
নারায়ণগঞ্জ সমাচার:
সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে র্যাব-পুলিশের যৌথ অভিযানকে ঘিরে আতঙ্কে রয়েছে নারায়ণগঞ্জের অপরাধীরা। বিশেষ করে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার দেয়ার পর থেকে মাদক কারবারী, চাঁদাবাজ, ভুমিদস্যুসহ আওয়ামীলীগ ও অঙ্গসংগঠনের দুর্নীতিবাজ নেতাকর্মীরা ভয়ে দিন কাটাচ্ছেন। এছাড়া, বিএনপি নামধারী পাতি নেতা, ৫ আগস্টের পর খোলস পাল্টে বিএনপি নেতা বনে যাওয়া অপকর্মকারী, আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে ব্যস্ত সন্ত্রাসীরাও ইতিমধ্যেই পাড়া-মহল্লা ছেড়ে আত্মগোপনে রয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, ২০০২ সালের পর এবারই প্রথম বিচারিক ক্ষমতা নিয়ে জননিরাপত্তায় মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী। সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থা ফেরাতে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হচ্ছে তারা। ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাবলে অপরাধীদের গ্রেপ্তার, শাস্তি ও জামিন দিতে পারবেন সেনা কর্মকর্তারা। ফলে ভয় ও আতঙ্কে অপরাধীরা আইন ভঙ্গ না করার প্রতি সচেতন থাকবে; ধারাবাহিক অভিযানে ধরা পড়বে চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও অস্ত্রধারীরা। এ ছাড়া তৈরি পোশাক শিল্পসহ সব ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। ফলে জনগণের মধ্যে ভীতি কেটে যাবে, ফিরবে আস্থা। এমনটাই মনে করছেন রাজণৈতিক বিশ্লেষক মহল।
তারা বলছেন, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হলেও মাঠপর্যায়ে এখনও শৃঙ্খলা ফেরেনি। পুলিশ অনেকটাই নিস্ক্রিয়। ফলে তৈরি পোশাক খাতসহ বিভিন্ন খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। গণপিটুনিতে হত্যাসহ ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে। বিচারিক ক্ষমতা পাওয়ার পর এখন কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিতে সেনাবাহিনীকে প্রশাসনের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। সেনাবাহিনীর হাতে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা থাকলে শিগগিরই মাঠের পরিস্থিতি বদলে যাবে, কেটে যাবে সংকট। এছাড়া, সেনাবাহিনী মাঠে থাকা অবস্থায় পুলিশ বাহিনীকে নতুন করে জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ নেয়ার আহবান জানান তারা।
এদিকে, ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা নিয়ে গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এরই অংশ হিসেবে, সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ বাহিনী অভিযান পরিচালনা করে আড়াইহাজার ও বন্দর থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে দুই আসামীকে গ্রেফতার করেছে যৌথবাহিনী। এছাড়া, গ্রেফতারের ভয়ে ফতুল্লা থানায় আত্মসমর্পণ করেছে ১ জন। যৌথ বাহিনী সুত্রে জানা গেছে, আড়াইহাজারে চাঁদাবাজি ও জবর দখলসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুরের অভিযোগে শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সাইফুল ইসলাম (২৪) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করে যৌথ বাহিনী। এর আগে, শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) ভোরে অভিযান চালিয়ে নারায়ণগঞ্জের বন্দরে ফরাজীকান্দা এলাকা থেকে সুজন মীর নামে আরো এক আসামীকে আটক করা হয়। একইদিন, যৌথ বাহিনীর অভিযানের কারণে গ্রেফতারের ভয়ে শাওন নামে একজন ফতুল্লা থানায় আত্মসমর্পণ করেছে বলে জানা গেছে।
অপরদিকে, সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতায় দেয়ার যে সিদ্ধান্ত অন্তর্বর্তীকালীণ সরকার নিয়েছে তাকে স্বাগত জানিয়েছে নারায়ণগঞ্জবাসী। তারা বলছে, পুলিশ বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তার কারণে প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় দিন দিন অপকর্ম, দখল-চাঁদাবাজি বেড়েই চলেছে। এমন একটি পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতায় দেয়ায় আমরা খুশী। এতে করে আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী তথা জনসাধারণ অনেকটাই নিরাপদ বোধ করছি। গত ৩ দিনে পাড়া-মহল্লাগুলোতে সন্ত্রাসীদের উৎপাত কমেছে বলেও দাবি করেন তারা। তারা বলেন, ৫ আগস্টের পর যাদের কারণে বাড়িঘর, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে থাকা দায় হয়ে পড়েছিলো, তাদেরকে এখন আর দেখা যাচ্ছে না। সেনাবহিনীর ভয়ে এলাকায় ছেড়েছে তারা। এছাড়া, বিগত আমলে লুটপাট-দুর্নীতি করে অঢেল সম্পদের মালিক হয়ে যারা বিভিন্ন সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করেছিলো, তারাও আত্মগোপনে চলে গেছে।
বিসিক শিল্প এলাকার বাসিন্দা মোখলেছুর রহমান বলেন, আওয়ামীলীগের পতনের পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই এখানে ঝুট নিয়ে মারামারি ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতো। তবে, গত ৩দিন ধরে ঝুট নিয়ে কোনো অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি এখানে। বেতন ও বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষ ঘটলেও দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিচ্ছে সেনাবাহিনী।
নগরীর দেওভোগ এলাকার বাসিন্দা সোবহান মিয়া বলেন, বিগত আমলে আওয়ামীলীগের ছেলে-পেলেরা জ্বালাতো, এখন বিএনপির পোলাপান উৎপাত শুরু করছে। প্রতিদিনই এলাকায় কিছু না কিছু নিয়ে ঝসড়া-বিবাদ-মারামারির ঘটনা ঘটেছে। তবে, গত কয়েকদনি যাবৎ অনেক শান্তিতে আছি। পোলাপানের উৎপাত কমছে, ওদেরকে এখন আর এলাকায় দেখি না।
জেলাবাসী বলছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথবাহিনীর অভিযানের কারণে ইতিমধ্যেই জনজীবন স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। তবে, প্রতিটি পাড়া-মহল্লার অপরাধীদের শক্ত হাতে দমনের অনুরোধ জানান তারা। কার পরিচয় কি, কে কোন রাজনৈতিক দলে জড়িত তা বিবেচনা না করে, অপরাধীকে শুধুমাত্র অপরাধী হিসেবে বিবেচনা করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জেলাবাসীর। এক্ষেত্রে, থানা পুলিশ, ডিবি পুলিশ, ডিএসবি, সিটি এসবিসহ গণমাধ্যমকর্মীদের সহায়তা নিয়ে তালিকা তৈরি করে অপকর্মকারীদের আইনের আওতায় আনতে এবং নিরীহ কোনো ব্যক্তি যাতে হয়রানীর শিকার না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে বলেন জেলাবাসী।