গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জের ভুমিকা অপরিসীম: রাজীব হাসান

19
না.গঞ্জ জেলা-মহানগর স্বেচ্ছাসেবকদলের কর্মীসভায় বক্তব্য রাখছেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান

নারায়ণগঞ্জ সমাচার:

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান বলেন, এ সম্মেলনের উদ্দেশ্য হলো স্বেচ্ছাসেবকদলকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির এক নম্বর সংগঠনে পরিণত করা। আমাদের লক্ষ্য হলো এ অগণতান্ত্রিক সরকারকে, এই ভোট চোর সরকারকে, মানুষের অর্থ আত্মসাৎকারী, আমাদের নেতাকর্মীদের হত্যাকারী এই অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক সরকারকে পরিবর্তন করতে হবে। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে, জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করার এই স্বপ্ন বেগম খালেদা জিয়ার স্বপ্ন, দেশনায়ক তারেক রহমানের স্বপ্ন, দেশের সকল মানুষের স্বপ্ন। আমরা তাদের কর্মী হিসাবে তাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ করি।

নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবকদলের কর্মীসভা-২০২৩ এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রতিটি ইউনিটের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর অংশগ্রহনে অত্যন্ত জাকজমকপূর্ণ আয়োজনের মধ্য দিয়ে গতকাল বুধবার (২৫ জানুয়ারী) সকালে নগরীর ১৬নং ওয়ার্ডস্থ জান্নাত কনভেনশন হলে প্রথমে নারায়ণগঞ্জ মহানগর স্বেচ্ছাসেবকদল ও দুপুরের দিকে জেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাজীব আহসান বলেন, যে অত্যাচার, যে নির্যাতন শেখ হাসিনা আমাদের উপর করেছে, বাংলাদেশের মানুষের যে দীর্ঘশ্বাস, যে অভিশাপ শেখ হাসিনার উপরে আছে তার কারণে শেখ হাসিনা আর ক্ষমতায় থাকবেনা। এই যে ক্ষমতায় থাকবেনা, এটা নিশ্চিত করতে হলে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবকদলের ভুমিকা রাখতে হবে। সেই জায়গায় যদি ভুমিকা রাখতে চান তাহলে, একদিকে সংগঠনকে গতিশীল করতে হবে, অন্যদিকে আন্দোলন সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা একদিকে সরকারকে পরাজীত করবো, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবো, মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করবো। অন্যদিকে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবকদলকে একটি সুসংগঠিত এবং জাতীয় পর্যায়ের সংগঠন কেন্দ্রীক এক নম্বর সংগঠনে পরিণত করবো।

নারায়ণগঞ্জের ভুমিকা অপরিসীম উল্লেখ করে রাজীব বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে এই নারায়ণগঞ্জের মানুষের বিশাল ভুমিকা, বিশাল অবদান সবসময়ই ছিলো। ১৯৭১ সাল থেকে শুরু করে ৯০’ সালের আন্দোলন ৯৬ সালের গণতান্ত্রিক আন্দোলন দেখি, সেখানে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগরের ভুমিকা কিন্তু অনস্বীকার্য। আজকেও আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, এই নারায়ণগঞ্জের যে অবদান গণতান্ত্রিক আন্দোলনেও তা অব্যাহত থাকবে। এই নারায়ণগঞ্জে যারা স্বেচ্ছাসেবকদলকে নেতৃত্ব দেয় এরা নতুন লোক নয়, পুরোনো লোক। এরা সংগঠনের প্রতি দায়বদ্ধ লোক, এরা দায়িত্বশীল লোক। এই নারায়ণগঞ্জের রাস্তা থেকে গত ২০ বছরে এই নেতৃবৃন্দকে সরানো যায়নি। নারায়ণগঞ্জে যারা স্বেচ্ছাসেবকদলের নেতৃত্বে আছেন এবং আমরা দেখছি যারা নেতৃত্বে আসতে চান তারা রাজপথ থেকে পালিয়ে যাবে না এটি শুধু প্রত্যাশাই নয়, এটি আমরা বিশ^াস করি।

তিনি বলেন, নেতৃত্বে যারা ছিলেন এবং যারা নেতৃত্বে আসতে চান তারা সকলেই সকলের পরিচিত। আজকে এখানে এমন একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দরাও পুরাতন কমিটির নেতৃবৃন্দদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করি। আপনাদের বোঝা উচিত, যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের শক্তি আছে, যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের দম আছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলনের মাঠ থেকে আমরা চলে যাওয়ার লোক না। আমরা দীর্ঘদিন এই রাজপথে জেল-জুলুম-হুলিয়া এগুলো নিয়েই বড় হয়েছি। আবারও বলেছি, বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে বের করে আবার সেই রাজনীতির মাঠে উনাকে অধিষ্ঠিত করতে না পারবো, দেশনায়ক তারেক রহমানকে বাংলাদেশের মানুষের কাছে ফিরিয়ে দিতে না পারবো ততদিন পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছেড়ে যাবো না। পরিস্থিতি যাই হোক, বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত। সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে, গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও দেশনায়ক তারেক রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হবে।

সরকার পতনের দাবিতে কারো কোনো দ্বিমত নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, বেগম জিয়া বন্দী হয়েছে আমরা কিছু করতে পারি নাই, এটাই তো সত্যি। আমাদের নেতাকর্মীরা জীবন দিয়েছে, আমরা বছরের পর বছর জেল খেটেছি। বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে পারি নাই এখনো পর্যন্ত। এই ব্যর্থতার দায়ভার আপনার-আমার সকলের। সুতরাং মনে রাখতে হবে, আপনার সাথে একজনের সমস্যা থাকতে পারে কিন্তু দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই এই বিষয়ে কারো কোনো দ্বিমত থাকতে পারেনা। বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফেরত চাই, এই বিষয়ে কারো কোনো দ্বিমত থাকতে পারেনা। তারেক রহমানদে দেশে ফিরিয়ে আনতে চাই, এই বিষয়ে কারো কোনো দ্বিমত থাকতে পারেনা। শেখ হাসিনার পতন চাই, এই বিষয়ে কারো কোনো দ্বিমত থাকতে পারেনা। যদি দ্বিমত না থাকে, তাহলে রাজপথে কে কি বললো সেটা বড় কথা না বরং সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

বক্তাদের উত্থাপিত বিভিন্ন সমস্যার বিষয়ে তিনি বলেন, রাজনীতি মানেই সমস্যা, যদি সমস্যা না থাকতো তাহলে রাজনীতিও হতো না। রাজনৈতিক নেতৃতের কাজ হলো সমস্যা সমাধান করা। সমস্যা সমাধান করার জন্যই দেশনায়ক তারেক রহমান আমাদের গুরুত্বপূর্ণ এই পদে আসীন করেছেন। দলের স্বাভাবিক কর্মকান্ডে যে বাধা তৈরি করবে, যাকে মনে যে, তার কারণে দল নূন্যতম ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা আছে দল তাকে কোনোদিন প্রয়োজন মনে করবে না। সেটি যদি আমি হই, আমিও না। আবারও বলবো, নারায়ণগঞ্জ মহানগর স্বেচ্ছাসেবকদল একটি শক্তিশালী সংগঠন। সংগঠনকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নেয়ার যে লড়াই সেই লড়াইয়েও বিজয়ী হবো এবং শেখ হাসিনার অপসারণের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যে লড়াই সেই লড়াইয়েও আমরা বিজয়ী হবো।

উভয় সম্মেলনেই প্রধান বক্তা হিসাবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান। মহানগর স্বেচ্ছাসেবকদলের কর্মী সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন মহানগর কমিটির সভাপতি, সাবেক ছাত্রনেতা আবুল কাউসার আশা এবং সঞ্চালনায় ছিলেন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান জিয়া। জেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জেলা কমিটির সভাপতি আনোয়ার সাদাত সায়েম ও সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান। সম্মেলনের জেলা ও মহানগরীর আওতাধীন প্রতিটি ইউনিটের সভাপতি/আহবায়ক ও সাধারণ সম্পাদক/সদস্য সচিবরা বক্তব্য রাখেন।

এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের সহ-সভাপতি সালাউদ্দিন সালু, মহানগর স্বেচ্ছাসেবকদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন রানা, সিনিয়র সহ-সভাপতি ফারুক চৌধুরী , সাংগঠনিক সম্পাদক অহিদুল ইসলাম ছক্কু প্রমুখ।