
নারায়ণগঞ্জ সমাচার:
বিগত ১০ বছর ধরে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড করে ও মানুষের সাথে মিশে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী লিয়াকত হোসেন খোকা। বিপরীতে, দীর্ঘ ১০ বছর পর আওয়ামীলীগের সমর্থন পেয়ে আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে নৌকার প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত এমনটাই জানায় স্থানীয়রা।
স্থানীয়দের মতে, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে দুইবার এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে লিয়াকত হোসেন খোকাকে কখনোই অহংকার করতে বা কারো সাথে জোর জুলুম করতে দেখা যায় নি। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত সবাই খোকার কাছে গুরুত্ব পেয়েছেন সমানতালে, কখনো ভেদাভেদ করেন নি কারো সাথে। যার যখন দরকার পড়েছে, সে তখনই দেখা করে নিজের সমস্যার কথা বলেছেন অবলীলায়। একজন সংসদ সদস্য হিসেবে, একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে নিজের সাধ্যের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে চেষ্টা করেছেন সকলের জন্য।
উন্নয়নের বেলায়ও কোন এলাকায় বিএনপির আধিপত্য, কোন এলাকায় আওয়ামীলীগের আধিপত্য, কোন এলাকায় জাতীয় পার্টির আধিপত্য তা দেখেন নি খোকা। উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকায় কাজ করেছেন সমানতালে। রাস্তা-ঘাট, ব্রীজ-কালভাট, হাইস্কুল-প্রাইমারী স্কুল, কলেজ-মাদ্রাসা, মসজিদ-মন্দিরের উন্নয়নে অবদান রেখেছেন তিনি। তাই নির্বাচনকে সামনে রেখে যেখানেই প্রচারণায় যাচ্ছেন, সেখানেই অকৃত্রিম ভালোবাসা ও সমর্থন পাচ্ছেন এই সংসদ সদস্য। ভোটাররা প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে লিয়াকত হোসেন খোকাকেই আবার এমপি নির্বাচিত করবেন তারা।
বিপরীতে, ২০০৮ সালে এমপি থাকা অবস্থায় নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়া আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাতের অবস্থান জনপ্রিয়তার তলানীতে এমনটাই দাবি স্থানীয়দের। তাদের মতে, এমপি থাকাকালীণ সময়ে সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া, ফুটপাত, নদীসহ সকল সেক্টর থেকে তার স্ত্রীর নামে ব্যাপক চাঁদাবাজীর কারণে বর্তমানে বেশ বেকায়দায় রয়েছেন নৌকার এই প্রার্থী। কেননা, সাধারণ ভোটারদের দাবি, কায়সার হাসনাত জয়ী হলে আবারও সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হবে সোনারগাঁ। তিনি জয়ী হলে পাড়া-মহল্লায় সংর্ঘষ এমনকি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কাও করছেন অনেকে।
এসব বিষয়কে মাথায় রেখে ভোটাররা যখন বর্তমান সংসদ সদস্যকে আগামী নির্বাচনে আবারও তাদের এমপি বানাতে প্রস্তুত, ঠিক সেই সময়ে পেশী শক্তি ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে নৌকার প্রার্থী ও তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে। নিজেদের জনপ্রিয়তা তলানীতে জেনে, নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রতিপক্ষ লাঙ্গলের প্রচারণায় বাধা দিচ্ছে তারা। এছাড়া, দলীয় প্রধান ছাড়াও স্থানীয় নেতাকর্মীদের ছবি সম্বলিত বড় বড় ব্যানার-ফেস্টুন, তোরণ, গেইট নির্মাণ করে ধারাবাহিকভাবে নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে।
সর্বশেষ, গত মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) সনমান্দি ইউনিয়নের হরিহরদী গ্রামে ভোটারদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করতে এসে নৌকা প্রতীকের সমর্থকদের বাধার মুখে পড়েন লাঙ্গলের সমর্থকরা। এসময় নৌকার সমর্থকরা উত্তেজিত হয়ে পড়লে সংসদ সদস্য খোকা তাদেরকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন এবং নৌকার প্রার্থী কায়সার হাসনাতের সাথে কথা বলবেন বলেও জানান। তবে, এতেও ক্ষান্ত হয়নি নৌকার সমর্থকরা। তারা দফায় দফায় তেড়ে এসে মারধরের চেষ্টা করে লাঙ্গলের সমর্থকদের।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, জাপার প্রার্থী লিয়াকত হোসেন খোকা উপজেলার হরিহরদী গ্রামে প্রচারণায় আসলে সেখানে নৌকার ক্যাম্পে থাকা সমর্থকরা উচ্চস্বরে মাইক বাজিয়ে নৌকার পক্ষে শ্লোগান দিতে থাকে। এসময় স্থানীয় মুরুব্বীরা তাদের মাইকের শব্দ কম করার আহবান জানালে নৌকার সমর্থকরা স্থানীয়দের উপর চড়াও হয় এবং উভয় পক্ষে বাক-বিতন্ডার শুরু হয়। হরিহরদী গ্রামের তালেব আলীর ছেলে জাকারিয়া, একই গ্রামে আক্তার হোসেনের ছেলে সাজ্জাদ ও ইঙ্গরাজুলের ছেলে কবির ও তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা স্থানীয়দের সাথে চরম দুর্ব্যবহার করতে থাকে। বিষয়টি জানতে পেরে সেখানে উপস্থিত হন সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা। তিনি নৌকার সমর্থকদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে বলেন, আমি নৌকার প্রার্থী কায়সার হাসনাতের সাথে কথা বলবো। তোমরা বাড়াবাড়ি করো না। জনগন যাকে ভোট দিবে ০৭ তারিখ সেই জয়ী হবে। এভাবে প্রচারণায় বাধা দিয়ে কেউ বিজয়ী হতে পারবেনা।
এসময় সাধারণ জনতার অনেকে বলেন, নির্বাচনের জয় পরাজয় এখনো বহুদুর। এরই মাঝে কায়সার হাসনাতের সমথর্করা পেশীশক্তি ব্যবহার করছে, সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধার সৃষ্টি করছে। এরা জয়ী হলে তো সোনারগায়ের মানুষের ঘুম হারাম হয়ে যাবে। ফলে, নৌকার সমর্থকদের এহেন কর্মকান্ডে লিয়াকত হোসেন খোকাই লাভবান হচ্ছে বলে মনে করেন তারা। কেননা, সাধারণ মানুষ শান্তি চায়, আর তারা জানে লিয়াকত হোসেন খোকা শান্তি প্রিয় মানুষ, কারো সাথে খোচাখুচি বা ঝগড়াঝাটির রেকর্ড খোকার অতীতেও ছিলো না, ভবিষ্যতেও হবে না বলে মনে করেন তারা।
লাঙ্গলের প্রচারণায় সমর্থকদের বাধার বিষয়ে কথা বলতে যোগাযোগ করা হলে নৌকার প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত এ প্রতিবেদকের উপর রাগান্বিত হয়ে বলেন, শীতলক্ষা পত্রিকা তো আমার নামে বদমানই লেখতাছে। এবারও আপনাদের যা মনে চায় তা লিখে দেন। শীতলক্ষা তো শুধু আমার বদনামই লিখে। পরবর্তীতে তিনি বলেন, আমি ওখানে উপস্থিত ছিলাম না, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আর এমপি সাহেবের সাথে আমার কথা হয় নাই।
এর আগে, আচরণ বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে গত শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) নৌকার প্রার্থী ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার নিকট আবেদন করেছিলেন লিয়াকত হোসেন খোকা। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে নির্বাচনী এলাকা নং-২০৬, তথা নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যপকভাবে নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘন করা হচ্ছে। তাই এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহনের আবেদন জানান তিনি।
এদিকে, ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে বিগত সময়ে নিজের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে ভোট চান লিয়াকত হোসনে খোকা। সনমান্দি ইউনিয়নের ভোটাররাও তাকে স্বাগত জানায়। ভোটাররা এসময় বলেন, আপনার ভোট চাইতে হবে না। বিগত সময়ে আপনি যে উ্ন্নয়ন করেছেন তার জন্য আমরাই আপনার জন্য ভোট চাইবো, লাঙ্গল মার্কায় ভোট দিবো। অনেকে বলেন, আমরা চাইনা সোনারগায়ে পুনরায় সন্ত্রাসবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠুক, তাই আমাদের ভোট লাঙ্গল মার্কায়ই দিবো।
উল্লেখ, গত ১৯ ডিসেম্বর, নৌকার প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনে অংশ নেয়ায় এবং মহাসড়ক দখল করে নির্বাচনী প্রচারণা করায় আওয়ামীলীগের ১১ জন চেয়ারম্যান ও জনপ্রতিনিধিকে শোকজ করে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি।