
নারায়ণগঞ্জ সমাচার:
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন বিএনপির ২ নেতা। তারা হলেন, মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি এড. সাখাওয়াত হোসেন খান এবং সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল। এটিএম কামাল প্রার্থী হওয়ার পর থেকেই শহরময় বিশেষ করে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে চলছে নানা গুঞ্জন।
এসব গুঞ্জনের একটি হচ্ছে এড. সাখাওয়াতের উপর হয়তোবা মহানগর বিএনপি ও সিনিয়র নেতৃবৃন্দের কোনো আস্থা নেই, তাই দলকে সুসংগঠিত করতে প্রার্থী হচ্ছেন কামাল। অপরটি হচ্ছে, দলকে সুসংগঠিত নয় বরং আইভীকে হারাতে একটি বিশেষ পরিবারের কাছ থেকে টাকা নেয়ার যে অভিযোগ ছিলো সাখাওয়াতের উপর, এবার সেই টাকার ভাগ নিতে প্রার্থী হয়েছেন এটিএম কামাল। যদিও সেই অভিযোগের কোনো সত্যতা এখনো পাওয়া যায় নি। তবে, সেই অভিযোগকারীকে এবার এটিএম কামালের সাথে জোরালোভাবে দেখা গেছে। আর এ কারণেই দ্বিতীয় গুঞ্জনটি বেশ জোড়ালোভাবে শোনা যাচ্ছে।
এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক সিনিয়র নেতা বলেন, গত সিটি নির্বাচনের সময়ও এড. সাখাওয়াতের সাথে খুব লম্ফজম্ফ করেছিলো মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু। তবে নির্বাচনে হারার ৭ মাস পর সেই টিপুই সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে আইভীকে হারানোর লক্ষ্যে একটি পরিবারের কাছ ২ কোটি টাকা নেয়ার অভিযোগ করে। এবার সেই টিপুকে দেখা যাচ্ছে আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামালের সাথে। হয়তো নির্বাচন শেষে এটিএম কামালের বিরুদ্ধেও সে ধরনের অভিযোগ আসতে পারে টিপুর পক্ষ থেকে।
এটিএম কামাল সম্পর্কে বিএনপি নেতাকর্মীদের কাছ থেকে জানা যায়, এটিএম কামালের আয়ের তেমন কোনো উৎসই নেই। ব্যবসা বা চাকরী কিছুই করেন না। রাজনীতি থেকেই তার সংসার চলে বলে জানায় নেতাকর্মীদের অনেকে। যখনই রাজনীতি থেকে আয়-রোজগারে ভাটা পড়ে, তখনই তিনি দেশ ছেড়ে পাড়ি জমান বিদেশের মাটিতে। আবার যখন আয়ের পথ সুগম হয় ঠিক তখনই তিনি দেশে ফিরে আসেন। এর অন্যতম উদাহারণ হিসাবে নেতাকর্মীদের অভিমত, যেমন তিনি এবার এসেছেন নির্বাচনের জন্য। রাজনীতিই তার কাছে প্রধান আয়ের উৎস। নির্বাচন করতে যে অর্থের প্রয়োজন তা সে কোথা থেকে পাবে এমন প্রশ্নও রাখেন অনেকে? সে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছে টাকা খরচ করার জন্য নয় বরং টাকা আয় করার জন্য এমনটাই দাবি তৃণমূলের নেতাকর্মীদের অনেকের। বিগত দিনে তার বিরুদ্ধে কমিটি বাণিজ্য, পদ-বাণিজ্যসহ অর্থের বিনিময়ে নির্বাচনে প্রার্থী বসিয়ে দেয়ার মতো গুরুতর অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সংগত কারণেই প্রশ্ন উঠেছে, দলকে সুসংগঠিত করতে নাকি টাকার ভাগ নিতে প্রার্থী হয়েছে এটিএম কামাল ?
এসব বিষয়ে কথা বলতে এটিএম কামালের মুঠোফোনে (০১৭১২০৯৯৭৫২) রাত ১০টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত বেশ কয়েকবার কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেন নি।
একই বিষয়ে কথা বলতে যোগাযোগ করা হলে মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেন, গতবারও এটিএম কামাল ভাই দল থেকে নমিনেশন চাইছে। কিন্তু যে কোনো কারণে হোক দল সাখাওয়াতকে নমিনেশন দিয়েছে। এবারও এটিএম কামাল ভাই নমিনেশন চাইতে পারে। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই নির্বাচনের জন্য পরিকল্পনা করেছেন বা আকাঙ্খা করেছেন তাই স্বতন্ত্র থেকে প্রার্থী হয়েছেন। সাখাওয়াত দলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী, সে গত নির্বাচনে বাণিজ্য করার নির্বাচন করছে, এবারও সে সেই সুযোগটা নেয়ার চেষ্টা করছে। আর এটিএম কামাল ভাই নির্বাচন করার জন্য চেষ্টা করছে।
আপনার ভাষ্যমতে এড. সাখাওয়াত যে বাণিজ্য করেছিলো, এটিএম কামালও সেই বাণিজ্য করবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে টিপু বলেন, এটিএম কামাল সাহেবকেও আমরা চিনি, সাখাওয়াত সাহেবকেও আমরা চিনি। কামাল ভাই ইতিমধ্যে উপজেলায় একবার চেয়ারম্যান নির্বাচন করেছিলো, আমরা কখনো কামাল ভাইয়ের বিষয়ে বাণিজ্যের কথা শুনি নাই। কামাল সাহেব বাণিজ্য করার জন্য নির্বাচন করবে না, সে বিজয় অর্জন করার জন্য এবং দলীয় নেতাকর্মীদের রাজনৈতিকভাবে সুসংগঠিত করার জন্যই নির্বাচন করবে।
গত নির্বাচন আর এবারের নির্বাচনে প্রেক্ষাপট অনেকটা একই, তাই আপনার অভিযোগ মতে, এবারও আইভীকে পরাজীত করতে কোনো পরিবার থেকে টাকা দেয়া হতে পারে বা আর্থিক সহযোগীতা করা হতে পারে এবং সেই টাকার ভাগ নিতেই কি কামাল সাহেব প্রার্থী হয়েছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে টিপু বলেন, কামাল ভাই দীর্ঘদিন ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছে। কে বা কোন ফ্যামিলি টাকা দিবে, সেই টাকা দিয়ে কামাল ভাই নির্বাচনে যুদ্ধ করবে সেটা মনে হয় না। এটা একমাত্র সাখাওয়াতের জন্যই সম্ভব। কারণ সে নির্বাচনের নামে বাণিজ্য করে। আর কামাল ভাই নির্বাচন করার জন্য, জয়ী হওয়ার জন্য, দলের ভাবমূর্তি রক্ষা করার জন্য চেষ্টা করে।
কামাল ভাই যদি পরাজীত হয় তাহলে সেক্ষেত্রে তার বেলায়ও কি টাকা নেয়ার অভিযোগ করবেন কিনা এমন প্রশ্নে টিপু বলেন, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বাইডেনেরও এতো টাকা হয় নাই বা পৃথিবীতে এমন কোনো শক্তি নাই যে আমার নৈতিক চরিত্রটা কিনতে পারবে। আমার দলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, শেখ হাসিনাও পারতো না আমার নৈতিক চরিত্র কিনতে। কামাল ভাই যদি এধরনের কোনো কাজ করে তার বিরুদ্ধেও অভিযোগ হবে। তবে আমি যতটুকু জানি কামাল ভাই নির্বাচন করার জন্য নির্বাচন করছে।