
নারায়ণগঞ্জ সমাচার:
নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে ও নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে শিক্ষার্থীদেরকে মুক্তিযুদ্ধের বীরত্ব গাথা গল্প শোনালেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা।
গতকাল শনিবার (০৪ জুন) সকাল ৯টায় “বীরত্বগাথা শুনানো” শীর্ষক এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীণ জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)। নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানটি চলে দুপুর ১টা পর্যন্ত।
দীর্ঘ ৪ ঘন্টাব্যাপী সময় নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাথা, দেশের জন্য আত্মত্যাগ, ৭ই মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণ, ২৫ মার্চের গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধের টানা নয় মাসের ঐতিহাসিক দিনগুলোর কথা, জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া ও দেশ স্বাধীন করার কথা শিক্ষার্থীদের কাছে তুলে ধরেন মুক্তিযোদ্ধারা। অনুষ্ঠানে সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, আইইটি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়, নারায়ণগঞ্জ হাই স্কুল এন্ড কলেজ, গনবিদ্যা নিকেতন উচ্চ বিদ্যালয় ও আদর্শ মহিলা আলিম মাদ্রাসার প্রায় ৩ শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
এসময় মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ঘটনাবলী ও ইতিহাস তুলে ধরেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই, যুদ্ধকালীণ কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মিজানুর রহমান বাচ্চু, নারী বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরিদা মহিউদ্দিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আইয়ুব আলী, সদর উপজেলা মুক্তিযুদ্ধ কমান্ডের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান ভুইয়া জুলহাস, জেলা মুক্তিযুদ্ধ সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা এড. নুরুল হুদা।
অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের জন্ম হয়নি, তোমাদের অনেকের বাবা-মার জন্ম হয়নি। মুক্তিযোদ্ধারা বলে গেছেন, তোমরা যখন বড় হবে, তখন হয়তো মুক্তিযোদ্ধারা কেউ জীবিত থাকবে না। এই মুক্তিযোদ্ধাগণ মুক্তিযুদ্ধ করে আমাদেরকে একটি দেশ উপহার দিয়েছে। আর এই যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলো, ৩০ লক্ষ মানুষ রক্ত দিয়ে আমাদেরকে এই লাল সবুজের পতাকা এনে দিয়েছেন। যাতে আমরা একটি স্বাধীণ দেশে স্বাধীণভাবে জীবনযাপন করতে পারি। কেননা ১৯৭১ সালের আগে এই দেশটি আমদের ছিলো না। তাই এই মানুষগুলো তথা মুক্তিযোদ্ধারা যখন কথা বলে তখন আমাদের সকলকে শুনতে হবে। কারণ এই মানুষগুলোর কথা যদি না শুনি, সেই আদর্শ যদি ধারণ না করি তাহলে আমরা প্রকৃত বাঙ্গালী না। তাহলে আমরা বেঈমান হয়ে যাই, নতুন প্রজন্ম যদি ঐ প্রজন্মকে অস্বীকার করে তাহলে আমরা আর বাঙ্গালী থাকি না। এই জন্যই জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলর আজ এতো সুন্দর একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। কাজেই মুক্তিযোদ্ধাদের কথা আমাদের শুনতে হবে।
এতে আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সাকিব আল রাব্বি, এনডিসি (নেজারত ডেপুটি কালেক্টর) মোহাম্মদ রবিন মিয়া, জেলা শিল্পকলা অফিসার রুনা লায়লা প্রমুখ।
মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা গল্প শোনার পরে মুক্তিযুদ্ধের সাথে জড়িত নানা ঘটনাবলী থেকে সাজানো ১০টি প্রশ্ন নিয়ে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের মাঝে কুইজ প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সঠিক উত্তরদাতা ১০ শিক্ষার্থীকে বই উপহার দেয়া হয় জামুকা’র পক্ষ থেকে।