
নারায়ণগঞ্জ সমাচার:
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেছেন, আমি কারো নাম বলতে চাই না, কিন্তু নারায়ণগঞ্জে রাজনীতিতে অনেকেই আমার জুনিয়র। অনেকেই ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসে নি, আমি ছাত্র রাজনীতিতে থেকে উঠে এসেছি। যারা ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে এসেছে, তারা যা পারে, অন্য রাজনীতিবীদরা তা পারে না। পারেনা বলেই মুকুল ও আশার নেতৃত্বে হত্যার উদ্দেশ্যে আমার উপর হামলা করা হয়েছে।
শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) গণমাধ্যমের সাথে এ কথা জানান তিনি।
এসময় তিনি বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জে যারা নিহত হয়েছে, তারা শামীম ওসমানসহ ওসমান পরিবার ও তাদের অনুসারী সন্ত্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এজন্য মুকুল ও আশাকে ওসমান পরিবার বলেছে, বিগত আওয়ামীলীগ আমলে তোমাদের সেইফ করলাম, আর এখন আমাদের নামে মামলা হচ্ছে, সেই সব মামলার বাদি আবার তোমাদের বন্দরেরই। এর পরেই নারায়ণগঞ্জের সর্বপ্রথম দায়ের করা স্বজন হত্যা মামলার বাদীকে ৫ বার তুলে আনার চেষ্টা করেছে ওসমান পরিবারের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে আজ যারা বিএনপি বনে যেতে চান তারা। এছাড়াও, অন্য হত্যাকান্ডে যে মামলাগুলো দায়ের হয়েছে সেই মামলার বাদীদেরও মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে আসছিলো একটি পক্ষ। আমি তাদের পাশে থেকে, তাদের নিরাপত্তা দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছি। এসব মামলায় শামীম ওসমান, সেলিম ওসমানসহ তাদের দোসরদের আইনের সম্মুখীন হতে হবে, তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিচার হবে।
টিপু বলেন, আইনের সম্মুখীন হতে হবে বলেই শামীম ওসমান, মুকুল ও আশাকে বুঝিয়েছে টিপুর জন্য এসব মামলা হচ্ছে। ও আমাদেরও শত্রু, তোমাদেরও শত্রু। ও থাকলে তো তোমাদের রাজনীতি হবে না। এসকল কারণে পুরো ওসমান পরিবার এবং তাদের দোসর হিসেবে পরিচিতি আতাউর রহমান মুকুল ও আবুল কাউসার আশা আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়। শামীম ওসমান আমাকে থামিয়ে দিতে কোটি টাকার মিশনে নেমেছে। এরই অংশ হিসেবে ক্ষিপ্ত হয়ে আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টি এবং আজমেরী ওসমান, অয়ন ওসমান, খান মাসুদ ও দুলাল প্রধানের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে আমার উপর হামলা চালায় মুকুল ও আশা।
তিনি আরও বলেন, এড. আবুল কালাম যখন মহানগর বিএনপির সভাপতি এবং এটিএম কামাল সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তখন আমি ছিলাম সাংগঠনিক সম্পাদক। তখন ৫ তলা থেকে কখনো ৪ তলায় তাকে (এড. আবুল কালাম) নামাতে পারিনি। তখন তার ছেলে আবুল কাউসার আশা ছিলো মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি। তখন তাকে বলতাম, তোমার বাবা না হয় অসুস্থ, তুমি আমাদের সাথে মিটিং-মিছিলে থাকো। সে তখন আসতো না। আর এখন তারা পদ-পদবীর জন্য পাগল হয়ে গেছে। তাছাড়া, দল তো এখনো ক্ষমতায় আসে নাই, নির্বাচনের এখনোও অনেক সময় বাকী। নির্বাচন আসলে দল যাকে মনোনয়ন দিবে তার পক্ষে সকলে কাজ করবে। বিগত ১৭ বছর যারা মাঠের রাজনীতিতে ছিলো না, তারা এখন উড়ে এসে জুড়ে বসতে চাইলে নেতাকর্মীরা তা কখনোই মেনে নিবে না। যারা আন্দোলনের সময় অসুস্থ হয়ে যায়, মাঠে থাকে না, তারাই নির্বাচনের সময় আসলে জনপ্রিয় হয়ে যায় বলে দাবি করে। এতো জনপ্রিয় হলে জিয়া পরিবার ছাড়া নির্বাচন করে দেখিয়ে দেন, আপনার কেমন জনপ্রিয়তা আছে।
মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব বলেন, আমার উপর হামলার তিন দিন আগে বন্দরের বিভিন্ন খেয়াঘাট, ফেরীঘাট, আকিজ সিমেন্ট ফ্যাক্টরীসহ নানান কিছু দখল করে মুকুল ও আশা। এ খবর জানতে পেয়ে নেতাকর্মীরা দখল-চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে। যেখানে এড. সাখাওয়াত প্রধান অতিথি ও আমাকে প্রধান বক্তা হিসেবে যোগদানের কথা ছিলো। সেদিন দুপুরে এড. সাখাওয়াতকে কল দিলে তিনি বলেন, আমার মায়ের শরীর ভালো না, তুমি যাও, আমি যাবো না। তখন আমি রওনা দিলে, বন্দরের নবীগঞ্জে ওদের (মুকুল-আশা) বাড়ির সামনে ও কামাল উদ্দিনের মোড়ে গেলে আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের নিয়ে দুইশ থেকে আড়াইশ মানুষ ধারালো অস্ত্র নিয়ে আমার উপর হামলা চালায়। এসময় আশা আমার কাধে কোপ দিয়ে ঘাড় থেকে আমার মাথা আলাদা করে আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিলো। কিন্তু অটোরিকশার গ্লাসের কারণে বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে আমি বেচে যাই, আমার ঘাড়ে সেই কোপ লেগে বেশ কয়েকটি সেলাই পড়েছে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নিজ হাতে আমাকে সেদিন বাচিঁয়ে রেখেছেন।
তিনি বলেন, রাজনৈতিকভাবে তারা দেউলিয়া হয়ে গেছে, যারা এখন জ্ঞানশুন্য হয়ে গেছে। তারা জানে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির রাজনীতিতে টিপু ফ্যাক্টর, কেননা হুমকি-ধামকিতে আমাকে দমিয়ে রাখা যাবে না। তাই হত্যার উদ্দেশ্যে মুকুল-আশার নেতৃত্বে আমার উপর হামলা করা হয়েছে। তারা এখন আওয়ামীলীগ-জাতীয় পার্টির ক্যাডারে পরিণত হয়েছে। আমি আইনানুগ ভাবে এই হামলার বিচার চাই। আমি আমার দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে বিচার চাই। তারেক রহমানের নির্দেশে মহানগর বিএনপিসহ প্রতিটি ইউনিটের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছি, কোনো ধরনের লুটপাট, চাঁদাবাজি করা যাবে না। দল এখনো ক্ষমতায় আসে নি, আগামীতে ভোটারদের কাছে গিয়ে ভোট চাইতে হবে, তাই জনগনের কল্যাণে রাজনীতি করতে হবে। অপকর্মে জড়িত হয়ে আমরা আওয়ামীলীগের মতো নি:শেষ হতে চাই না।
তিনি আরও বলেন, আমাদের নেতৃত্বে কমিটির অনুমোদন দেয়ার পর বিভিন্ন সময়ে প্রোপাগান্ডা চালানো হয়েছে যে, ৭ দিনের মধ্যে, ১৫ দিনের মধ্যে কমিটি ভেঙ্গে দেয়া হবে, তিন মাসের মধ্যে কমিটি ভেঙ্গে দেয়া হবে। কিন্তু আজকে প্রায় ২ বছর আমাদের কমিটি বহাল। আমরা দায়িত্ব পাওয়ার পর মহানগর বিএনপিকে সুসংগঠিত করেছি, এটা আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব দেখেছেন। আমরা মহানগর বিএনপির দায়িত্ব পাওয়ার পর ১৭টি ওয়ার্ড, ৭টি ইউনিয়ন, ২টি থানা, ১টা উপজেলায় সম্মেলন করে কমিটি করেছি। আমরা প্রতিটি এলাকায় গিয়ে কমিটি গুলো করেছি। এর আগে, দায়িত্ব পাওয়া মরহুম জালাল হাজী, এড. আবুল কালাম, এড. তৈমুর আলম খন্দকার কখনোই স্পটে গিয়ে কোনো সম্মেলন করেন নাই। এড. আবুল কালাম তার বাড়িতে ডেকে কমিটি দিতো।
তিনি বলেন, এখনো কিছু মানুষ, ওসমান পরিবারের কতিপয় দালালদের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে আবারও প্রতিষ্ঠিত করার পায়তারা করছে। নারায়ণগঞ্জবাসীর কাছে আহবান, তারা যেন নারায়ণগঞ্জে না আসতে পারে। কেননা তারা আসলে, নারায়ণগঞ্জে আবারও অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে।
উল্লেখ, গত ০৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকেলে বন্দে দখল-চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে এক সমাবেশে যাওয়ার সময় উপজেলার নবীগঞ্জে কামাল উদ্দিনের মোড়ে এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপুকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। মহানগর বিএনপির পদত্যাগী যুগ্ম আহবায়ক ও নাসিক ২৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল কাউছার আশা, বহিস্কৃত আতাউর রহমান মুকুল, সৌরভ ও রাজীবের নেতৃত্বে এ হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ করে মহানগর বিএনপির নেতৃবৃন্দ। এ ঘটনায় মুকুল ও আশাসহ ২০৩ জনকে আসামী করে বন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন এড. টিপু।