সন্ত্রাসীদের কাছে টানছেন কায়সার, খোকার মূলশক্তি জনগন

80

নারায়ণগঞ্জ সমাচার: 

যতই দিন ঘনিয়ে আসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের, ততই নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনে নৌকার প্রার্থীর কায়সার হাসনাতের পক্ষে তৎপর হচ্ছে দাগি সন্ত্রাসী ও চিহ্নিত অপরাধীরা। এতে করে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে সোনারগাঁয়ের সাধারণ ভোটারদের মাঝে। চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা ইতিমধ্যেই কায়সার হাসনাতের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টির পায়তারা করছে বলে জানা গেছে। শুধু বিশৃঙ্খলাই নয়, নৌকার বাইরের অন্য প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণা না করতে এবং নৌকার বাইরের ভোটারদের কেন্দ্রে না যেতে হুমকি-ধামকি দেয়ার অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

সুত্রে জানা গেছে, দাগি সন্ত্রাসীরা খোলস ছেড়ে বের হয়ে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে ভিড়ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এসব অপরাধীদের মধ্যে অন্যতম পৌরসভা ছাত্রলীগের বহিস্কৃত সভাপতি মাহবুবুর রহমান রবিন। প্রায় ৪০ লাখ টাকার ২৮৩ টি মোবাইল ফোন ছিনতাইয়ে জড়িত থাকায় ইতিমধ্যেই তাকে গ্রেফতার করে সোনারগাঁ থানা পুলিশ। এছাড়া, মাদক-অপহরণ, ছিনতাই-চাঁদাবাজি, ভুমিদস্যুতা, হামলা ও ভাংচুরসহ অন্তত ১৫টি মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সংগঠন বিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত থাকায় ছাত্রলীগ থেকেও তাকে ২ বার বহিস্কার করা হয়েছে। চিহ্নিত সন্ত্রাসী এই রবিনকে দেখা গেছে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে প্রচার-প্রচারণা করতে। শুধু প্রচারণাই নয়, নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘন করে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে নিজের ছবিসহ ফেস্টুন বানিয়ে তা পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে সাটিয়েছেন বলেও জানা গেছে। বহিস্কৃত হলেও সেখানে আবার ছাত্রলীগের পদ ব্যবহার করেছেন বহু অপকর্মের হোতা রবিন।

সংঘাত-সহিংসতার আশঙ্কা করে সোনারগাঁবাসী বলছে, নির্বাচন সুষ্ঠ, অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে-নির্বাচন কমিশন থেকে এমন কথা বারবার বলা হলেও নৌকার প্রার্থী ভিন্ন প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দাগি সন্ত্রাসীদের কাছে রাখার চেষ্টা করছেন তিনি। আবার সন্ত্রাসীরা নিজেরাও কায়সার হাসনাতের হয়ে কাজ করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ অবস্থায় সংঘাত-সহিংসতা হতে পারে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের। এরই মধ্যে সনমান্দি ইউনিয়নের হরিহরদী গ্রামসহ একাধিক জায়গায় লাঙ্গলের পক্ষে প্রচারণার সময় বাধা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে নৌকার সমর্থকদের বিরুদ্ধে। এসব ঘটনায় নিরব ভুমিকা পালন করে, কর্মী-সমর্থকদের আশ্রয় প্রশ্রয় দেয়ার অভিযোগ উঠেছে কায়সার হাসনাতের বিরুদ্ধেও।

সাধারণ ভোটারদের মতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ মতো ও নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন বাস্তবায়ন করতে হলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে রবিনের মতো চিহ্নিত অপরাধী ও দাগি সন্ত্রাসীদেরকে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। তা নাহলে এইসব অপরাধীদের নিয়ে যে পেশীশক্তির ব্যবহার নৌকার প্রার্থী করছে, তাতে করে সোনারগাঁয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিতে পারে বলে অভিমত তাদের। এখনই সন্ত্রাসীদের লাগাম টানা না গেলে নির্বাচনে এর ভয়াবহ নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।

এরই মধ্যে, জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী, সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা অভিযোগ করে বলেছেন, নির্বাচনকে ঘিরে সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বেড়েছে, সোনারঁগায়ে যাদের ভোট নেই, তারাই সাধারণ জনগনকে ভোটকেন্দ্রে যেতে হুমকি দিচ্ছে। তবে, পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, চিহ্নিত ও দাগি সন্ত্রাসীরা যাতে নির্বাচনকে উপলক্ষ্য করে খোলস ছেড়ে বের হয়ে আসতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে প্রশাসন। শীঘ্রই চিহ্নিত অপরাধী ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হবে বলেও জানা গেছ। উল্লেখ, নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফশিল অনুযায়ী ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

অপরদিকে, প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে লাঙ্গল প্রতিকে ভোট চেয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন সংসদ সদস্য জননেতা লিয়াকত হোসেন খোকা ও তার স্ত্রী সোনারগাঁ উপজেলা মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান ডালিয়া লিয়াকত। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) দিনভর সোনারগাঁ উপজেলার বারদী ইউনিয়নের চেঙ্গাকান্দী, মসলন্দপুর, মান্দাপাড়াসহ কয়েকটি গ্রামে গণসংযোগ করেন খোকা। আর বৈদ্যোর বাজার ইউনিয়নের ভাটিবন্দর, বিরাশেরগাঁওসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে লাঙ্গল গণসংযোগ করেন তার স্ত্রী।

গণসংযোগকালে নির্বাচনী পদযাত্রায় লিয়াকত হোসেন খোকা বলেন, আমি আবারও জমি বিক্রি করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি, সেই টাকা দিয়ে পোস্টার ছাপিয়েছি। কোন নেতা কর্মীদের বলিনি আমার জন্য পোস্টার ছাপিয়ে দিতে। সোনারগাঁয়ের মানুষের কল্যাণে কাজ করে গিয়েছি, সারা জীবন আপনাদের কল্যাণে কাজ করে যেতে চাই। আমি আপনাদের নিকট ভোট চাইতে আসিনি আপনাদের দোয়ার জন্য এসেছি। সোনারগাঁয়ের জনগণের সমর্থন নিয়ে আমি নির্বাচনে এসেছি, জনগণ আমার মূলশক্তি। কোন জাল ভোট হবে না। নির্বাচন কমিশন বলেছে ফ্রি এন্ড ফেয়ার ইলেকশন হবে। সুষ্ঠ ভোট হলে ৯০ ভাগ ভোট পাবো ইনশাআল্লাহ। আপনারা আমার উন্নয়ন দেখে সবাই ভোট দেবেন। আগামীতে এমপি নির্বাচিত হলে ইনশাআল্লাহ সকল অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করবো।