জেলা পরিষদ নির্বাচন: সেয়ানে সেয়ানে লড়াই

96
জেলা পরিষদ নির্বাচন: সেয়ানে সেয়ানে লড়াই

নারায়ণগঞ্জ সমাচার:

জেলা পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে জমে উঠেছে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা। নিজ নিজ ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ভোট প্রার্থনা করছেন তারা। বর্তমানে তিনটি সাধারণ ওয়ার্ডে সদস্য পদে লড়াই করছেন ৮ জন এবং সংরক্ষিত দুটি ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন ৭ জন।

তফসিল অনুযায়ী, আগামী ১৭ অক্টোবর জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ভোট গ্রহন করা হবে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ইভিএম এর মাধ্যমে। কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় চেয়ারম্যান পদে নৌকার প্রার্থী চন্দন শীল এবং সাধারন ওয়ার্ড নং ৪ (আড়াইহাজার) ও ৫ (রূপগঞ্জ) এ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়েছেন যথাক্রমে মিয়া মো. আলাউদ্দিন ও আনছার আলী।

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এলাকা নিয়ে গঠিত হয়েছে জেলা পরিষদের ১নং সাধারণ ওয়ার্ড। এখানে ভোটার সংখ্যা ৩৭। এখানে লড়াই করছেন তিন সাবেক সদস্য মজিবুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম ও আলাউদ্দিন মিয়া। এদের মাঝে মজিবুর রহমান নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের আস্থাভাজন এবং ওসমান বলয়ের একজন সৈনিক বলে সর্বমহলে পরিচিত।

বিপরীতে জাহাঙ্গীর আলম নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও আলাউদ্দিন মিয়া জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের ঘনিষ্ঠজন হিসাবে পরিচিতি। বর্তমানে আনোয়ার-আইভী একসাথে রাজনীতি করায় এ ওয়ার্ডে জাহাঙ্গীর-আলাউদ্দিনের লড়াইয়ে কিছুটা হলেও এগিয়ে থাকবেন মজিবুর রহমান।

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা ও বন্দর উপজেলা নিয়ে গঠিত ২নং সাধারণ ওয়ার্ডে প্রার্থী তিনজন। এরা হলেন সাবেক সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন, ধামগড় ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মাসুম আহম্মেদ ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শিকদার রাসেল। এ ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ১৫৮।

এখানে শামীম ওসমানের একনিষ্ঠ কর্মী জাহাঙ্গীর হোসেন ও সেলিম ওসমানের পছন্দের সাবেক চেয়ারম্যান মাসুম আহম্মেদ একে অপরের মুখোমুখী। বিপরীতে জি এম আরাফাতের শিষ্য তথা মেয়র আইভী বলয়ের শিকদার রাসেল নতুন হলেও এ দুজনের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে লাভবান হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের ৩নং ওয়ার্ডটি সোনারগাঁ উপজেলা নিয়ে গঠিত। এখানে লড়াই হচ্ছে আওয়ামীলীগ আর জাতীয় পার্টির মাঝে। আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসাবে মাঠে আছেন সাবেক সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম। আর জাপার প্রার্থী হিসাবে আছেন জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম ইকবাল। স্থানীয় পর্যায়ে দুজনই ব্যাপক জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব।

এ ওয়ার্ডে কে কার চেয়ে এগিয়ে তা বলা বেশ মুশকিল। কেননা আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসাবে মাসুম বেশ এগিয়ে থাকার কথা থাকলেও আওয়ামীলীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে এবং সোনারগাঁয়ের এমপি জাতীয় পার্টির হওয়ায় আবু নাঈম ইকবাল লড়ছেন সমানে সমানে। এছাড়া জেলার অন্য উপজেলার চেয়ে এখানে জাপা বেশী শক্তিশালী। ফলে আওয়ামীলীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব মাথাচাড়া না দিলে এবারও বলি হতে পারেন ইকবাল। তবে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের নিরসন সম্ভব না হলে ভরাডুবি হতে পারে মাসুমের।

এদিকে, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন, সদর উপজেলা ও বন্দর উপজেলা নিয়ে গঠিত সংরক্ষিত ১নং ওয়ার্ডে প্রার্থীতা করছেন তিনজন। এরা হলেন সাদিয়া আফরিন, আছিয়া খানম সুমি ও নাছরিন আক্তার প্রধান।

এদের মাঝে সাদিয়া আফরিন হচ্ছে শামীম ওসমানের অত্যন্ত আস্থাভাজন ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক, বক্তাবলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কণ্যা ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাফায়েত আলম সানীর স্ত্রী। এছাড়া ওসমান পরিবারের আজ্ঞাবহ কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার প্রধানের ভাইয়ের স্ত্রী নাছরিন প্রধান। ফলে সংরক্ষিত এ ওয়ার্ডে কিছুটা মধুর সমস্যায় পড়েছেন শামীম ওসমান। বিপরীতে মেয়র আইভী বলয়ের প্রার্থী হিসাবে পরিচয় দেয়া সুমি যদি সত্যি মেয়র আইভীর পছন্দের প্রার্থী হয়ে থাকে, তাহলে তিনি বাড়তি সুবিধা পাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অপরদিকে, সোনারগাঁ, আড়াইহাজার ও রূপগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত সংরক্ষিত ২ নং ওয়ার্ডে নির্বাচনী লড়াই করছেন ৪জন। এরা হলেন এড. নূর জাহান, হাওয়া বেগম, সীমা রানী পাল ও শাহিদা মোশাররফ। এদের মধ্যে তুমুল লড়াই হতে পারে মন্ত্রী গাজী সমর্থিত সীমা রানী পাল ও এমপি বাবু সমর্থিত শাহিদা মোশারফ ও শামীম ওসমান বলয়ের প্রার্থী এড. নুরজাহানের সাথে। তবে, হাইপ্রোফাইল কারো সমর্থন ব্যতীত স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মাঠে আছেন হাওয়া বেগম।

উল্লেখ, আগামী ১৭ অক্টোবর সোমবার অনুষ্ঠিত হবে জেলা পরিষদ নির্বাচন।