নারায়ণগঞ্জে আ.লীগের সহযোগী-ভাতৃপ্রতীম সংগঠনের হ-য-ব-র-ল অবস্থা

25
নারায়ণগঞ্জে আ.লীগের সহযোগী-ভাতৃপ্রতীম সংগঠনের হ-য-ব-র-ল অবস্থা

নারায়ণগঞ্জ সমাচার:

নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভাতৃপ্রতীম আট সংগঠনে চলছে হ-য-ব-র-ল অবস্থা। কোনোটির কমিটির মেয়াদ নেই, কোনোটি পায়নি পূর্ণাঙ্গ কমিটি, কোনো সংগঠনের কমিটি নেই। কেন্দ্রীয় কমিটি ও ঢাকার পরেই অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগওে আওয়ামীলীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনে এমন এলোমেলো অবস্থা প্রভাব ফেলছে মাঠের কর্মীদের ওপর।

এছাড়া সংগঠনকে প্রধান্য না দিয়ে দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে রাজনীতি করার কারণে আরও বেশী সংগঠনগুলোকে আরও বেশী দুর্বল করে ফেলেছে সংগঠনের নেতারা। এসব একারণেই সংগঠন এলোমেলো ও গ্রুপিংয়ে চলছে অভিযোগ করেছেন এসব সংগঠনের নেতারা।

রাজধানীর সবচেয়ে নিকটবর্তী ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জেলা হিসেবে পরিচিত নারায়ণগঞ্জে দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলো এভাবে পরিচালিত হওয়ায় তৃণমূল নেতাকর্মীরা এই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, কৃষক লীগ, তাঁতী লীগের পদ-প্রত্যাশী নেতাকর্মীরাও হতাশায় ভুগছেন।

বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের অঙ্গসংগঠনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে ধরা হয় যুবলীগকে। তবে, দীর্ঘ এক যুগেরও বেশী সময় ধরে হচ্ছে না জেলা ও মহানগর যুবলীগের সম্মেলন। নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এখন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। আর সভাপতি ছিলেন জেলা আওয়ামীলীগের বিগত কমিটির সহ-সভাপতির দায়িত্বে। নতুন পুর্ণাঙ্গ কমিটিতেও গুরুত্বপূর্ণ পদ পাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে, এখনো তাদের ঘাড়েই ১৪ বছরের মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা যুবলীগের কমিটি।

দলীয় সুত্রে জানা গেছে, ২০০৬ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদির ও এড. আবু হাসনাত মো. শহিদ বাদল যথাক্রমে জেলা যুবলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। এর পর দীর্ঘ ১৬ বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত জেলা যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় নি। একইভাবে ২০০৫ সালে গঠিত শহর যুবলীগের সভাপতি হন শাহাদাত হোসেন ভুইয়া সাজনু ও সাধারণ সম্পাদক হন আহাম্মদ আলী রেজা উজ্জল। ১৪ বছর আগের শহর যুবলীগের কমিটি দিয়েই চলছে মহানগর যুবলীগের কার্যক্রম। দীর্ঘ ১৪ বছরেও যুবলীগের সম্মেলন না হওয়ায় নতুন পদপ্রত্যাশীদের হতাশা বাড়ছে দিন দিন। কবে নাগাদ সম্মেলন হবে, সেটিও নিশ্চিত নয় কেউ।

ছাত্রলীগ সুত্রে জানা যায়, জেলা-মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের পর থেকেই নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে ছাত্রলীগের কতিপয় নেতাকর্মীরা। ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক সেবনের ছবি ভাইরাল হয় ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মীদের। জাল দলিল, ষ্ট্যাম্প, জুয়ারী শাহজাহান কেলেঙ্কারীসহ কিছু অনিয়ম ও অনৈতিক কাজের অভিযোগ উঠে তাদের বিরুদ্ধে। সর্বশেষ গত বছরের শুরুতে মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি বাতিল করা হয়। দেড় বছরের বেশী সময় অতিবাহিত হলেও নতুন কোনো কমিটি ছাড়াই ঢিলেতালে চলছে মহানগর ছাত্রলীগের কার্যক্রম। নতুন নেতৃত্ব প্রত্যার্শীরা অনেকটাই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছে। জেলা ছাত্রলীগেরও মেয়াদ শেষ হয়েছে অনেক আগে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ছাত্রলীগের জেলা-মহানগর শাখার মেয়াদ এক বছর। ২০১৯ সালের ২৮ জুলাই অনুমোদন প্রাপ্ত মহানগর ছাত্রলীগের কমিটির মেয়াদ শেষ হয় ২০২০ সালের ২৮ জুলাই। ফলে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় মহানগর ছাত্রলীগ কমিটির কমিটি বিপুপ্ত ঘোষণা করা হলেও জেলা ছাত্রলীগের পুরোনো কমিটিই এখনো বহাল আছে। ফলে হতাশায় দিন কাটাচ্ছে পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীরা।

২০২২ সালের ১৬ই জানুয়ারী নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সর্বশেষ নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর পক্ষে কাজ না করার অভিযোগে নির্বাচনের দিন বিলুপ্ত করা হয়েছিলো মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের কমিটি। একইসাথে জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের নিস্ক্রীয় আহবায়ক কমিটিও বাতিল ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকেই নেতৃত্ব সংকটে পড়ে দলীয় কর্মকান্ডে পিছিয়ে পড়েছে সংগঠনটি। তবে, আগামী ৩১ জুলাই জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সম্মেলনের দিন ঘোষণার পর খেকে নেতৃত্বের প্রতিযোগীতায় পদ-পদবী প্রত্যাশীদের কিছুদিন যাবৎ রাজপথে দেখা যাচ্ছে।

মহানগর শ্রমিক লীগের কমিটিও বিলুপ্ত করা হয় ২০২২ সালের সিটি নির্বাচনের সময়ে। মূলত একই অভিযোগে এই কমিটিগুলো বিলুপ্ত করা হয়। এর পর থেকেই নিস্ক্রীয় নারায়ণগঞ্জ মহানগর শ্রমিকলীগের নেতাকর্মীরা। জেলা কমিটি নিয়ে ব্যাপট নাটকীয়তা দেখা গেছে। একটি পক্ষ নিজেদের পক্ষে কমিটি আনলেও পরবর্তীতে আবার আরেক পক্ষের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভেঙ্গে দেয়া হয় সেই কমিটি। ফলে দীর্ঘদিন ধরেই কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ে না জেলা-মহানগর শ্রমিকলীগের।

জেলা-মহানগর কৃষকলীগের আহবায়ক কমিটি গঠন করা হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে তেমন কোনো আগ্রহ নেই দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের। আর তাই তো আহবায়ক কমিটি হওয়ার পর থেকে অদ্যবধি দলীয় আন্দোলন কর্মসূচীতে জোরালো কোনো ভুমিকা দেখা যায়নি জেলা-মহানগর কৃষকলীগ নেতৃবৃন্দের।

অপরদিকে, দীর্ঘদিনের পুরোনো কমিটি দিয়ে চলছে আওয়ামী মহিলা লীগ, যুব মহিলা লীগ ও তাতী লীগের কার্যক্রম। মহিলা আওয়ামীলীগের প্রফেসর শিরিন বেগম, তাতী লীগের এড. হাসান ফেরদৌস জুয়েল ছাড়া সংগঠনগুলোর অন্য কোনো নেতা-নেত্রীকে জেলা-মহানগর আওয়ামীলীগের তৃণমূলের কর্মীরা তো দুরে থাক নেতৃবৃন্দও সঠিকভাবে চিনে কিনা তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। ফলে, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামীলীগকে সুসংগঠিত করতে সহযোগী ও অঙ্গসংগঠনগুলোকে ঢেলে সাজানোর পক্ষে মত দিয়েছেন রাজণৈতিক বিশ্লেষক মহল। তা নাহলে আগামী নির্বাচনে এজন্য আওয়ামীলীগকে চড়া মূল্য দিতে হতে পারে বলেও মনে করেন তারা।