে আমি একটা করে গরুর খামার হবে। মানুষ যদি লাভটা বুঝতে না পারে, তাহলে গরু কেন পালবে?
উপস্থিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে কোনো একজনকে এসে দুগ্ধজাত খাবার খেলে কি উপকার হয় তা মাইকে বলতে বলেন সেলিম ওসমান এমপি। ৮ম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থী এসে দুগ্ধজাত খাবারের উপকারীতা সম্পর্কে বললে, সেলিম ওসমান খুশী হয়ে এ শিক্ষার্থীকে একটি ছাগল কেনার জন্য ১০ হাজার টাকা উপহার দেন।
জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা বাসনা আকতারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. এ এফ এম মশিউর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক সাকিব আল রাব্বী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমীর খসরু, নাসিক ১৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কামরুল হাসান মুন্না, আওয়ামীলীগ নেতা জসিম উদ্দিন প্রমুখ।