
নারায়ণগঞ্জ সমাচার:
নতুন কমিটি গঠনের পর থেকেই চাঙ্গাভাব বিরাজ করছে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে। এড. সাখাওয়াত হোসেন খানের মতো একজন দায়িত্বশীল, দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ ও ত্যাগী নেতার কাধে দায়িত্ব তুলে দেয়ার পর এ চাঙ্গাভাব ফিরে এসেছে বলে দাবি তৃণমূল নেতাকর্মীদের।
তৃণমূল নেতাকর্মীরা জানায়, নারায়ণগঞ্জ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের কাছে সজ্জ্বন ব্যক্তি হিসাবে পরিচিত এড. সাখাওয়াত হোসেন খান সর্বদা দলীয় আন্দোলন-সংগ্রামে, দলীয় কর্মসূচীতে রাজপথে ছিলেন এবং বর্তমানেও আছেন। কখনো কোনো ভয়, বাধা-বিপত্তি তাকে রাজপথের আন্দোলন সংগ্রাম থেকে দুরে রাখতে পারে নি। এছাড়াও দীর্ঘ ১৪ বছর যাবৎ বিএনপি ক্ষমতায় বাইরে থাকলেও দীর্ঘ এ সময়ে যখন যে দায়িত্বে আছেন তখন সেই স্থান থেকে নেতাকর্মীদের পাশে থাকেন, খোঁজ-খবর রাখেন এড. সাখাওয়াত।
শুধু খোঁজ-খবরই নয়, একজন আইনজীবী হিসাবে রাজনৈতিক মামলা-মোকদ্দমায়ও নারায়ণগঞ্জের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের পাশে থাকেন তিনি। দীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য রাজণৈতিক জীবনের শুরু থেকে এখনো পর্যন্ত লবিং-গ্রুপিং, দ্বন্দ্ব-বলয়ের উর্ধ্বে থেকে জেলা-মহানগরসহ প্রতিটি উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন বিএনপি এমনকি তৃণমূল নেতাকর্মীদের সর্বোচ্চ আইনী সহায়তা দিয়ে সকলের পাশে ছিলেন তিনি। যা বর্তমানেও অব্যাহত রেখেছেন মহানগর বিএনপির এ আহবায়ক দাবি নেতাকর্মীদের।
এড. সাখাওয়াত হোসেন খানের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে তৎকালীণ মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। ছিলেন জেলা বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদকও। দীর্ঘদিন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়ে প্রথমে আইনজীবী সমিতি সাধারণ সম্পাদক এবং পরে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।
আলোচিত সেভেন মার্ডার তথা সাত খুন মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী হয়ে দেশব্যাপী হয়েছেন প্রশংসিত। ২০১৬ সালের নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে ধানের শীষ প্রতীকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে লড়াই করে প্রায় এক লাখ ভোট পান তুমুল জনপ্রিয় এই নেতা। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে কেন্দ্র ঘোষিত মহানগর বিএনপির কমিটিতে সিনিয়র সহ-সভাপতির দায়িত্ব পান।
তবে, সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নিস্ক্রিয়তা ও রাজপথে আন্দোলন কর্মসূচী পালন করার অনীহার কারণে নেতাকর্মীদের নিয়ে আলাদাভাবে কর্মসূচী পালনে বাধ্য হন এড. সাখাওয়াত। যেখানে কতিপয় নেতাকর্মীদের নিয়ে সভাপতি-সম্পাদক সাবেক এমপি আবুল কালামের বাড়ির ৪ তলার একটি কক্ষে মিটিং-মিছিল করতেন, সেখানে রাজপথে থেকে বীরদর্পে দলীয় সকল কর্মসূচী পালন করেছেন এই সাখাওয়াত। সকল আন্দোলনে ফ্রন্ট লাইনে থেকে নেতাকর্মীদের দিয়েছেন নেতৃত্ব।
দলের প্রতি আস্থা, ভালোবাসা, ত্যাগ ও সাহসের প্রতিদান হিসাবে নিস্ক্রিয়দের সাইডলাইনে রেখে তার নেতৃত্বে গত সেপ্টেম্বরে ৪১ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্র। আর এতে করেই উজ্জীবিত হয়ে উঠে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। যার প্রমাণ মেলে কমিটি গঠনের ৬দিনের মাথায়। আওয়ামী দু:শাসনে নেতাকর্মীদের হত্যার প্রতিবাদে এদিন (১৯ সেপ্টেম্বর) কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসাবে হাজার হাজার নেতাকর্মী নিয়ে চাষাড়ায় শহীদ মিনারে নবগঠিত নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটির প্রথম প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের স্বত:স্ফূর্তভাবে অংশ নিতে দেখা যায়।
পরবর্তীতে নিহত নেতাকর্মীদের স্মরণে ৮ অক্টোবর শোকর্যালি, পুলিশি হামলা ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নির্যাতনের প্রতিবাদে ২১ অক্টোবর বিক্ষোভ মিছিল, তারেক রহমান ও জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারির প্রতিবাদে ৩ নভেম্বর বিক্ষোভ সমাবেশসহ নানা কর্মসূচীতে হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতি দেখা যায়। এছাড়া, জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসে আলোচনা সভা, ঢাকার মহাসমাবেশে যোগদান উপলক্ষ্যে বেশ কয়েকটি প্রস্তুতি সভা, দুটি ইউনিয়নে কমিটি গঠনসহ প্রত্যেক থানায় সফল কর্মীসভা করেছে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি।
তৃণমূল নেতাকর্মীরা জানান, না.গঞ্জ মহানগর বিএনপির রাজনীতিতে দু:সময়ের কান্ডারী হয়ে নেতাকর্মীদের পাশে ঠায় দাড়িয়ে আছেন এড. সাখাওয়াত হোসেন খান। নেতাকর্মীদের মতে, বিএনপি সরকারের সময়ের অনেক বাঘা বাঘা নেতারা বর্তমানের কঠিন পরিস্থিতি নিজেদের বাচাঁতে আড়ালে আবডালে থাকছেন। কেউবা আবার সরকারী দলের সাথে আতাত করে চলছেন, অনেকে আবার ঘরের কোণায় কিছু সংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে দু-চারটা প্রোগ্রাম করে নিজেদের পিঠ বাচাঁনোর চেষ্টা করছেন। ঠিক তখনই এড. সাখাওয়াত হোসেন খান সময়ের সাহসী সৈনিক হয়ে নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন এবং বর্তমানেও রয়েছেন।
এড. সাখাওয়াত হোসেন খান এখন নগর বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের কাছে ভরসার অন্যতম আশ্রয়স্থল বলে জানায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তারা বলেন, মহানগর বিএনপির রাজনীতি টিকিয়ে রেখেছেন সাখাওয়াতই। মহানগর বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠগুলোর হাল শক্ত হাতে ধরতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। দীর্ঘ সময় ধরে দলের নেতাকর্মীদের পাশে থাকা, আন্দোলন সংগ্রাম, দু:স্থ ও অসহায় মানুষের সেবা ও ত্রাণ বিতরণ, ধর্মীয় ও সামাজিক কর্মকান্ড, কেন্দ্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়ন, রাজপথে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন তিনি। তাই মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে দু:সময়ের কান্ডারী হিসাবেই পরিচিত এড. সাখাওয়াত।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে এড. সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, নিজেকে রাজপথের কান্ডারী মনে করি না। দেশের একটা চরম মুহুর্তে দল আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছে, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান যে দায়িত্ব দিয়েছে তা পূর্ণরূপে পালন করতে পারবো বলে আমি আশাবাদী। ইতিমধ্যেই সেই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের চেষ্টা করছি আমি। আশা করি, অচীরেই নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপিকে ঢেলে সাজানো সম্ভব হবে এবং নেতাকর্মীদেরকে উজ্জীবিত করে দলকে সুসংগঠিত করে নারায়ণগঞ্জ থেকেই সরকার পতনের আন্দোলন শুরু করতে পারবো। নারায়ণগঞ্জে বিএনপির অজস্র নেতাকর্মী রয়েছে, যাদের অনেকেই এতোদিন নিস্ক্রিয় ছিলো। আমি দায়িত্ব পাওয়ার পর অনেক নেতাকর্মী সক্রিয় হয়েছে, তবে এখনো যারা নিস্ক্রিয় আছেন তাদের সকলকে সক্রিয় করার চেষ্টা চলছে। তবে যারা সক্রিয় কিন্তু গ্রুপিং-দ্বন্দ্ব-বিভেদে জড়িয়ে আছেন তাদের ঐক্যবদ্ধ করে দলের স্বার্থে আন্দোলন-কর্মসূচীতে রাজপথে নামানোর লক্ষ্যে কাজ করছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে দল যাদের মনোনয়ণ দিবে তারাই নির্বাচন করবে এবং নেতাকর্মীরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করবে। তাই কোনো ব্যক্তি, বলয়, গ্রুপিং বা লবিং নয় বরং দলের স্বার্থে সকলকে ঐক্যবদ্ধ করে দলকে সুসংগঠিত করতে আমি চেষ্টা করছি। একইসাথে দলকে আন্দোলন কর্মসূচীর জন্য উপযোগী করে গড়ে তুলতেও আমি কাজ করছি।
দল দায়িত্ব দেয়ার পর প্রাথমিক পর্যায়ে নিরপেক্ষভাবে সেই দায়িত্ব পালনে সফল হয়েছেন বলেও মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, ইতিপূর্বেই আমরা ২টি ইউনিয়নে সম্মেলন এবং ভোটাভুটির মাধ্যমে কমিটি গঠন করতে পেরেছি। বাকী ইউনিয়নগুলোতে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন কার্যক্রমও চলমান। এভাবে বিএনপি ও সকল অঙ্গসংগঠনগুলোকে আমরা একটা বিন্দুর মধ্যে নিয়ে আসবো এবং দলীয় কার্যক্রমে গতিশীলতা আরও বৃদ্ধি পাবে।