
নারায়ণগঞ্জ সমাচার:
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান বলেছেন, আপনারা জানেন, আপনাদের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর সাথে আমার অত্যন্ত সু-সম্পর্ক, ও আমার অনেক ছোট। আপনারা সবাই সহযোগীতা করবেন সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে। যেখানে সেখানে ময়লা ফেলবেন না, আমরা একসাথে বসবো, একসাথে কাজ করবো। আমি ইউনিয়নগুলোর কাজ করতে পেরেছি, ওখানে কোনো কাঁচা রাস্তা নাই। আমি চেষ্টা করবো, সিটি কর্পোরেশনের প্রত্যেকটা ওয়ার্ডে যেন কাজ করতে পারি। আপনাদের সাথে বসবো, কোথায় কি সমস্যা আছে তা নিয়ে। সিটি কর্পোরেশনের মানুষকে যেন আমরা সুখ দিতে পারি এই বিষয়ে আমি ওর সাথে কথা বলে তারপর আমি নির্বাচনে নেমেছি। কোনো দলাদলি থাকবে না, আমি চেষ্টা করবো এই বৃদ্ধ বয়সে, সবাইকে একসাথে করে আমার সিটি কর্পোরেশনের মানুষ যাতে ভালো থাকতে পারে। প্রয়োজনে আমরা নারায়ণগঞ্জকে মেট্রোপলিটন সিটি বানাবো ইনশ্আাল্লাহ।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম সেলিম ওসমানের সমর্থনে নারী উদ্যোক্তা, নারী সংস্থাসহ নারী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় সভায় তিনি একথা বলেন। সাবেক সংসদ সদস্য এড. হোসনে আরা বেগম বাবলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় উপস্থিত ছিলেন তার স্ত্রী নাসরিন ওসমান ও তার বোন নিগার ওসমান। সোমবার (০১ জানুয়ারী) বিকেলে নগরীর ১নং রেল গেইট এলাকাস্থ এস এম মালেহ রোডে সেলিম ওসমানের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সেলিম ওসমান বলেন, বন্দরের শান্তির চর আমি প্রধানমন্ত্রীর সাথে চেয়েছিলাম, উনি আমাকে ২১ দিনের মধ্যে বরাদ্দ দিয়েছেন। শান্তিরচরে যদি আমরা নীট পল্লী করতে পারি, তাহলে আমার বন্দরের ২০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। আমরা যদি নবীগঞ্জ দিয়ে ব্রীজটা চালু করতে পারি, তাহলে নারায়ণগঞ্জ আর বন্দরের মধ্যে কোনো তফাৎ থাকবে না।
নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি জানি মহিলারা ভোট দিতে যাবে, আর মহিলারা ভোট দিতে গেলে ঘরের পুরুষের ভোট না দিলে খবর আছে। নির্বাচনের সময় তো নির্বাচন হবেই। নির্বাচনে শুধুমাত্র ভোটটা দিতে যেতে হবে। এটা তো ৫ বছরের ব্যাপার। একটা জিনিস চিন্তা করেন, স্বাধীণতার পর গত ১৫ বছরে কতো উন্নয়ন হয়েছে। আমি আপনাদেরকে একটা জিনিসই গ্যারান্টি দিবো, গত ১৫ বছরে যে উন্নয়ন পেয়েছেন, আগামী ৫ বছরে তার চেয়ে তিন গুন উন্নয়ন পাবেন, যদি জননেত্রী শেখ হাসিনাকে আরেকবার এই সংসদ বসিয়ে উনার মাধ্যমে সরকার গঠন করতে পারেন।
বিএনপির বিষয়ে তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের বন্দরে কোনো বিএনপি নাই। তাদেরকে বরখাস্ত করে দিয়েছে বিএনপি, ওরা সেলিম ভাইকে ভালোবাসে। ওরা সেলিম ভাইয়ের সাথে নির্বাচন করবে, বিএনপির বরখাস্তে ওদের কিছুই যায় আসে না। বিএনপি বলে কোনো শব্দ নাই। ওরা চায় নারায়ণগঞ্জের উন্নয়ন, তার জন্য ওরা আমাকে ভালোবাসে। ওরা আমাকে ভালোবেসে বন্দর এবং নারায়ণগঞ্জে কোনো রকমের অশান্তি করবে না বলে কথা দিয়েছে। তার জন্য বিএনপির নেতারা ওদেরকে বরখাস্ত করেছে। ওরা বলে ভালো হয়েছে, এবার আমরা একসাথে কাজ করবো, যা উন্নয়ন হয়েছে তার চেয়ে বেশী উন্নয়ন করবো। সরকারি বরাদ্দের বাইরে আপনাদের দোয়ায়, আল্লাহর রহমতে আমার ব্যক্তিগত অর্থায়নে গত সাড়ে ৯ বছরে আমি ৯টা স্কুল বানাতে পেরেছি। এটা আমাকে খুব শান্তি দেয়। সরকারিভাবে যেটা বানিয়েছি সেটা তো বানিয়েছিই।
গ্যাসের বিষয়ে সেলিম ওসমান বলেন, সবার শুধু একটাই অভিযোগ গ্যাস নাই। এই গ্যাস ছিলো ১০০ বছরের। কিন্তু আমরা অযথা তা অপচয় করে, গ্যাস ছেড়ে কাপড় চোপড় শুকিয়ে সেই গ্যাস নষ্ট করেছি। তার উপর আমার এলাকায়, সোনারগা, আড়াইহাজারে অবৈধ লাইন। চুরির পয়সার গ্যাস নিয়ে ভাত রান্না করে পোলাপানরা খাওয়াবেন না, পোলাপান তাহলে মানুষ হবেন না। আরেকবার জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় আনেন, আজকে বরিশালে, চিটাগাংয়ে গ্যাসক্ষেত্রের সম্ভাবনা পাওয়া গেছে। আগামী ৫০০ বছরের গ্যাস পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু আমাদেরকে প্রতিজ্ঞা করতে হবে, আমরা গ্যাস সহ কোনো কিছুই অপচয় করবো না।
তিনি বলেন, আমরা কিন্তু ২১টা বছর জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু বলতে পারি নাই। আমরা কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের দেশ শাসন করতে দেখি নাই। আমি তাদেরকে দেশ শাসন করতে দেখেছি, যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে। বঙ্গবন্ধু একটাই ভুল করেছিলেন, এদের বিচার করেন নাই, এদেরকে জেলখানায় বসিয়ে রেখেছিলেন। ঐখান থেকে প্লানিং করে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে মোস্তাকের মাধ্যমে জিয়াউর রহমানকে সৃষ্টি করে, হা না ভোট করে সংসদ বানিয়ে সেই সমস্ত রাজাকার-আলবদরকে মন্ত্রী বানিয়ে, বিভিন্ন দেশের এম্বাসেডর বানিয়ে, গণতন্ত্রের গলা টিপ দিয়ে ধরে ২১টি বছর তারা পার করে দিলো। এই ২১ বছরের ভিতরে ৫/৬ বছরের একটা বাচ্চার বয়স কতো হয়, এই বাচ্চাগুলোই কিন্তু আজকে বিএনপি। এরা জানেনা, দেশ কিভাবে স্বাধীণ হয়েছে? এরা বুঝতে পারে না, আমার মা রা কিভাবে লাঞ্ছিত হয়েছে? এরা বুঝতে পারে না, লক্ষ লক্ষ মানুষ শহীদ হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমি ৮ বছর আগে অনেকগুলো মেয়েকে ৮ হাজার করে টাকা ও একটা করে সেলাই মেশিন দিয়েছি। তাদের অনেকেই আজকে কতো বড় হয়ে গেছে, আমাদের ঈদের সময় ফোন করে, আমাকে গিফট দিতে চায়, আমাকে এটা-ওটা বানিয়ে পাঠায় তখন আমার অনেক ভালো লাগে। অনেকে আবার সেই সময় এই টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করছেন, যা এখনো তারা ভাঙ্গে নি। মহিলারা সাকসেস হলো। ছেলেদেরকেও ২৫ হাজার করে টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু ছেলেরা সেই টাকা রাখতে পারে নি। বোনের বিয়ে, সংসারে এটা লাগবে, ওটা লাগবে এই বলে টাকাটা তুলে ফেললো এবং খরচ করে ফেললো। শুধুমাত্র ৫টা ছেলে, আজকে প্রায় আমার সমপর্যায়ের হয়ে গেছে। মাত্র ২৫ হাজার টাকা দিয়ে আমার সমপর্যায়ে হয়ে গেছে।
নাসরিন ওসমান বলেন, ০৭ জানুয়ারী আমরা সবাই যার যার অবস্থান থেকে ভোট কেন্দ্রে যাবো এবং নিজের ভোট নিজে দিবো। আপনারা দলমত নির্বিশেষে সেলিম ওসমানকে লাঙ্গল মার্কায় ভোট দিবেন। দল যার যার, সেলিম ওসমান সবার। সেলিম ওসমান সাহেব কি করেছেন, এটা আমি বলবো না, কারণ আমি তো ঘরের মানুষকে ভালো বলবোই। আপনারা যেটা বলবেন, সেটাই সত্যি হবে। আপনারা তো তার জন্য জানেনই, উনি অনেক উন্নয়ন করেছেন। আপনারা যদি তাকে জয়যুক্ত করে নিয়ে আসতে পারেন, তাহলে ভবিষ্যতে আরও বেশী উন্নয়ন করবেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনটা উনাকে (সেলিম ওসমানকে) উপহার দিয়েছেন। আমি চির কৃতজ্ঞ এবং আমার পরিবার উনার কাছে কৃতজ্ঞ যে, সেলিম ওসমান সাহেবকে উনি এতোটা সম্মাণিত করেছেন।
তিনি বলেন, এই সম্মানটা যাতে বজায় থাকে, তাই সুষ্ঠুভাবে যে নির্বাচন হচ্ছে তা আপনারা সফল করবেন। অনেকে বলছেন, এটা কোনো নির্বাচনই না। এখানে কিছুই হবে না, এমনি সবাই পাশ করে যাবে। আসলে কিন্তু তা না, অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। সবকিছু মোকাবেলা করেই আমাদেরকে কিন্তু এই নির্বাচনে পথ চলতে হবে। আপনারা নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে যাবেন এবং পাশ^বর্তী সকলকে ভোট দিতে উৎসাহিত করবেন।
ওসমান পরিবারের বড় মেয়ে নিগার ওসমান বলেছেন, ও নিজেকে অনেক বয়স্ক ভাবে কিন্তু ও আমার ইমিডিয়েট বড়ো। ও একটু গাম্ভীর্য বজায় রেখে চলে, কিন্তু মনটা ওর অনেক নরম। যেটা অনেকে বুঝতে পারে না। একটা জিনিস ওর মধ্যে আছে যে, ও মেয়েদেরকে খুব সম্মান করে এবং এজন্যই সে এরকম নারী উদ্যোক্তা। এই জিনিসটা ওর মধ্যে ছোটবেলা থেকেই ছিলো। প্রতিটা ক্ষেত্রে আমরা এটা দেখেছি। একজন পুরুষের উন্নতির পিছনে দুইটা নারীর অবদান থাকে, একটা হলো মা এবং অপরটা হলো স্ত্রী।
আরও উপস্থিত ছিলেন আঞ্জুমান আরা আকসীর, আলেয়া বেগম, রোকসানা খবির, এড. মাহমুদা মালা, ইসরাত জাহান স্মৃতি, এড. নুর জাহান, মরিয়ম শান্তা, নারগিস প্রমুখ।