ফতুল্লার লালপুরে কাজল চৌধুরীর সমর্থনে উঠান বৈঠক

45

নারায়ণগঞ্জ সমাচার:

আগামী ফতুল্লা ইউনিয়নের নির্বাচনে ৪নং ওয়ার্ডে মেম্বার প্রার্থী কাজল চৌধুরীর সমর্থনে উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (০২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ওয়ার্ডের লালপুরের পৌষাপুকুর পাড় এলাকায় এ উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

আওয়ামীলীগ নেতা হাজী লিয়াকত হোসেনের সভাপতিত্বে এ উঠান বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, যুবলীগ নেতা এহসানুল হক নিপু। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও ফতুল্লা ইউপি নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী খন্দকার লুৎফর রহমান স্বপন, জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর সোহেল আলী, ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মাহবুবুল হক মাসুদ, সদস্য আবু মো. শরীফুল হক, মোবারক হোসেন, মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি মো. জুয়েল হেসেন প্রমুখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে এহসানুল হক নিপু বলেন, বিজয়ের মাসে আমরা সকলেই আনন্দ করি, কিন্তু এ বিজয় কি করে হলো তা অনেকেই জানেনা বা জানতে চায় না। বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে এ দেশ স্বাধীণ হতো না, আমাদের দেশের কেউ উচ্চ পদে আসীন হতে পারতো না। তাঁর জন্ম হয়েছিলো বলেই আমরা স্বাধীণ বাংলাদেশে বসবাস করছি, পৃথিবীর বুকে মাথা উচু করে দাড়িয়ে রয়েছি। বঙ্গবন্ধু যদি ৭’ই মার্চের ভাষণ না দিতো তাহলে হতো বাংলার দামাল ছেলেরা মুক্তিযুদ্ধে যেতো না, তাঁর ডাকেই মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয় এবং এ দেশকে স্বাধীণ করে আনে। পরবর্তীতে ৭৫’ এর ১৫ই আগষ্ট কিছু কুচক্রীরা পাকিস্তানের সাথে আতাত করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে তারা বাংলাদেশকে নিশ্চিহ্ন করে পাকিস্তানে নিয়ে যেতে চেয়েছিলো। কিন্তু জাতির জনকের দুটি কণ্যা আমাদের মাঝে বেঁচে এবং ৮১’সালে জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিলো।

তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে তিনি যখন প্রধানমন্ত্রী হলেন এবং জননেতা শামীম ওসমান যখন এমপি হলেন তখন থেকেই শুরু হয় নারায়ণগঞ্জের উন্নয়ন। ৯৬’র আগ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন হয় নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন বলেই জননেতা শামীম ওসমান ৯৬’ ২০০১ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে প্রায় ২৬শত কোটি টাকার কাজ করতে পেরেছিলেন। তাই সকলের কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং শামীম ওসমানের জন্য দোয়া চাইলাম।

তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহুবার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু মহান আল্লাহর রহমতে উনি বেঁচে আছেন এবং তিনি বেঁচে আছেন বলে ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা উন্নত বিশে^ পরিণত হবো এবং নারায়ণগঞ্জকে একটি উন্নত নগরী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করবো। আগামী ফতুল্লা নির্বাচনে যারা চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলো, তারা সবাই যোগ্য ছিলো এবং নৌকার কান্ডারী হতে পারতো। কিন্তু যেহেতু একজনকে মনোনয় দিতে হবে তাই জননেতা শামীম ওসমান কারো মনে কষ্ট না দিয়ে স্বপন ভাইকে মনোনয়ন দিয়েছেন। খন্দকার লুৎফর রহমান স্বপন ভাইয়ের উপর আপনারা আস্থা রাখবেন।

জলাবদ্ধতার বিষয়ে নিপু বলেন, এখানে যে জলাবদ্ধতা হয়েছিলো, ভবিষ্যতে আশা করি তা আর হবে না। আমাদের জননেতা শামীম ওসমান, স্বপন ভাই, মীর সোহলে, শরীফসহ ফতুল্লার নেতৃবৃন্দ সহ মুরুব্বীদের সাথে নিয়ে আগামী বর্ষার আগেই জলাবদ্ধতার একটি সুষ্ঠু সমাধান ইনশ্আাল্লাহ আমরা করবো। শুধু সবার কাছে একটি অনুরোধ, ২৬ তারিখ সকালে কষ্ট করে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে শেখ হাসিনার মার্কা, শামীম ওসমানের মার্কা নৌকায় একটি একটি করে ভোট দিয়ে বিপুল ভোটে জয় ছিনিয়ে আনবেন।

৪নং ওয়ার্ড মেম্বার প্রার্থী কাজলের বিষয়ে নিপু বলেন, এই ৪নং ওয়ার্ডে আপনাদের উন্নয়নের জন্য একজন তরুণ সমাজ সেবক, মেম্বার দরকার। যাকে আপনারা রাতদিন ২৪ ঘন্টা ডাকলে পাবেন এমন একজন তরুণ জনপ্রতিনিধি দরকার। যার মাধ্যমে আমরা এই ওয়ার্ডে ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করতে পারবো। বাচ্চা না কাঁদলে মাও যেমন দুধ দেয় না, ঠিক তেমনি ভাবে কান্নাকাটি করে হলেও যে আপনাদের এলাকার উন্নয়ন করতে পারবে তাকেই আপনারা ২৬ তারিখে নির্বাচিত করবেন। আমার দেখা মতে, ২০০১ এর পরে আমরা যখন জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার জন্য ঢাকার রাজপথ মিছিলে মিছিলে শ্লোগানে আমরা প্রকম্পিত করেছিলাম, সেদিন এই কাজল চৌধুরীর নেতৃত্বে বিশাল বিশাল মিছিল নিয়ে, জননেতা একেএম শামীম ওসমানের হাতকে শক্তিশালী করেছিলো সেদিন।

নিপু আরও বলেন, মীর সোহেল ভাই, শরীফের নেতৃত্বে তারাই সেদিন অগ্রণী ভুমিকা পালন করেছিলো, তাই অনুরোধ করবো যারা দু:সময়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা, জননেতা শামীম ওসমানের হাতকে শক্তিশালী করেছে তাদেরকেই আগামী ২৬ তারিখের নির্বাচনে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন এই প্রত্যাশা করছি। জননেতা শামীম ওসমানও তারুণ্যের নেতৃত্বকে পছন্দ করেন। যাকে আমরা দিনরাত ২৪ ঘন্টা মানুষের কাছে পাবো, তার পক্ষেই আমি কথা বলবো। তাই আমি বলতে চাই, ২৬ তারিখে এই কাজল চৌধুরীর পক্ষে আপনারা সকলেই ভোট দিবেন এবং নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদের স্বপন ভাইকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত করবেন। নির্বাচিত হওয়ার সাথে সাথে স্বপন ভাইকে সাথে নিয়ে আপনাদের এলাকার সকল সমস্যার বিষয়ে আমরা শামীম ওসমানের কাছে আবেদন করবো, যাতে আপনাদের সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান হয়।

উঠান বৈঠকে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে খন্দকার লুৎফর রহমান স্বপন বলেন, দীর্ঘদিন পর ফতুল্লা ইউনিয়নের নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এই ৪নং ওয়ার্ডে আমরা যাকে মনোনীত করবো, যাকে নিয়ে আমরা আগামীর কাজগুলো করবো, আমরা আশা করবো সেই ব্যক্তিটা যেন অবশ্যই সবার পরিচিত একজন ব্যক্তি থাকবে এবং যাকে দিয়ে আমরা কাজগুলো করাতে পারবো। তরুণ, উদীয়মান, বুদ্ধিমান এমন একজন প্রার্থীকেই আমরা ভোট দিয়ে এ ওয়ার্ডের মেম্বার বানাবো বলে আমি আশা করি। যেহেতু অনেকগুলো ক্যান্ডিডেট আছে তাই আমাদের বুদ্ধি এবং জ্ঞান দিয়ে সবচেয়ে ভালো প্রার্থীকে বেছে নিবো ইনশ্আাল্লাহ।

তিনি আরও বলেন, শামীম ওসমান আমাদের উপর যে আস্থা রেখে নৌকা প্রতীক দিয়েছেন, আমরা ২৬ তারিখ সারাদিন নৌকায় ভোট দিয়ে তার বিশ^াসকে তিন গুন বাড়িয়ে ফিরিয়ে দিতে চাই। ৭৫’ থেকে ৯৬’ সাল পর্যন্ত এই দীর্ঘ ২১ বছরে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কিন্তু কোনো ক্ষমতায় ছিলো না। দীর্ঘ এই সময়ে আমাদের লালপুরে পাকা রাস্তা তো দুরে থাক, ইটের রাস্তাও ছিলো না। তখন এই এলাকায় যে বাড়ি-ঘর হবে এটা কেউ ভাবে নাই, তখন একটি চালের বস্তা নিয়ে আসতে অনেক টাকা খরচ হতো। কিন্তু ৯৬’ সালে আমাদের নেতা একেএশ শামীম ওসমান যখন আমাদের এমপি হলেন তখন থেকেই ইটের রাস্তা ও পাকা রাস্তা, ড্রেন, কালভার্ট দেখতে আরম্ভ করলাম। এ সকল কারণেই আমরা নৌকায় ভোট দিবো, কেননা নৌকায় ভোট দিলে উন্নয়ন হয়।

তিনি জলাবদ্ধতার বিষয়ে বলেন, বর্তমানে আমাদের যে প্রধান সমস্যা তা হলো জলাবদ্ধতা। আমরা একেএম শামীম ওসমানের মাধ্যমেই দীর্ঘ মেয়াদী উন্নয়নের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করবো। যদি আমরা জয়ী হয়, তাহলে শীঘ্রই সকলকে নিয়ে সকল সমস্যার সমাধান করবো।

জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর সোহেল আলী বলেন, ৪নং ওয়ার্ডে প্রার্থী অনেক, তাদের মধ্যে অনেকেই যোগ্য আর তাই আমি নিজেও এখনো সিলেক্ট করতে পারি নাই যে, কাকে ভোট দিবো। আমাদের চেয়ারম্যান যদি বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় পাশ করে তাহলে মেম্বার নির্বাচন করবো, তা নাহলে মেম্বার নির্বাচন করবো না। অনেক এন্টি নৌকার অনেক লোকজন বসে আছে, আমাদের পাশ^বর্তী ইউনিয়নে চরমোনাই’র মুরিদ আছে ২১’শ অথচ তারা ভোট পেয়েছে ১৩ হাজার। এই ভোট কোথা থেকে আসলো, অনেকেই আওয়ামীলীগ করে, জামাত-বিএনপির লোকজন আজ আমাদের কাধের উপর ভর করে আছে। আজকে নব্য আওয়ামীলীগারদের জন্য শামীম ওসমানের সামনে আমরা যেতে পারি না, তার পাশে অনেক নেতা। ক্ষমতা গেলে এদের কেউ থাকবে না, যারা ত্যাগী আছে তারাই কয়েকজন থাকবে।

তিনি আরও বলেন, সবাই আওয়ামীলীগ করেন সমস্যা নাই, কিন্তু উল্টা-পাল্টা কাজ করে আওয়ামীলীগের বদনাম করবেন না, এমন আওয়ামীলীগার আমাদের দরকার নেই। কেন স্বপন ভাইকে ভোট দিবেন জানেন, শামীম ভাই যখন এখান দিয়ে যাবেন তখন তাকে ডাক দিয়ে বলবেন, শামীম ভাই দাড়ান, আমার এলাকায় এ কাজটা করতে হবে, করে দিয়ে যান। শামীম ওসমান কাজের লোক, এতো কাজ করছে, এতো রাস্তা করছে যে ভোট চাওয়ার কথা না। তারপরও আমরা ভোট চাচ্ছি, কেননা বহুত উল্টা-পাল্টা হয়ে যায়। নৌকায় ভোট দিবেন শেখ হাসিনাকে ভালোবেসে, শামীম ওসমানকে ভালোবেসে, আওয়ামীলীগকে ভালোবেসে খন্দকার লুৎফর রহমান স্বপন ভাইকে ভোট দিবেন। আগে এই এলাকায় একটা হুন্ডা নিয়া আসা যাইতো, কিন্তু এখন গাড়ি নিয়ে আসা যায় শুধুমাত্র শামীম ওসমানের জন্য।

৪নং ওয়ার্ড মেম্বার প্রার্থী কাজল চৌধুরী বলেন, আমি আপনাদের সবার কাছে একটি ভোটের দরখাস্ত করি। ২০০১ থেকে ২০২১ পর্যন্ত জননেতা একেএম শামীম ওসমানের নেতৃত্বে এবং ফতুল্লার নেতৃবৃন্দের পরামর্শে তুখোড় আন্দোলনের মাধ্যমে আমি যখন এই লালপুরকে সুসংগঠিত করেছি তখন হয়তো বা আপনাদের মাঝে আমার অনেক ভুল-ত্রুটি হতে পারে। মানুষ মাত্রই ভুল, সেই ভুল-ত্রুটিগুলোকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে আমার সামনের চলার পথকে সুন্দর করার জন্য সকলের কাছে একটি করে ভোট এবং দোয়া প্রার্থনা করছি।